রোববার   ২৩ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩২   ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

দুদকের নজর: কক্সবাজার রেলে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

তরুন কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ১০:৩০ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৫ রোববার

দোহাজারী–কক্সবাজার রেলওয়ে মেগা প্রকল্পের সংকেত ও টেলিকম কাজে ৫০ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে থাকলেও শেষের দিকে এসে বেরিয়ে আসছে নানা অনিয়ম, নিম্নমানের সরঞ্জাম বসানো ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশের তথ্য।

 

দুদকের অনুসন্ধান শুরু

 

দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান টিম প্রকল্পে মালপত্র কেনাকাটা, সংকেত সংযোগ, টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি ও ঠিকাদারদের সঙ্গে সম্পর্কিত নথি সংগ্রহ করেছে। টিম লিডার সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক জানিয়েছেন—যে কোনো সময় মাঠপর্যায়ে তদন্ত শুরু হবে।

 

এর আগেও এই প্রকল্পে ঠিকাদারদের মাধ্যমে নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করে ৫০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে দুদকের নথিতে উল্লেখ ছিল।

 

বিতর্কিত কর্মকর্তার বদলি বাতিল

 

প্রকল্পের সংকেত ও টেলিকম বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিমকে ৩ সেপ্টেম্বর বদলির আদেশ দেওয়া হলেও মাত্র ১৩ দিনের মাথায় সেই আদেশ রহস্যজনকভাবে বাতিল করা হয়। রেলওয়ে মহলে আলোচনায় রয়েছে—প্রভাব খাটিয়েই তিনি বদলিকে ঠেকিয়েছেন।

 

দুদক তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টের তথ্য, স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ ব্যক্তিগত নথিপত্র চেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে—তিনি একই সময়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে প্রকল্পের ক্রয় ও মেরামত কাজে অনিয়ম করেছেন।

 

শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ

 

রেল অঙ্গনের সূত্র বলছে—সংকেত ও টেলিকম বিভাগের অনিয়মের সঙ্গে রেলওয়ের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি জানতে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

নিম্নমানের মেশিন বসানো—ঝুঁকিতে ট্রেন চলাচল

 

প্রকল্পের মেকানিক্যাল বিভাগ জানিয়েছে, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৯টি স্টেশনে মোট ১৮টি স্থানীয়ভাবে তৈরি নিম্নমানের মেকানিক্যাল পয়েন্ট মেশিন বসানো হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব যন্ত্রাংশে মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

 

চুক্তিতে ব্লক কমিউনিকেশনের জন্য এক্সেল কাউন্টার বসানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এতে রেলচাকা গণনায় ত্রুটি দেখা দিতে পারে—যেকোনো সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হবে।

 

এছাড়া নিম্নমানের বন্ডিং ওয়্যার ব্যবহারের কারণে ট্র্যাক সার্কিট বিকল হয়ে যাচ্ছে, ফলে সিগন্যাল সঠিক সময়ে কাজ করছে না এবং ট্রেন চলাচলে বিলম্ব হচ্ছে।

 

অভ্যন্তরীণ তদন্তেও ৪১টি অসংগতি

 

দোহাজারী–কক্সবাজার রেল প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও সংকেত ও টেলিকম শাখায় ৪১টি বড় অসংগতি শনাক্ত করা হয়েছে। অতিরিক্ত প্রধান সিগন্যাল ও টেলিকম প্রকৌশলী তারেক মো. শামস তুষারের প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হলেও সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

 

অভিযুক্তের দাবি

 

মোহাম্মদ সেলিম গণমাধ্যমকে বলেন, “কিছু অংশে অভিযোগ আছে, তদন্ত চলছে। আমি কোনো অনিয়ম করিনি।” তবে দুদক বলছে—প্রাথমিক তথ্যেই দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।