নির্বাচনে আট দলের সমঝোতা চূড়ান্ত হতে পারে ডিসেম্বরেই
তরুন কণ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ১০:২৩ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন সমঝোতা নিয়ে এখনো পরিষ্কার অবস্থান জানায়নি জামায়াতে ইসলামী। বরং দলটি ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা সাতটি দলকে নিয়ে অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপ বজায় রেখে একটি কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। ‘এক আসনে এক প্রার্থী’ নীতির ভিত্তিতে ৩০০ আসনেই মাঠজরিপ চলছে, যার ফলাফল অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।
সমঝোতা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই চূড়ান্ত হতে পারে
জামায়াতসহ সমমনা আট দল জানায়, তারা আনুষ্ঠানিক জোট করছে না, তবে “নির্বাচনী সমঝোতা” করবে। এই সমঝোতা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চূড়ান্ত হতে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও এই আলোচনার প্রক্রিয়া চলবে বলে দলগুলোর নেতারা নিশ্চিত করেছেন।
কিছু আসনে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী বা মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের সঙ্গেও অঘোষিত সমঝোতা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
আরও দল যুক্ত হতে পারে, চমকের ইঙ্গিত
জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সমমনা আট দলের বাইরে আরও কয়েকটি দল এতে যুক্ত হতে পারে। আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে “চমক” থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান চট্টগ্রামে বলেন,
“প্রচলিত অর্থে জোট নয়, তবে অনেকগুলো শক্তির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হবে।”
এনসিপি–এবি পার্টির সঙ্গেও যোগাযোগ
নির্বাচনী সমঝোতায় জামায়াত এনসিপি, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদকেও অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। যদিও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তাদের দল কোনো আসন বা ক্ষমতার ভাগাভাগির রাজনীতিতে যাবে না।
অন্যদিকে এবি পার্টি, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ ও আপ বাংলাদেশের মধ্যে আলাপ–আলোচনা চলছে বলে রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। এই দলগুলো একসঙ্গে জোট করলে জামায়াতের ভোটে ভাগ বসাতে পারে—তাই তাদের যুক্ত করার চেষ্টা উদ্যমী।
৩০০ আসনে মাঠজরিপ
ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী জানিয়েছেন,
“৩০০ আসনেই জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জরিপ চলছে। নভেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।”
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আসন সমঝোতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হতে পারে।
বিএনপি বনাম জামায়াত: ধর্মভিত্তিক ভোটে অঘোষিত প্রতিযোগিতা
জামায়াত ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে সমঝোতার পথে হাঁটলেও বিএনপিও একই সময় ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে পাশে টানার চেষ্টা করছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্য জোট (একাংশ) ইতোমধ্যেই বিএনপির সঙ্গে আছে।
অন্যদিকে মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস জামায়াত–আট দলের কর্মসূচিতে আছে। বিএনপি এই দলকেও নিজেদের দিকে টানতে চাওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে অঘোষিত দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে।
হেফাজতের একাংশের সঙ্গেও বিএনপির বোঝাপড়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
প্রার্থী বিবেচনায় পেশাজীবী ও মনোনয়নবঞ্চিতরাও
জামায়াত বিভিন্ন আসনে চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য পেশার পরিচিত ব্যক্তিদের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিতে পারে। এমনকি বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও তাদের সমঝোতার আওতায় আসতে পারেন—যদিও তা এখনো স্পষ্ট নয়।
প্রশাসনিক রদবদলে চাপ
জামায়াত প্রশাসনিক রদবদলের বিষয়েও নজর রাখছে। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে তারা সরকার ও ইসির ওপর চাপ বজায় রাখতে চায়।
ইসির সঙ্গে সংলাপে তারা প্রস্তাব দিয়েছে—
তফসিলের পর মাঠ প্রশাসনের বদলি লটারির মাধ্যমে করা হোক।
অনেকে মনে করেন, এর মাধ্যমে জামায়াত প্রশাসনে নিজেদের ঘনিষ্ঠদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে।
বিভাগীয় সমাবেশে নতুন চাপ তৈরির কৌশল
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পর ধারণা করা হচ্ছিল, আট দল অভিন্ন কর্মসূচি থেকে সরে আসবে। কিন্তু বরং তারা নতুন করে বিভাগীয় সমাবেশ ঘোষণা করেছে।
৩০ নভেম্বর রাজশাহী দিয়ে শুরু হয়ে ৬ ডিসেম্বর সিলেটে শেষ হবে এই কর্মসূচি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে—
জামায়াত মাঠের কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে চাপে রেখে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা আদায় এবং সংস্কার ইস্যুকে সামনে রাখতে চাইছে। একইসঙ্গে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী হিসেবে তুলে ধরার কৌশলও চালু রেখেছে।
