শনিবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩২   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

‘আওয়ামী লীগ এখন অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে’ — নেতাকর্মীদের হতাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ১১:২২ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার

আওয়ামী লীগের বর্তমান সংকট এবং ভবিষ্যত নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নেতারা দাবি করেছেন, ভুল নেতৃত্বের হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে দলটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউন কর্মসূচির পর বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে সহিংসতা এবং আগুন সন্ত্রাসে জড়িত হয়ে দলের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

 

টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতারা দেশে থেকে পালিয়ে যান। তাদের পলায়ন এবং সরকার পতনের পর বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতি অসন্তোষ তীব্র হয়ে ওঠে। দলের উপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে গেলে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে চিহ্নিত হয়।

 

বিদেশে পালিয়ে থাকা নেতারা দেশবাসীকে সহিংস পথে উসকানি দেওয়ায় দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হতাশ এবং বিভ্রান্ত। অনেক নেতা জানালেন, তারা এখন কোনো সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না এবং আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কীভাবে অংশগ্রহণ করা যাবে সেটি নিয়েও অস্পষ্টতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দলের নেতারা মনে করছেন, সহিংস পথে নেতৃত্ব ফিরতে চাইলে দল আরও বড় বিপদে পড়বে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেছেন, "আওয়ামী লীগের নেতারা যদি তাদের ভুল স্বীকার না করেন এবং উল্টো হুমকি-ধমকির ভাষায় ফিরে আসেন, তা তাদের জন্য আত্মঘাতী হবে। রাজনৈতিক স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত হয়ে দাঁড়ানোর জন্য এটি একেবারেই সঠিক পথ নয়।"

 

এদিকে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কিছু অবিবেচক বক্তব্য এবং কর্মসূচি তাদের নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলেছে। শেখ হাসিনার গত বছরের ফেসবুক লাইভে দেয়া কিছু বক্তব্যের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দলের বিভিন্ন স্থানে হামলা এবং লুটপাট শুরু হয়। শেখ হাসিনার "পালটা আঘাত করুন", "এখনই মাঠে নেমে সরকার পতন ঘটান"—এই ধরনের বক্তব্য দলের নেতাকর্মীদের আরও ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

 

অন্যদিকে, ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায় নিয়ে ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করার পর সহিংসতা এবং বাসে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। এর দায় দলের উপর পড়েছে, আর এর ফলে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে 'অগ্নিসন্ত্রাসী' তকমা পাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

 

দলের নেতারা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে অনেক নেতাকর্মী হতাশ হয়ে দল ছেড়ে দেবেন, বিশেষ করে যারা ব্যবসা-বাণিজ্যে আছেন, তারা আর রাজনীতি করবেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের জন্য সবচেয়ে লাভজনক হবে অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসা। দলের মধ্যে যারা এখনও গ্রহণযোগ্য, তাদেরই সামনে রেখে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।

 

দলের এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, "দল এখন যে অবস্থায় আছে, তা সহ্য করা যাচ্ছে না। গত কয়েক মাসের বিপজ্জনক কর্মসূচি ঘোষণা দলের ভবিষ্যত আরও কঠিন করে তুলছে। নেতারা যদি দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত না নেন, দল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"

 

দলের পুরোনো নেতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোনোও দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, যদি ভুলের জন্য সঠিকভাবে দুঃখ প্রকাশ না করে এবং প্রতিশ্রুতি না দেয়, তাহলে রাজনীতিতে তাদের অবস্থান স্থায়ী হবে না।