বিবিসিকে প্রথম সাক্ষাৎকারে অভিযোগ অস্বীকার করলেন শেখ হাসিনা
মোঃ মোসাদ্দেক হোসাইন ইমন
প্রকাশিত : ০৯:২৩ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৫ শুক্রবার
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। দেশত্যাগের পর ইমেইলের মাধ্যমে দেওয়া এটি তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার, যেখানে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, তার অনুপস্থিতিতে চলমান বিচার একটি “রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পরিচালিত ক্যাঙ্গারু কোর্টের সাজানো প্রহসন”। আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) যে মামলার রায় ঘোষণা হবে, সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ তার মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছে।
শেখ হাসিনার দাবি–এই বিচার শুরু থেকেই পূর্বনির্ধারিত দোষী সাব্যস্ত রায়ের দিকে এগোচ্ছিল।
এদিকে রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকার ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রায়টি যেমন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের জন্যও এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।
জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারীদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যর্থ প্রচেষ্টায় হাসিনা ও তার সরকারের পরিকল্পিত সহিংসতায় ১,৪০০ জন পর্যন্ত মানুষ নিহত হন।
ভারত থেকে দেশে ফিরে বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও “সুস্পষ্টভাবে” অস্বীকার করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন–পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, কিন্তু নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি চালাতে আমি কখনোই নির্দেশ দিইনি।
তবে এ বছরের শুরুতে ফাঁস হওয়া একটি অডিও বিবিসি যাচাই করে যেখানে গুলি ব্যবহারের অনুমোদনের ইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং আদালতে সেটি বাজানো হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ কামালের মৃত্যুদণ্ড চাইলেও মামুন দোষ স্বীকার করলেও এখনও সাজা হয়নি।
হাসিনা অভিযোগ করেন– তিনি নিজের আইনজীবী নিয়োগ বা নিজের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগই পাননি।
তার ভাষায়–আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিশ্চিহ্ন করতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই মামলা দিয়েছে।
তার আইনজীবীরা জাতিসংঘে জরুরি আপিল দাখিল করেছেন, বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায়বিচার নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ জানিয়ে।
এদিকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলার বিচার চলছে, যেটিও তিনি অস্বীকার করেছেন।
হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বাংলাদেশে গোপন কারাগারের অস্তিত্ব, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন–এসব সম্পর্কে আমি জানতাম না।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় সম্পর্কে তিনি দাবি করেন–আমার ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আমি অস্বীকার করছি। কোনো কর্মকর্তার অপব্যবহারের প্রমাণ থাকলে তা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হওয়া উচিত।
এ ছাড়া দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার ও সাবেক প্রশাসনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলাও বিচারাধীন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
