সোমবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ১৯ ১৪৩২   ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

রাজনৈতিক সমঝোতায় বড় বাধা পারস্পরিক অবিশ্বাস

তরুণ কণ্ঠ প্রতিবেদন

প্রকাশিত : ১০:৪৫ এএম, ৩ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার

জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময় নির্ধারণে রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েও সফল হচ্ছে না অন্তর্বর্তী সরকার। মূল কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সন্দেহ। রোববার পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নিজেদের অবস্থান থেকে সরেনি, যদিও জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ জানিয়েছে।

 

 

এ অবস্থায় আজ সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে, যেখানে সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি, গণভোটের সময় এবং “নোট অব ডিসেন্ট” ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

 

উপদেষ্টা পরিষদের আগের বৈঠকে সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন। একজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন বাতিল করে জোট শরিকদের প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ পুনর্বহাল নিয়েও আজ আলোচনা হতে পারে। বিএনপি চায় জোটের শরিকরা ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করুক, কিন্তু আরপিওর সাম্প্রতিক সংশোধনী তা নিষিদ্ধ করেছে।

 

তিনজন উপদেষ্টা ও বিলুপ্ত ঐকমত্য কমিশনের দুই সদস্য জানিয়েছেন, সরকার একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এতে বিএনপির প্রধান দাবি পূরণ হবে। অন্যদিকে, গণভোটে “নোট অব ডিসেন্ট” না রাখার মধ্য দিয়ে জামায়াতের দাবিও আংশিকভাবে মানা হতে পারে।

 

উচ্চকক্ষে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালুর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা জোর দিচ্ছেন, যদিও বিএনপি এতে আপত্তি জানাচ্ছে। জামায়াত ও এনসিপি এই পদ্ধতির পক্ষে অনড়।

 

ঐকমত্য কমিশনের প্রণীত জুলাই সনদের খসড়া অনুযায়ী, আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পাস না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত বলে গণ্য হবে। বিএনপি বলছে, সংসদকে এভাবে বাধ্য করা যায় না। ফলে উপদেষ্টারা এই বাধ্যবাধকতা বাদ দিয়ে নির্দেশনামূলক আকারে রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

 

আস্থাহীনতায় জট

 

উপদেষ্টারা জানিয়েছেন, কে আগে ছাড় দেবে তা নিয়ে দলগুলোর টানাপোড়েন চলছে। বিএনপি বলছে, জামায়াতকে আগে গণভোট ও নিম্নকক্ষে পিআর দাবিতে ছাড় দিতে হবে। অন্যদিকে জামায়াতের দাবি, বিএনপি আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কাঠামো ও উচ্চকক্ষের পিআর পদ্ধতি মেনে নিক।

 

রোববার জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকে আলোচনায় আহ্বান জানিয়ে আবারও তাদের ‘সংস্কারবিরোধী’ বলে আখ্যা দেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “বিএনপি সংস্কার চায় না—এমন পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে।”

 

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, বিএনপি সংস্কার ভণ্ডুলের চেষ্টা করছে আর জামায়াত নির্বাচন বানচাল করতে চায়। এনসিপি বলছে, ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার বাধ্যবাধকতা থাকলে গণভোটের সময় নিয়ে তাদের আপত্তি নেই—এটা নির্বাচনের আগে বা একই দিনেও হতে পারে।

 

বিএনপি এখনো নির্বাচনের আগে গণভোটের বিপক্ষে অবস্থান ধরে রেখেছে, অন্যদিকে জামায়াত তা নির্বাচনের আগেই চায়।

 

 পিআর ও “নোট অব ডিসেন্ট” ইস্যুতে জট

 

সাত মাসের সংলাপ শেষে ১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সই করলেও ৬১টি প্রস্তাবে অন্তত একটি দলের “নোট অব ডিসেন্ট” রয়েছে। ২২টি মৌলিক সংস্কারের মধ্যে ৯টিতেই বিএনপির আপত্তি। দলটি বলেছে, ক্ষমতায় গেলে সেসব বাস্তবায়ন করবে না।

 

ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ সুপারিশে “নোট অব ডিসেন্ট” বাদ দেওয়া হয়েছে। গণভোটের প্রস্তাব থাকবে শুধুমাত্র সনদ ও তার তপশিলে যুক্ত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবের ওপর। বিএনপি এটিকে “প্রতারণা” বলছে, তবে জামায়াত ও এনসিপি চায় নভেম্বরে নোট অব ডিসেন্টবিহীন তপশিলের ওপর গণভোট হোক।

 

বৃহস্পতিবারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বেশিরভাগ উপদেষ্টা বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক না করে পরবর্তী সংসদের সংবিধান সংস্কার পরিষদের জন্য নির্দেশনামূলক রাখা উচিত। তারা নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

 

 আজ বিশেষ বৈঠক

 

আজ সোমবার সকাল ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক হবে। দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।

 

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজকের বৈঠকে নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নেই। তবে গণভোটের সময়সূচি, আরপিও সংশোধন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হবে।

 

একজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “এনসিপি এখন তুলনামূলক নমনীয় অবস্থানে আছে। জামায়াতকেও শেষ পর্যন্ত রাজি করানো সম্ভব হতে পারে। কিন্তু বিএনপি যদি পিআর ইস্যুতে অনড় থাকে, তাহলে সরকারের জন্য সমঝোতা কঠিন হবে।”

 

আইন মন্ত্রণালয় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার কাজ করছে। উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হলেও আদেশ জারি করতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানা গেছে। সরকার আইনি পথে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আদেশ জারির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে, যদিও জামায়াত ও এনসিপি এ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছে।