বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ঢাকা
মোঃ মোসাদ্দেক হোসাইন ইমন
প্রকাশিত : ১১:০৩ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৫ শুক্রবার
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এই কম্পন হঠাৎ পুরো দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার পাশের নরসিংদীর মাধবদী; ফলে কম্পন ছিল তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী এবং ভয়ংকর। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে দেশে উৎপত্তি হওয়া এটিই সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। এতে বিভিন্ন স্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, শিশুসহ অন্তত ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন ছোট ও মাঝারি মাত্রার কম্পন ভবিষ্যতে আরও বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভৌগোলিক কাঠামোর কারণে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহর সবচেয়ে বেশি বিপদে, কারণ শহরের অধিকাংশ ভবন নির্মাণ হয়েছে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে সরকারগুলো পর্যাপ্ত দুর্যোগ–প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে, যা সম্ভাব্য বৃহৎ বিপর্যয়ের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ দিকে এবং চলতি বছরের শুরু ও মাঝামাঝি সময়ে দেশের আশপাশে বিভিন্ন মাত্রার অর্ধশতাধিক ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। গত ১৫ বছরে ছোট-বড় প্রায় দেড় শতাধিক ভূমিকম্প হয়েছে—যা বিশেষজ্ঞদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
ভূতাত্ত্বিকরা জানান, সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য অঞ্চল, ভারতের মণিপুর–মিজোরাম এবং মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকা একই সঙ্গে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল থেকে মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামানের পাশ দিয়ে যে রেখাটি কল্পনা করা যায়, সেটিই দুই টেকটোনিক প্লেট–মিয়ানমার প্লেট ও ভারতীয় প্লেটের সংযোগস্থল। এই সংযোগস্থলের ওপরের অংশ, সুনামগঞ্জ থেকে মিজোরাম হয়ে মণিপুর পর্যন্ত অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে ‘লকড’ অবস্থায় আছে। শত বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি, ফলে জমেছে বিপুল পরিমাণ শক্তি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা–এই সঞ্চিত শক্তি যেকোনো সময় ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের মাধ্যমে মুক্তি পেতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এই সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি, বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং ভূমিকম্প–উপযোগী নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছেন। অন্যথায় একটি বড় ধাক্কা রাজধানীসহ পুরো দেশকে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
