নির্ধারিত সময়ে আপিল না করলে গ্রেপ্তারের সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৭:২৯ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার
রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করলে ক্ষমতাচ্যুত দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপিলের সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। তিনি বলেন, যদি তাঁরা (দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান) ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করেন, তাহলে তাঁরা গ্রেপ্তার হলে রায় কার্যকর হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার এ কথা বলেন।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একটি মামলায় গতকাল সোমবার শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল–১। একই মামলার অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল আইনের ২১ নম্বর ধারায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিলের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, দণ্ড ও সাজা প্রদান অথবা খালাস অথবা কোনো সাজা দেওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। এই সময়সীমা (রায় দেওয়ার ৩০ দিন পর) অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোনো আপিল গ্রহণযোগ্য হবে না।
আর ২১ নম্বর ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে, আপিল করার তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে।
এক সাংবাদিক জানতে চান, শেখ হাসিনা যদি ৩০ দিনের মধ্যে না আসেন, তিন মাস পরে আসেন, সেই ক্ষেত্রে আপিলের নিয়মটা কী হবে?
জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, দেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় দুটি পদ্ধতি আছে। একটা হলো যেসব আইনে আপিলের সময়সীমা উল্লেখ নেই, সে ক্ষেত্রে আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ হয় তামাদি আইন অনুযায়ী।
তামাদি আইন অনুযায়ী, যেসব আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ হয়, সেখানে আপিলের সময় পেরিয়ে গেলেও তামাদি আইনের পাঁচ ধারা অনুসারে ডিলে কন্ডোনেশনের (বিলম্ব মার্জনার আবেদন) সুযোগ আছে; অর্থাৎ দণ্ডবিধিতে যদি কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়, তিনি নির্ধারিত সময়ে আপিল না করলেও পরে এসে আপিলের জন্য বিলম্ব মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু বিশেষ আইনগুলোতে যেখানে আপিলের সময় আইনের মধ্যে বলা আছে, সে ক্ষেত্রে এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে বিলম্ব মার্জনার কোনো সুযোগ নেই; অর্থাৎ এই ৩০ দিন পার হয়ে গেলে ক্ষমা (বিলম্ব মাজর্না) করার আবেদনেরই আর কোনো সুযোগ নেই। সরকার এটি তখন কার্যকর করবে।
পরে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যা করার এই ৩০ দিনের মধ্যেই করতে হবে শেখ হাসিনা, কামালকে? এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তা–ই হবে। ৩০ দিন পার হয়ে গেলে তাঁরা গ্রেপ্তার হলে রায় কার্যকর হবে।’
তখন আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, আপিল বিভাগের একটা অথরিটি (কর্তৃত্ব) আছে কমপ্লিট জাস্টিস (পূর্ণ) করা। আইনে পরিষ্কার করা আছে, যদি কোনো বিশেষ আইনে আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকে, ওইটা পার হয়ে গেলে আর এই বিলম্ব সময় মওকুফ করা হবে না।
সাবেক আইজিপি মামুন কি এখন জামিনের আবেদন করতে পারবেন, এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, ট্রাইব্যুনালে তাঁরা (দণ্ডপ্রাপ্তরা) আর কেউ কিছু চাইতে পারবেন না। ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক শেষ। এখন ট্রাইব্যুনালের কাছে তাঁরা শুধু এই মামলার সার্টিফাইড কপি চাইতে পারবেন, সাক্ষীর জবানবন্দির সার্টিফাইড কপি চাইতে পারবেন বা যেসব নথি আছে, তা চাইতে পারবেন। তাঁরা এখন যত চাওয়া, তা নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন। আপিল ফাইলিং অবস্থায় জামিন চাইতে পারবেন।
সাবেক আইজিপি মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সাজায় জুলাই যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অসন্তুষ্ট। তাঁরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যে এর বিরুদ্ধে আপিল করতে চান। এর জবাবে গাজী মোনাওয়ার বলেন, তাঁরা যদি চান, আইন অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে যেতে পারবেন।
