বৃহস্পতিবার   ২০ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৬ ১৪৩২   ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

৪০% জন্ম সিজারিয়ানে মাতৃস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে

৪০% জন্ম সিজারিয়ানে মাতৃস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে

প্রকাশিত : ১১:৩৫ এএম, ২০ নভেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

রাজশাহী বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোয় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের হার ভয়াবহভাবে বাড়ছে। জরুরি পরিস্থিতিতে মা ও নবজাতকের জীবন বাঁচানোর জন্য ব্যবহৃত এ পদ্ধতি এখন অনেক ক্ষেত্রেই ‘সাধারণ নিয়মে’ পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে—সরকারি হাসপাতালে প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে ৪টি শিশুর জন্ম হচ্ছে সিজারের মাধ্যমে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সুপারিশকৃত মানদণ্ডের প্রায় তিনগুণ।

আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ন্যাচার’-এ প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগের ৪টি জেলা—রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সরকারি হাসপাতালগুলোর গড় সিজার হার ৪১ শতাংশ। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় সিজারের গ্রহণযোগ্য মাত্রা মাত্র ১০–১৫ শতাংশ।

গবেষণা কী বলছে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গবেষকদের পরিচালিত জরিপে ৩৯৩ জন প্রসূতির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে উঠে আসে—

  • নওগাঁ জেলায় সর্বোচ্চ সিজার—৪৫%

  • কিছু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সিজার বেশি

  • নিম্ন আয়ের ও কম শিক্ষিত নারীরাও অপ্রয়োজনীয় সিজারের শিকার

গবেষক দলের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আবেদা খাতুন জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোতেও এখন বেসরকারি হাসপাতালের মতোই সিজারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাঁর মতে, “যখন সরকারি হাসপাতালেও অপ্রয়োজনীয় সিজার হয়, তখন বোঝা যায় এটি চিকিৎসা-সুবিধার চেয়ে প্রতিষ্ঠানের সুবিধা কেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে।”

কেন বাড়ছে সিজার

গবেষণায় সিজার বৃদ্ধির তিনটি মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে—
১️⃣ জনবল সংকট
২️⃣ স্বল্প ঝুঁকিকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা
৩️⃣ দ্রুত রোগী ছাড়ানোর প্রবণতা

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা নিরাপত্তার নামে দ্রুত প্রসব করানোর জন্য সিজার বেছে নিচ্ছেন, যা আন্তর্জাতিক গাইডলাইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

কারা বেশি সিজার করছেন

  • ৩১ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী প্রসূতি

  • রাজশাহীতে নিম্ন আয়ের নারীদের মধ্যেও সিজারের হার বেশি

  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রসূতির মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না

অনেক প্রসূতি জানান, ডাক্তাররা শুধু বলেন—“এখনই সিজার করতে হবে, না হলে ঝুঁকি আছে।” ফলে তারা প্রশ্ন করার সুযোগও পান না।

সিজারের ঝুঁকি

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অপ্রয়োজনীয় সিজারে বাড়ে—

  • অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ

  • সংক্রমণ

  • ভবিষ্যৎ গর্ভধারণে জটিলতা

  • নবজাতকের শ্বাসকষ্ট

  • অ্যানেসথেসিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি

এ অবস্থায় সিজারের হার বাড়তে থাকলে এসডিজির মাতৃমৃত্যু হ্রাসের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে উঠবে।

গবেষকদের সুপারিশ

  • সরকারি হাসপাতালে সিজার সিদ্ধান্তে কঠোর নজরদারি

  • ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন যথাযথ অনুসরণ

  • নার্সদের উন্নত প্রশিক্ষণ

  • স্বাভাবিক প্রসববান্ধব অবকাঠামো

  • প্রসূতির সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া

  • অপ্রয়োজনীয় সিজার কমাতে নীতি ও তদারকি জোরদার

সহযোগী অধ্যাপক আবেদা খাতুন বলেন, “যথাযথ নীতি থাকলে সরকারি হাসপাতালে সিজারের হার অনেকটাই কমানো সম্ভব।”