ক্যাম্পাস আড্ডায় স্বাস্থ্য, স্ক্যাবিস মোকাবিলায় নিমপাতাই ভরসা
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:৪৮ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার
মেডিকেলগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নানা রোগ নিয়ে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বর্তমানে এমন একটি রোগ, যা প্রায় সব মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে মিশে গেছে, তা হলো স্ক্যাবিস বা খোস-পাঁচড়া।
তবে এই স্ক্যাবিস দূর করার জন্য যুগ যুগ ধরে মানুষ নিমপাতা ব্যবহার করে আসছে। ঘরোয়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে এর জুড়ি মেলা ভার।
স্ক্যাবিস বা খোস-পাঁচড়ার প্রকোপ বাড়লে প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে নিম পাতা খুবই কার্যকর। নিম পাতায় থাকা শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানসমূহ স্ক্যাবিস সৃষ্টিকারী মাইট ও তাদের ডিমের উপর সরাসরি কাজ করে তাদের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত করে। এই পাতা চর্মরোগ নিরাময়ে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, কারণ এটি ত্বকের সংক্রমণ দূর করে, ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তোলে, এবং স্ক্যাবিসের ফলে হওয়া তীব্র চুলকানি, লালচে ভাব ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
এ বিষয়ে দি ডেইলি স্টার বাংলায় এক সাক্ষাৎকারে ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মাহফুজা পারভীন শম্পা। জানান, নিমপাতা একটি প্রাকৃতিক মহৌষধ, যা আমাদের শরীরের বহুবিধ সমস্যার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কাজ করে। এর তিক্ত স্বাদ সত্ত্বেও সঠিক নিয়মে ও সঠিক পরিমাণে নিয়মিত গ্রহণ করলে এটি দেহকে ভেতর থেকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে নিমপাতা তার সর্বোচ্চ উপকার দিতে সক্ষম হয়। তবে যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদানের মতোই এর ব্যবহারেও সতর্কতা ও পরিমিতি জরুরি।
যেভাবে ব্যবহার করবেন, একমুঠো নিম পাতা বাটা বা নিম তেল আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে ব্যবহার করা যেতে পারে, অথবা নিম পাতা সেদ্ধ জল দিয়ে নিয়মিত গোসল করলে খোস-পাঁচড়া ও অন্যান্য চর্মরোগের দূর হয়। তবে, স্ক্যাবিসের সম্পূর্ণ চিকিৎসার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে নিম পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে।
যে বৃক্ষ আমাদেরকে এতো সহযোগিতা করছে, আমরা কি সেই হিসেবে তাকে রক্ষা করতে পারছি, বাড়ছে প্রশ্ন মিলছে না সমাধান! যখন মানুষ দিনের পর দিন গাছ কেটে দালান কোঠা তৈরিতে ব্যস্ত হচ্ছে, বন উজার করে অক্সিজেনের সংকট তৈরি করছে। তখন উদ্বেগ যাগে কোন এক সময় মানুষের বন্ধুস্বরূপ এই গাছগুলো হয়তো বিলীন হয়ে যাবে, যার আশঙ্কা এখনই দেখা দিচ্ছে।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই যান্ত্রিক শহরে একটুখানি শান্তির খোঁজে, বিশেষ করে বিকেলে, মানুষ একটি নিরিবিলি পরিবেশের সন্ধান করে। অনেকেই তাই বেছে নেয় এই কলেজ ক্যাম্পাস। বিকেল হলেই এখানে পাখির কলরব শোনা যায়, গাছের পাতাগুলোও যেন শান্ত হাওয়ায় দুলতে থাকে।
আজ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী মো. তামজিদ, আরমান , এবং নিলয় বসেছে ঠিক ক্যাম্পাসের একটি নিম গাছের তলায়। প্রতিদিন বিভিন্ন গল্প করলেও আজকের গল্পের বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন, তারা আলোচনা করছে নিম গাছ এবং এর উপকারী দিকগুলো নিয়ে।
এক সময় মো. তামজিদ স্ক্যাবিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই রোগ থেকে সেরে উঠতে নিম পাতা কীভাবে জাদুর মতো সাহায্য করেছে, সেই কথা বলতে গিয়ে তামজিদ বলেন,
অসহ্য যন্ত্রণা হতো। রাতে ঘুমাতে পারতাম না, সারারাত শরীর চুলকাতাম। প্রথমদিকে একটু ভালো লাগলেও, যখন এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তখন জায়গাগুলো থেকে রক্ত বের হতে শুরু করে। দেখতে যেমন বিশ্রী লাগত, তেমনি ত্বক অনেকটা কালো হয়ে গিয়েছিল। অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। শেষে দাদির কথা শুনে নিম পাতা ব্যবহার শুরু করি। পাতার পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগাতাম, আর তার সঙ্গে নিয়মিত পাতার রস করে সকাল-সন্ধ্যা খেতাম। মিরাক্কেলভাবে ধীরে ধীরে আমি এই রোগ থেকে মুক্তি পাই।"
তবে আরমান এই গাছ কাটা নিয়ে চিন্তিত। আরমান বলেন,
মানুষ সাময়িকভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করার জন্য আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা বন্ধুস্বরূপ এই গাছগুলোকে অবহেলায় ধ্বংস করছে। আমাদের শুধু বর্তমানের কথা চিন্তা করে চলা উচিত নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত। বেশি বেশি বনায়ন তৈরি করা, বৃক্ষরোপণ করা এবং ঔষধি এই গাছগুলো সংরক্ষণ করা এখন খুবই জরুরি।
সময় পেরিয়ে যায়, কিন্তু প্রশ্নগুলো থেকে যায়—যাদের দায়িত্ব এই দেশ তথা পৃথিবীকে সুস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা, তারা কি তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন? নাকি শুধু মুখ ভরা বুলি, কাজে শূন্যতা? আমাদের সকল নাগরিকেরই যেমন নিজ দায়িত্বে সচেতন হওয়া জরুরি, তেমনি মনে রাখা উচিত, এই দেশ আমাদের, এই পৃথিবী আমাদের। একে সুন্দর ও স্বাভাবিক রাখার দায়িত্বও আমাদেরই
