জামায়াতে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অস্বস্তি, একাধিক আসনে দ্বন্দ্ব
প্রকাশিত : ১১:৩৭ এএম, ৬ নভেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার
আগে সংগঠিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ দল হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর ভেতরে এবারের নির্বাচনে দেখা দিয়েছে মনোনয়ন–বিরোধ। প্রকাশ্যে চারটি আসনে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আর অন্তত আরও চারটিতে অসন্তোষ রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
পাবনা-৫, ময়মনসিংহ-৬, কুমিল্লা-৭ এবং নরসিংদী-৫ আসনে পরিস্থিতি প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। এর বাইরে সিলেট-৫, কুষ্টিয়া-৩, চট্টগ্রাম-১৫ ও গাজীপুর-৬ আসনে অঘোষিত অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। এমনকি কুমিল্লার আরও দুটি আসন নিয়েও গুঞ্জন চলছে।
অতীতে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে জামায়াতে এ ধরনের বিরোধ দেখা না গেলেও এবার প্রথমবারের মতো নেতাকর্মীদের একাংশ প্রকাশ্যে প্রতিবাদে নেমেছে। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের ভোটে নির্বাচিত প্রার্থী পরিবর্তন ও কেন্দ্রের একক সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় নেতারা।
দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “কিছু সমর্থক পর্যায়ের মানুষ অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করেছে। তারা দলের শৃঙ্খলা সম্পর্কে সচেতন নয়। তবে আমরা এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছি—রুকন পর্যায়ের কেউ এসব কর্মকাণ্ডে যুক্ত নয়।”
প্রকাশ্য বিরোধের ঘটনা
ময়মনসিংহ-৬ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সব পদ স্থগিত করা হয়েছে। নতুন প্রার্থী অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলনকে ঘিরে স্থানীয় শিবিরের সাবেক নেতারা বিক্ষোভ দেখান এবং তাঁকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
কুমিল্লার চান্দিনায়ও একই চিত্র। ২৭ অক্টোবর উত্তর জেলা জামায়াতের গণমিছিলে সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেনকে “আওয়ামী লীগের দোসর” বলে স্লোগান দেয় এক পক্ষ। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোস্তফা শাকের উল্লাহ তৃণমূল ভোটে নির্বাচিত হলেও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তাঁর পরিবর্তে মোশাররফ হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়—এ নিয়েই ক্ষোভ।
পাবনা-৫ আসনেও স্থানীয়দের বিক্ষোভ দেখা গেছে। তাঁরা মাওলানা ইকবাল হোসেনকে বাদ দিয়ে সাবেক এমপি আবদুস সোবহানের ঘনিষ্ঠ আব্দুর রহিমকে প্রার্থী করার দাবি জানান।
অপ্রকাশ্য দ্বন্দ্বের আভাস
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) আসনে জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু এবার সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা ঘিরে ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ আছে। ঘোষণার পর থেকে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণাও স্থবির।
কুষ্টিয়া-৩ আসনে প্রথমে ফরহাদ হুসাইনকে মনোনীত করে পরে ওয়াজ বক্তা আমির হামজার নাম ঘোষণা করা হয়। বিতর্কিত বক্তব্য ও অতীতে আওয়ামী লীগপ্রীতির কারণে স্থানীয় নেতাদের একাংশ তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
সিলেট-৫ আসনেও অসন্তোষ রয়েছে। জনপ্রিয় নেতা ফরিদউদ্দিন চৌধুরীর পরিবর্তে আনোয়ার হোসেন খানকে প্রার্থী করা হয়েছে, যাকে স্থানীয়রা “অপরিচিত ও অপ্রভাবশালী” বলে মনে করছেন।
নবগঠিত গাজীপুর-৬ আসনে কেন্দ্র থেকে পাঠানো প্রার্থী ড. হাফিজুর রহমানকে নিয়েও তৃণমূল নেতারা দ্বিধায়। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় মতামত না নিয়েই প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে।
দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “দীর্ঘদিনের শৃঙ্খলাবদ্ধ সংগঠনে এ ধরনের অস্থিরতা অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। এখনই ব্যবস্থা না নিলে নির্বাচনের মাঠে এর প্রভাব পড়তে পারে।”
