তাহরিমা চক্রের চাপ ও ভয় দেখিয়ে কোটি টাকা আদায়
মোঃ মোসাদ্দেক হোসাইন ইমন
প্রকাশিত : ১১:৩৮ এএম, ২০ নভেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার
রাজধানীর গুলশানের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ভয়ভীতি ও ব্লকমেইলের মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। গত জুলাই–আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা মামলার নামভুক্তির ভয় দেখিয়ে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। পুরো প্রতারণার নেপথ্যে ছিলেন গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিতর্কিত মুখ তাহরিমা এবং তার সঙ্গে জড়িত একটি ভুয়া মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক চক্র।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পরিকল্পিতভাবে গুলশানের ওই ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে চক্রটি। প্রথমে তাকে ঘনিষ্ঠতায় আনার চেষ্টা করা হয়, পরে ধীরে ধীরে শুরু হয় ভয়ভীতি প্রদর্শন। তারা হুমকি দেয়–গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় গুলশান–বাড্ডা এলাকায় যে হত্যা মামলা হয়েছে, সেসব মামলায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হবে। মামলায় জড়ানোর আশঙ্কা, সম্মানহানির ভয় এবং আইনগত হয়রানির আতঙ্কে ব্যবসায়ী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
এই সুযোগে চক্রটি ‘সবকিছু মীমাংসা করে দেওয়া হবে’ বলে দাবি তোলে মোটা অংকের টাকা। পর্যায়ক্রমে নিরুপায় ব্যবসায়ী তাদের হাতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বুঝিয়ে দেন।
চক্রটির কেন্দ্রীয় হোতা হিসেবে উঠে এসেছে তাহরিমার নাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও, বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং ব্যক্তিগত পরিচিতিকে পুঁজি করে তিনি অতীতেও বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার ‘ভাইরাল পরিচিতি’ এবং নারী হওয়ার সুবিধাকে হাতিয়ার করেই ব্যবসায়ীর কাছে সহজে প্রবেশাধিকার তৈরি করেন তিনি।
তাহরিমার সঙ্গে সরাসরি সহযোগিতা করেছে কিছু নামসর্বস্ব ভুয়া মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক। তারা ক্যামেরা–বুম হাতে নিয়ে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে ব্যবসায়ীকে ভয় দেখাত, ভুয়া নথি প্রদর্শন করত এবং মামলার তথাকথিত “সোর্স” দেখিয়ে আরও চাপ সৃষ্টি করত। তাদের এসব কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিষয়টি গোপন রাখলেও শেষ পর্যন্ত চক্রের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, জুলাই আন্দোলনের আবেগকে পুঁজি করে যারা চাঁদাবাজি করছে–তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
ঘটনায় জড়িত তাহরিমা এবং তার সহযোগী ভুয়া সাংবাদিকদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার ও সচেতন মহল।
