প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ
নুসরাত নবী নিশাত
প্রকাশিত : ১০:২৭ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার
বিশ্বের মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক কেমন? এই নিয়ে প্রথমবারের মতো করা গবেষণায় উঠে এসেছে প্রকৃতির সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, যেখানে ব্রিটেন রয়েছে নিচের দিক থেকে ৫৫তম।
বিশ্বের ৬১টি দেশের ৫৭,০০০ মানুষের ওপর এই জরিপ চালানো হয়েছিল।। জরিপে সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নানা দিক থেকে মানুষ কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে তা পরীক্ষা করা হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এমবিওতে। গবেষণার ফল ২০২৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে, যা ২০২৪ সালে জার্নাল অব এনভায়রনমেন্ট সাইকোলজি এ প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
গবেষণায় সবচেয়ে প্রকৃতি-সংযুক্ত দেশ হিসেবে নেপালকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপর ইরান, দক্ষিণ আফ্রিকা, এবং বাংলাদেশ- এই তিন দেশ স্থান পেয়েছে শীর্ষ চারটিতে। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে কেবল ক্রোয়েশিয়া ও বুলগেরিয়া শীর্ষ ১০-এ রয়েছে।
সবচেয়ে নিচে রয়েছে স্পেন। অন্যদিকে, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, জার্মানি, ইসরায়েল, ও জাপান প্রকৃতির সঙ্গে দুর্বল সংযোগ দেখিয়েছে।
গবেষকরা বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক বা নেচার কানেক্টেডস মূলত সমাজের আধ্যাত্মিকতা, জীবনধারা, শহরায়ন, এবং অর্থনৈতিক মানসিকতা দ্বারা নির্ধারিত।যে দেশগুলো ধর্মীয়ভাবে বিশ্বাসী বা আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ, সেখানে মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে মানসিক ঘনিষ্ঠতা বেশি। এর বিপরীতে, বিশ্বব্যাংকের 'ইজ অব ডুয়িং বিজনেস' সূচকের সঙ্গে প্রকৃতি সংযোগের নেতিবাচক সম্পর্ক দেখা গেছে; যেখানে ব্যবসায়িক সুবিধা বেশি, সেখানে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের ঘনিষ্ঠতা কম।
ডারবি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'নেচার কানেক্টেডনেস' অধ্যাপক মাইলস রিচার্ডসন বলেন,“প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ শুধু আমাদের কাজের নয়, এটি অনুভূতি, চিন্তা এবং জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির অংশ।” তিনি আরও বলেন,“আমরা যুক্তিবাদী ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে পরিণত হয়েছি, কিন্তু এতে প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়েছি। প্রকৃতিকে শুধু সম্পদ নয়, বরং অংশীদার হিসেবে দেখতে হবে।”
চার্চ অব ইংল্যান্ডের পরিবেশ বিষয়ক প্রধান নরউইচের বিশপ গ্রাহাম উশার বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে জানি প্রকৃতিতে সময় কাটানো শরীর, মন ও আত্মার জন্য ভালো। আমরা যা লক্ষ্য করি তা আমরা ভালোবাসতে শুরু করি, যা ভালোবাসি তা আমরা সংরক্ষণ করতে চাই। এটি শিশুদের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া উচিত, এবং এজন্য 'ফরেস্ট স্কুল' বা 'ওয়াইল্ড চার্চ' মতো কার্যক্রম মানুষ ও প্রকৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
গবেষণায় ওয়ার্ল্ড ভ্যালুস সার্ভে-এর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের ধর্ম, বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা, ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাছাড়া শহরায়ন, গড় আয় ও ইন্টারনেট ব্যবহারের হারও প্রভাবক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
