গাজার ছায়ায় নিউ ইয়র্ক, মামদানির জয় কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে?
রাফিউল ইসলাম তালুকদার
প্রকাশিত : ০৭:৩১ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০২৫ বুধবার
২০২৫ সালের নভেম্বরের ৪ তারিখ, নিউ ইয়র্ক সিটি। মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম নাটকীয় নির্বাচনে জয়ী হলেন এক তরুণ মুসলিম রাজনীতিক, জোহরান মামদানি। দক্ষিণ এশীয় ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এই প্রগতিশীল নেতার জয় এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বৈশ্বিক রাজনীতির প্রতীকি আলোচনায় পরিণত হয়েছে।
জোহরান মামদানি উগান্ডায় জন্মানো প্রখ্যাত চিন্তাবিদ মাহমুদ মামদানি ও ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে। নিউ ইয়র্কের রাজনীতিতে তিনি পরিচিত ছিলেন একজন সমাজতান্ত্রিক, প্রো-প্যালেস্টাইন ও বৈষম্যবিরোধী কণ্ঠ হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হাউজিং সংকট, পুলিশি সহিংসতা, ও পুঁজিবাদী নীতির সমালোচনায় সক্রিয় ছিলেন।
জোহরান মামদানি শুধু নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়রই নন, বরং তিনি এমন এক প্রার্থী যিনি প্রকাশ্যে ইসরায়েলের দখলদার নীতির সমালোচনা করেছেন, প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং বিরোধিতা করেছেন কর্পোরেট রাজনীতির। যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে নিউ ইয়র্কের মতো শহরে, যেখানে শক্তিশালী জায়নিস্ট ও কর্পোরেট লবি যুগের পর যুগ ধরে রাজনীতির স্রোত নির্ধারণ করে আসছে সেখানে এই জয় এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক সাফল্য।
বিগত বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের সমালোচনাকে প্রায়শই “অ্যান্টিসেমিটিক” বা ইহুদিবিদ্বেষী বলে প্রচার করা হয়েছে। এর ফলে সমালোচকদের রাজনৈতিকভাবে একঘরে করা সহজ ছিল। কিন্তু মামদানির ক্ষেত্রে এই পুরনো কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম, অভিবাসী সমাজ, ও বহু জাতিগোষ্ঠীর ভোটাররা এবার এই প্রচারণা প্রত্যাখ্যান করেছে। গাজার চলমান হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে জায়নবাদের নৈতিক ছত্রছায়া যে ফাটল ধরেছে, মামদানির জয় যেন সেই বাস্তবতার প্রতিফলন।
জোহরানের মা ভারতীয় হলেও, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও ‘লিবারেল’ বুদ্ধিজীবী মহল তাঁর বিজয় নিয়ে প্রায় নীরব। কারণ, তিনি এমন একজন মুসলিম, যিনি নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখেন না। তিনি একইসঙ্গে হিন্দুত্ব এবং জায়নবাদ দুই মতাদর্শেরই সমালোচক। ফলে ভারতের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ সমাজও তাঁকে সহজভাবে নিতে পারেনি।
এই জয়কে একদিকে দেখা যায় স্থানীয় প্রশাসনের পরিবর্তন হিসেবে, অন্যদিকে এটা বৈশ্বিক পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মুখে এক প্রতিরোধের ইঙ্গিত। এটি প্রমাণ করে, তরুণ ও প্রগতিশীল নাগরিকরা এখন আর পুরনো মিডিয়া ও কর্পোরেট বয়ানের ভেতর আটকে নেই। তারা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও স্পষ্ট, নৈতিক ও মানবিক ভাষায় প্রকাশ করতে চায়।
জোহরান মামদানির জয় এক নির্বাচনী সাফল্যের বেশি কিছু, এটা এক নৈতিক বিজয়, এক প্রতিরোধের প্রতিধ্বনি। সাম্রাজ্যেবাদের আয়নায় প্রথম ফাটল। আর এই ফাটলই আজকের পৃথিবীতে বঞ্চিত ও নিপীড়িতদের মধ্যে নতুন আসার সঞ্চার করছে।
