রোববার   ২৩ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩২   ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

৩১ ঘণ্টায় ৪ ভূমিকম্প: বিশেষজ্ঞরা বলছেন—ঢাকা মহা ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ১০:১৭ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৫ রোববার

ঢাকা ও আশপাশে টানা ভূমিকম্পে রাজধানীর বড় বিপদের ইঙ্গিত আরও স্পষ্ট হচ্ছে। গত ৩১ ঘণ্টায় চারটি ভূমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন—ঢাকার নিকটবর্তী ফল্ট লাইনটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোনো সময় হতে পারে।

 

শুক্রবার সকালে নরসিংদীর মাধবদীতে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের তীব্রতা এ আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে—যা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে শক্তিশালী অনুভূত হওয়া কম্পন। এতে শিশুসহ ১০ জন নিহত এবং ছয় শ’র বেশি মানুষ আহত হন।

 

বড় ভূমিকম্পের ‘সতর্কসংকেত’

 

ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, ভূ-অভ্যন্তরে যে ফাটলটি এতদিন ধরে আটকে ছিল, তা নড়তে শুরু করেছে। শক্তি বের হওয়ার এই প্রক্রিয়াই আফটারশক তৈরি করছে। তাঁর মতে, এই প্রাথমিক নড়াচড়া বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস, আর সেটি ঘটতে খুব দূরে নয়।

 

শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে আবার ৩.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। সাড়ে সাত ঘণ্টা পর ৪.৩ মাত্রার আরেকটি কম্পন অনুভূত হয়, দুটির উৎসই নরসিংদী। সন্ধ্যায় বাড্ডা অঞ্চলে আরও একটি ৩.৭ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়।

 

ঢাকার কাছে ভূকম্পনের সংখ্যা বাড়ছে

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ভেতরে ৩৯টি ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে ১১টির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে মাত্র ৮৬ কিলোমিটারের মধ্যে, যা মোট ঘটনার ২৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর এত কাছে একের পর এক ভূকম্পন বড় ঝুঁকির দিকেই ইঙ্গিত করে।

 

লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী, কুমিল্লা, পাবনা, টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, ঢাকা—এসব অঞ্চলেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিক ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়েছে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম জানান, নরসিংদীতে একটি সাব-ফল্ট রয়েছে। আগে এটি ছোট আকারের মনে করা হলেও এখন বোঝা যাচ্ছে—সাব-ফল্টটি বড় এবং ঢাকার দিকে বিস্তৃত। ফলে রাজধানী বড় বিপদের মুখে।

 

রাতে বেশি ভূমিকম্প—ঝুঁকিও বেশি

 

গত পাঁচ বছরের ৩৯টি ভূমিকম্পের মধ্যে ২৩টি হয়েছে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমন্ত মানুষ, বন্ধ ঘরবাড়ি ও সীমিত চলাচলের কারণে রাতে প্রাণহানির আশঙ্কা আরও বেশি।

 

ঢাকার বিপদের চার কারণ

 

বুয়েটের পুরকৌশলের অধ্যাপক রাকিব হাসান ঢাকার ঝুঁকিকে চার ভাগে ব্যাখ্যা করেন—

  1. উৎপত্তিস্থলের ঢাকার খুব কাছে থাকা

  2. নিচু জায়গায় ভরাট মাটিতে শহর বিস্তার

  3. ভবন নির্মাণে ইমারত বিধিমালা ও কোড না মানা

  4. অতিরিক্ত জনঘনত্ব

 

তার মতে, এই চারটি বিষয় মিলেই ঢাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রস্তুতি কোথায়?

 

২০১৬ সালে রাজধানীতে ন্যাশনাল অপারেশন সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো কাজ শুরুই হয়নি। জায়গা বরাদ্দ থাকলেও নির্মাণসামগ্রী রাখার অতিরিক্ত জায়গার অভাবে প্রকল্প আটকে আছে।

 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজ চলছে, কিন্তু বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা এখনো যথেষ্ট নয়। শুধু উপকূলে ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক থাকলেও নগরে প্রশিক্ষিত কর্মীর সংখ্যা এখনও কম।

 

দুর্যোগ ফোরামের সদস্যসচিব গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, দুর্যোগের তথ্য আসতে প্রায় এক দিন লেগেছে, যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার গভীর দুর্বলতা। তাঁর মতে, স্কুল–কলেজের পাঠ্যসূচিতে ভূমিকম্প সচেতনতা যোগ করা জরুরি।