কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না: তারেক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ১০:৪৯ এএম, ৩ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার
যথাসময়ে নির্বাচন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, “পতিত ও পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে যেমন নির্বাচনের প্রতি জনগণের আগ্রহ ছিল না, তেমনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও কখনো কখনো জনমনে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে—যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? এই সংশয় গণতন্ত্রের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে।”
রোববার (২ নভেম্বর) রাতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বিএনপির প্রবাসী সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহের অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত ও পরাজিত স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল, ধ্বংস করে দিয়েছিল দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা। উদ্বেগের বিষয়, আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপকৌশল ও অপপ্রচার দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।”
তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের আহ্বান
তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য রক্ষার স্বার্থে বিএনপি সব সময় সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকেও যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে জটিল করে তোলা হচ্ছে, যা নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি।”
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কৌশল ও অপকৌশলের পার্থক্য বুঝতে না পারলে কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে আত্মসমর্পণের ঝুঁকি তৈরি হয়। সব গণতান্ত্রিক দলকে এই বাস্তবতা মাথায় রাখতে হবে।”
একক প্রার্থীকে সমর্থনের আহ্বান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “শিগগিরই ধাপে ধাপে বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাঁকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। নিজেদের ভেতরে বিভেদ সৃষ্টি করবেন না, কারণ প্রতিপক্ষ সেই সুযোগ নিতে পারে।”
তিনি বলেন, “ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতবেন—দেশ ও গণতন্ত্র জিতবে। সবাই মনে রাখবেন, আপনারা শহীদ জিয়ার আদর্শের অনুসারী, খালেদা জিয়ার সৈনিক এবং বিএনপির কর্মী।”
প্রবাসী ভোট ও নারীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গ
প্রবাসীদের ভোটাধিকার চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “এবারই প্রথমবার প্রবাসীরা ভোট দিতে পারছেন, যা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। যদিও প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল মনে হতে পারে, তারপরও আমরা নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানাই।”
নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “দেশে ও বিদেশে আমাদের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। অথচ নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের উদাসীনতা এখন প্রকট। আগস্ট মাসে ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন—এমন একটি সমাজ কখনো সভ্য হতে পারে না। সরকার ও প্রশাসনের অবশ্যই এ বিষয়ে দায়িত্ব নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্ব করেন। নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক জাহিদ হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবিরসহ দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।
