বিবিসির মহাপরিচালক ও সংবাদ প্রধানের একযোগে পদত্যাগ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত : ১০:৩৩ এএম, ১০ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণসম্পর্কিত একটি তথ্যচিত্রে ‘ভুল সম্পাদনা’র অভিযোগে তীব্র বিতর্কের মুখে পদত্যাগ করেছেন বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও সংবাদ বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেবোরাহ টার্নেস। এই পদত্যাগকে বিবিসির ইতিহাসে বিরল ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো।
ব্রিটিশ দৈনিক `দ্য টেলিগ্রাফ, সম্প্রতি এক অভ্যন্তরীণ নথি প্রকাশ করে জানায়, বিবিসির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান *প্যানোরামা* ট্রাম্পের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ভাষণকে সম্পাদনা করে এমনভাবে উপস্থাপন করেছিল, যাতে মনে হয় তিনি সরাসরি ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই ঘটনা প্রকাশের পর বিবিসির নিরপেক্ষতা ও সম্পাদকীয় নীতিমালা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় টিম ডেভি ও ডেবোরাহ টার্নেস পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
টিম ডেভি বলেন, “যেকোনো গণমাধ্যমের মতো আমরাও ভুল করতে পারি, তবে জবাবদিহিতা বজায় রাখাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক বিতর্কের দায়ভার আমার উপরই বর্তায়।”
ডেবোরাহ টার্নেস এক বিবৃতিতে জানান, “প্যানোরামা বিতর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা এখন বিবিসির সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। তাই আমি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি, যদিও বিবিসি নিউজকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বলার অভিযোগ মিথ্যা।”
`দ্য টেলিগ্রাফ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা ক্যাপিটলে যাব এবং সাহসী সিনেটরদের উৎসাহ দেব।” কিন্তু বিবিসির সম্পাদিত সংস্করণে দেখানো হয়, “আমরা ক্যাপিটলে যাব… আমরা লড়ব, জোরে লড়ব।”—যা মূল ভাষণে ৫০ মিনিটের ব্যবধানে বলা হয়েছিল।
ঘটনার পর হোয়াইট হাউস বিবিসিকে “সম্পূর্ণ ভুয়া সংবাদমাধ্যম” বলে মন্তব্য করে। ট্রাম্পও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “তারা আমার নিখুঁত ভাষণ বিকৃত করেছে, পদত্যাগ ছিল ন্যায্য ও প্রয়োজনীয়।”
বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ একে প্রতিষ্ঠানটির জন্য “দুঃখজনক দিন” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, টিম ডেভি ব্যক্তিগত ও পেশাগত চাপের কারণে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ঘটনার পর বিবিসির সম্পাদকীয় পক্ষপাত নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পূর্বে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সংস্থাটির ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু, ইসরায়েল–গাজা যুদ্ধ ও সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষতা প্রশ্নে ২০টি অভিযোগ স্বীকার করেছে বিবিসি।
ব্রিটিশ সংস্কৃতি সচিব লিসা ন্যান্ডি বলেন, “বিবিসি আমাদের জাতীয় জীবনের অপরিহার্য অংশ। টিম ডেভি এক সংকটময় সময় সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।”
অন্যদিকে কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনোক বলেন, “বিবিসির দীর্ঘদিনের পক্ষপাত ও ব্যর্থতা বন্ধ না হলে জনগণের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি নেওয়ার যৌক্তিকতা হারাবে।”
এদিকে লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা স্যার এড ডেভি ও রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফারাজ এই পদত্যাগকে বিবিসির সংস্কারের সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
বিবিসি বোর্ড এখন নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কে এই সংকটকালে প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব দেবেন, তা নিয়েই এখন যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে।
