বুধবার   ১৯ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৫ ১৪৩২   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

হাসিনা–কামালের সম্পদ বাজেয়াপ্ত প্রক্রিয়া নিয়ে জনমনে বাড়ছে প্রশ্ন

তরুন কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত : ১০:৪৫ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ বুধবার

ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের স্থাবর–অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ নিয়ে তীব্র কৌতূহল তৈরি হয়েছে দেশে। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির দণ্ডাদেশের পাশাপাশি তাদের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয়। এরপর থেকেই—কীভাবে এ সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে, কার কাছে যাবে, কতদিন সময় লাগবে—এসব প্রশ্নে জনমত উত্তাল।

 

এখন পর্যন্ত তাদের প্রকৃত সম্পদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ হয়নি। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা ছাড়াও দুদক জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাজার কোটি টাকার সম্পদের কিছু তথ্য দুদকের হাতে পৌঁছেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে।

 

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার রায়ে বলেছেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হলো এবং জুলাই শহীদদের উল্লেখযোগ্য ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে রায়ের কপি দিতে বলেছেন আদালত।

 

আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্টরা জানান, রায়ের কপি হাতে আসার আগে বাজেয়াপ্ত প্রক্রিয়া নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না। নির্দেশনায় যেভাবে বলা থাকবে ঠিক সেভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে সম্পদ জুলাই শহীদ পরিবার বা ক্ষতিগ্রস্তদের বন্দোবস্ত দিতে হলে প্রথমে সরকারের খাতায় সম্পদগুলো নথিভুক্ত করতে হবে। এরপর সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী বণ্টন করা যাবে।

 

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রয়েছে বিশেষ আইন। তবে তারা যেটি করতে পারবেন না, সেক্ষেত্রে সিভিল প্রসিডিউর অনুসরণ করতে হবে। বিদ্যমান আইনেই সম্পদ সংযুক্ত (অ্যাটাচমেন্ট) করার বিধান রয়েছে।

 

বিভিন্ন সূত্র বলছে, শেখ হাসিনা ও কামালের প্রকৃত সম্পদের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ এখনো যাচাই–বাছাই চলছে। তবে হলফনামা ও দুদকের অনুসন্ধান থেকে একটি প্রাথমিক চিত্র পাওয়া যায়।

 

শেখ হাসিনার হলফনামা অনুযায়ী সম্পদ

 

২০২৪ সালের নির্বাচনে জমা দেওয়া নথিতে শেখ হাসিনা নিজের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখান ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

 

  • হাতে নগদ দেখান মাত্র ২৮ হাজার টাকা

  • ব্যাংক জমা: প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ

  • সঞ্চয়পত্র: ২৫ লাখ

  • এফডিআর: ৫৫ লাখ

  • তিনটি গাড়ি—একটি উপহার (মূল্য উল্লেখ নেই), দুইটির দাম সাড়ে ৪৭ লাখ

  • স্বর্ণ: ১৩ লাখ ২৫ হাজার

  • আসবাব: ৭ লাখ ৪০ হাজার

  • কৃষিজমি: ১৫.৩ বিঘা

  • টুঙ্গিপাড়ায় তিনতলা ভবনসহ জমি: অর্জনমূল্য ৫ লাখ

 

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা প্রকৃত সম্পদের তুলনায় অনেক কম দেখিয়েছিলেন। যেখানে তিনি দেখিয়েছিলেন ৬.৫ একর জমি, অনুসন্ধানে পাওয়া যায় ২৮ একরের বেশি।

 

এছাড়া গাজীপুরের তেলিরচালা এলাকায় বঙ্গবন্ধুর নামে দেওয়া জমির উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি, শেখ রেহানা ও তাঁদের সন্তানরা মালিক হয়েছেন মোট ৯ বিঘা জমির।
ঢাকার পূর্বাচলে তার নামে একটি প্লট রয়েছে, দাম ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। তাছাড়া পূর্বাচলে শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নিয়ে দুদকের মামলা চলছে।

 

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়ি এখন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অধীনে। আর সুধা সদনের মালিকানা সজীব ওয়াজেদ ও সায়মা ওয়াজেদের নামে।

 

আসাদুজ্জামান খান কামালের সম্পদ

 

হলফনামা অনুযায়ী:

 

  • নগদ টাকা: ৮৪ লাখ

  • ব্যাংক জমা: ৮২ লাখ

  • বন্ড ও শেয়ার: ২৪ লাখ

  • সঞ্চয়পত্র/এফডিআর: ২ কোটি ১ লাখ

  • দুই গাড়ি: ১ কোটি ৬১ লাখ

  • ইলেকট্রনিকস ও আসবাবপত্র: ২ লাখ

  • ব্যবসায় মূলধন: ২ কোটি ২০ লাখ

  • স্বর্ণালংকার: ১০ ভরি

  • কৃষিজমি: ১৭১ শতাংশ (মূল্য ১ কোটি ৬ লাখ)

  • অকৃষিজমি: সাড়ে ১৮ শতাংশ

  • বাড়ি–অ্যাপার্টমেন্ট: মোট মূল্য প্রায় ৯৩ লাখ

 

কিন্তু দুদকের রিপোর্টে বলা হয়েছে—তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অন্তত ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন।