বিদেশে থাকা সন্ত্রাসী মামুনের নির্দেশে যুবদল নেতা কিবরিয়াকে গুলি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত : ১০:৪৮ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ বুধবার
ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে বিদেশে থাকা এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ওরফে মামুনের নাম উঠে এসেছে। পুলিশ বলছে, এলাকায় আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও লেনদেনসংক্রান্ত বিরোধের জেরে মামুন ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড করান। মামুন দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মামুনের লোকজন এলাকায় তার পক্ষে চাঁদা তুলছিল। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি—মামুন কিবরিয়াকে নিজের আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কিবরিয়া রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যার নির্দেশ দেন।
৪৭ বছর বয়সী নিহত কিবরিয়া ছিলেন পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব। পাশাপাশি তিনি চিকিৎসা সরঞ্জাম বিক্রির ব্যবসা করতেন। সোমবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ‘বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি’ দোকানে ঢুকে তিন মুখোশধারী সন্ত্রাসী খুব কাছ থেকে গুলি করে তাকে হত্যা করে। পালানোর সময় সন্ত্রাসীরা ধীরে চালানোয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আরিফ হোসেনকে গুলি করে আহত করে। স্থানীয়রা জনি ভূঁইয়া (২৫) নামের একজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
পুলিশ জানায়, জনিসহ আরও কয়েকজনকে ভাড়া করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। সরাসরি হত্যায় অংশ নেওয়া দুই সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মঙ্গলবার নিহত কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে—জনি ভূঁইয়া, সোহেল ওরফে পাতা সোহেল, সোহাগ ওরফে কালু, মাসুম ওরফে ভাগিনা মাসুম এবং রোকন। এছাড়া অজ্ঞাত সাত-আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান বলেন, জনি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং বলেছেন—তাদের সবাইকে ভাড়া করা হয়েছিল। নেপথ্যের ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করা হয়েছে।
২০২১ সালে পল্লবী থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মামুন জামিনে বের হয়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় চাঁদাবাজি, খুন, মাদক, অস্ত্র ও ডাকাতিসহ ২৭টি মামলা এবং ১৫টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পল্লবীতে তিনি এখনও মাদক ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ বিদেশ থেকে পরিচালনা করেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
বিএনপির নেতারা জানান, মামুন যুবদলের কমিটিতে তার লোক বসাতে চাপ দিচ্ছিলেন। কিবরিয়া রাজি না হওয়ায় বিরোধ বাড়তে থাকে। এমনকি এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাঁদা নেওয়ার সময় কিবরিয়ার সঙ্গে মামুনের লোকজনের বাকবিতণ্ডাও হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর পল্লবীর বিভিন্ন স্থানে মামুনের পোস্টার দেখা গেছে, যেখানে তিনি ৯১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হিসেবে পরিচিত। বিএনপির একজন নেতা জানান, এসব পোস্টার সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কিবরিয়া হত্যার জেরে যুবদল নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদস্যসচিব সাজ্জাদুল মিরাজ বলেন, ‘জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর দলে নানা ধরনের লোক ঢুকেছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণেই কিবরিয়ার মতো ত্যাগী নেতাকে হারাতে হলো।’
মঙ্গলবার দুপুরে কিবরিয়ার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী সাবিহা আক্তার শোকে ভেঙে পড়েছেন। দুই মেয়েও কান্নায় ভেঙে পড়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৪ সালেও সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করেছিল। পরে তারা সাড়ে ১১ নম্বর এলাকায় বাসায় উঠে যান। এবার কেন এবং কারা কিবরিয়াকে হত্যা করল—তা এখনও পরিবারের কারও কাছে পরিষ্কার নয়।
স্বজনেরা বলেন, কিবরিয়া প্রায় প্রতিদিন ‘বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার’-এ বসতেন বন্ধু মাসুদ রানার সঙ্গে। সোমবারও সেখানে গিয়েছিলেন। বন্ধু ও স্থানীয় নেতারা বলছেন, ঘটনার পেছনে একাধিক পক্ষ থাকতে পারে—সন্ত্রাসী চক্র, মাদক ব্যবসার বিরোধ কিংবা দলীয় প্রভাব বিস্তারের লড়াই।
