সূর্যের আলো কম, মনও ভারী: শীতকালীন বিষণ্ণতার কারণ ও প্রতিকার
নুসরাত নবী নিশাত
প্রকাশিত : ১২:২৫ এএম, ৫ নভেম্বর ২০২৫ বুধবার
শীতকালের সকাল মানেই ঘন কুয়াশা, মিষ্টি রোদ, গরম চা আর ঘোরাঘুরি। কিন্তু কারও কারও কাছে এই ঋতুটা শুধু ঠান্ডা নয়, অদ্ভুত এক মন খারাপের সময়ও বটে।
শীতের এই বিষণ্ণতার বৈজ্ঞানিক নাম সিজনাল এফেক্টিভ ডিসঅর্ডার যা মূলত সিজনাল ডিপ্রেশন বা উইন্টার ব্লুজ নামেও পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থা একধরনের বিষন্নতা, যা সাধারণত শীতকালে সূর্যালোকের অভাবে দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, শীতকালে বাংলাদেশে প্রায় ৪২% তরুণ শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিষণ্ণতা অনুভব করে, বিশেষত পরীক্ষার চাপ ও দিন ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে।
সিজনাল বিষন্নতা কী?
সিজনাল বিষন্নতা হলো এমন মানসিক অবস্থা যেখানে শীতের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে মানুষ অস্বাভাবিক ক্লান্তি, মনমরা ভাব, ঘুম ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, আগ্রহহীনতা বা হতাশা অনুভব করে। এই অবস্থাটি সাধারণত প্রতি বছর একই সময়ে দেখা দেয় এবং বসন্ত বা গ্রীষ্মের শুরুতে হালকা হয়ে যায়।
সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
• অতিরিক্ত ঘুমানো বা ক্লান্তি
• কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আকর্ষণ
• মনোযোগে ঘাটতি ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
• দৈনন্দিন কাজে আগ্রহ হারানো
• আত্মসমালোচনামূলক বা নেতিবাচক চিন্তা
এটি কেন হয়?
শীতকালে দিনের আলো কমে যাওয়ায় শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা হ্রাস পায়, যার প্রভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে মেলাটোনিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, ফলে ঘুম-জাগরণের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটে। এই দুই পরিবর্তনের ফলেই মন খারাপ, অলসতা বা বিষণ্ণতার মতো অনুভূতি তৈরি হয় ।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
• যাদের পরিবারে আগে ডিপ্রেশনের ইতিহাস আছে
• নারী ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা
• যারা দীর্ঘ সময় ঘরের ভিতরে কাজ করেন
• সূর্যালোক কম পাওয়া এলাকায় বসবাসকারী মানুষ
• যারা শীতকালে কম নড়াচড়া করেন
বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে এই বিষয়ে সচেতনতা কম, এর ফলে শহুরে কর্মজীবী ও ছাত্রদের মধ্যে “উইন্টার ব্লুজ” ক্রমেই বাড়ছে।
কীভাবে প্রতিরোধ বা মোকাবিলা করা যায় ?
১. সূর্যের আলোয় সময় কাটান:
প্রতিদিন সকালে অন্তত ৩০ মিনিট বাইরে হাঁটলে শরীরে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে এবং সেরোটোনিন নিঃসরণ বাড়ে।
২. ব্যায়াম করুন :
শরীরচর্চা এন্ডোরফিন হরমোন বাড়ায়, যা স্বাভাবিকভাবে মন ভালো করে।
৩.সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখুন:
বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা বা প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলা মানসিক স্বস্তি দেয়।
৪.পুষ্টিকর খাবার খান:
মাছ, ডিম, দুধ, বাদাম ও শাকসবজিতে থাকা ভিটামিন-ডি ও ওমেগা-৩ মন ভালো রাখে।
৫.প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন:
যদি দীর্ঘস্থায়ী মনমরা ভাব বা হতাশা থাকে, তাহলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে দ্বিধা কোরো না।
