সোমবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩২   ০৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

নরসিংদীতে মাটির ফাটল লিকুইফ্যাকশন, আতঙ্কের দরকার নেই

তরুন কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ১০:২৮ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার

নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্পের পর মাটিতে যে ফাটল দেখা গেছে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। সংস্থাটি বলছে, এসব ফাটল ভূগর্ভের কোনো বিপজ্জনক ফল্টলাইন সক্রিয় হওয়ার কারণে নয়; বরং ভূমিকম্পের সময় জলাশয়ের চাপ ও ভূমি তরলীকরণ (লিকুইফ্যাকশন) থেকে এসব অগভীর ফাটল তৈরি হয়েছে।

 

কীভাবে তৈরি হলো ফাটল?

 

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জিএসবির বিশেষজ্ঞ দল দেখেছেন, যেসব স্থানে ফাটল পাওয়া গেছে, তার প্রতিটির পাশেই রয়েছে পুকুর, খাল বা জলাশয়। ভূমিকম্পের কম্পনে এ জলাশয়ের পানি পাশের ভরাট করা আলগা বালুর স্তরে তীব্র চাপ তৈরি করে। এতে মাটি সাময়িকভাবে তরলের মতো আচরণ করে এবং ওপরের স্তর ধসে পড়ে বা ফেটে যায়। এ ঘটনাকেই বলা হয় লিকুইফ্যাকশন।

 

পরিদর্শনে দেখা ফাটলগুলো ৪ থেকে ৩০ মিটারের মধ্যে দীর্ঘ হলেও সবই অগভীর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব জায়গায় কিছু মাটি ফেলে সহজেই ফাটল বন্ধ করা সম্ভব।

 

কোনো বিপদের ইঙ্গিত নয়

 

জিএসবির উপপরিচালক মো. মাহমুদ হোসেন খান জানান, নরসিংদীতে যে ফাটল দেখা গেছে, তার কোনোটাই ভূমিকম্পের ফল্টলাইন পর্যন্ত গিয়েছে এমন প্রমাণ নেই। সুতরাং এটি ভয় পাওয়ার মতো কোনো ভূতাত্ত্বিক সতর্কসংকেত নয়।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস যে কেন্দ্রস্থল উল্লেখ করেছে, সেখানে উল্লেখযোগ্য ফাটলও পাওয়া যায়নি। বরং ফাটল পাওয়া যায় কেবল জলাশয়ঘেঁষা, নিচু এবং বালু দিয়ে ভরাট জায়গাগুলোতে—যা লিকুইফ্যাকশনের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

 

আফটারশক কি না—জানতে লাগবে সময়

 

জিএসবির বিশেষজ্ঞ আনিসুর রহমান জানান, শনিবারের ভূমিকম্পটি শুক্রবারের কম্পনের আফটারশক কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এটি জানতে হলে ২৯০ দিন পর্যবেক্ষণ চালাতে হবে। এর মধ্যে যদি কেন্দ্রস্থলের ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছোট মাত্রার কম্পন অব্যাহত থাকে, তা আফটারশক হিসেবে গণ্য হবে।

আর আগামী ১০০০ দিনের মধ্যে যদি একই অঞ্চলে বড় (সাড়ে ৮ মাত্রার) কোনো ভূমিকম্প ঘটে, তবে বর্তমান ভূমিকম্পকে ভবিষ্যৎ বড় ভূমিকম্পের ফোর শক (পূর্বাঘাত) হিসেবে ধরা হবে।

 

ছোট ভূমিকম্প ভালো লক্ষণ

 

জিএসবির আরেক কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, শুক্রবারের মাঝারি মাত্রার কম্পনের পরদিন ছোট ছোট কম্পন হওয়া ইতিবাচক। এতে ভূগর্ভের চাপ ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেছে, বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি কমেছে।

 

আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, নরসিংদীর সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষতির ঝুঁকি নেই। ছোট কম্পনগুলো ৫–৭ দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই থেমে যায়। ঢাকাতেও বড় ভূমিকম্প খুব শিগগিরি হবে—এমন প্রমাণ নেই।

তিনি বলেন, “আতঙ্ক নয়, বরং প্রস্তুতি—এটাই মূল বিষয়।”