জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সমঝোতা হয়নি, এখন সিদ্ধান্ত সরকারের হাতে
তরুণ কণ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ১০:১৮ এএম, ৯ নভেম্বর ২০২৫ রোববার
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট আয়োজন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারের দেওয়া সময়সীমা আজ শেষ হচ্ছে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দলগুলো। বিএনপি বলছে, আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই; অন্যদিকে জামায়াত মনে করছে, বিএনপি আলোচনায় সাড়া দিচ্ছে না। ফলে সংকট সমাধানের বল এখন সরকারের কোর্টে।
সরকারি সূত্র জানায়, সময়সীমা শেষ হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বৈঠকে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “রাজনীতিতে একদিনেও অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে। দলগুলো যদি আরও কিছু সময় চায়, সরকার তা বিবেচনা করবে। তবে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সরকার চায় না।”
২৫টি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও, পরবর্তী পর্যায়ে বাস্তবায়ন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর থেকেই বিরোধ বাড়ে। বিএনপি অভিযোগ করছে— কমিশনের সুপারিশ দলগুলোর ঐকমত্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অপরদিকে জামায়াত বলছে, সরকারকেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে নতুন ইস্যু তোলা মানে ঐক্যের প্রতি অসম্মান। জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হতে হবে।” জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমরা বিএনপিকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি, কিন্তু তারা আগ্রহ দেখায়নি। এখন সরকারেরই এগিয়ে আসতে হবে।”
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আরও কয়েকটি দল বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা আনার চেষ্টা করলেও তাতে ফল আসেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকার এখন দুটি পথ নিতে পারে— এক, আবারও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা; দুই, আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা।
সরকারি সূত্রের দাবি, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তাব তৈরি করে রেখেছে সরকার। এতে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনজুর আহমেদ বলেন, “দলগুলো যদি নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সুযোগ হারাবে দেশ।” আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. একেএম শাহনওয়াজ মনে করেন, “এখন জোড়াতালি দিয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা সরকারের জন্য আত্মঘাতী হবে।”
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি ও জামায়াত উভয়েই গণভোটের পক্ষে, তবে সময়সূচি নিয়ে তাদের অবস্থান ভিন্ন। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট চায়, আর জামায়াত চায় আগে গণভোট হোক। এই অবস্থায় সমঝোতা না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকায় বৃহত্তর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামায়াত নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোট।
