জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে দুটি বিকল্প সুপারিশ দিল ঐকমত্য কমিশন
তরুণ কণ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ১১:২৪ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দুটি বিকল্প খসড়া প্রস্তাব করেছে **জাতীয় ঐকমত্য কমিশন**। এতে বলা হয়েছে, **‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’** নামে একটি আদেশ জারি করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। খসড়াগুলোর একটিতে সংস্কার বাধ্যতামূলক, অন্যটিতে নির্দেশনামূলক রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) যমুনায় **প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের** হাতে সুপারিশপত্র ও দুই খসড়া তুলে দেন কমিশনের সদস্যরা। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সহসভাপতি **অধ্যাপক আলী রীয়াজ** এসব তথ্য জানান।
প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছে, আগামী সংসদের **সংবিধান সংস্কার পরিষদ** ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরি করে যাওয়া **সংবিধান সংশোধনের খসড়া বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাস হয়েছে বলে গণ্য হবে**। দ্বিতীয় খসড়ায় বলা হয়েছে, পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যেই জুলাই সনদের আলোকে সংবিধান সংস্কার করবে।
উভয় প্রস্তাবেই বলা হয়েছে, আদেশ জারি থেকে নির্বাচন পর্যন্ত যে কোনো সময় গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। গণভোটে একটি প্রশ্ন থাকবে—জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে মতামত জানাবেন। আদেশই হবে জুলাই সনদের **আইনি ভিত্তি**।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, গণভোটে আদেশ অনুমোদিত হলে সংসদ সরকার গঠন, আইন ও বাজেট প্রণয়ন করবে এবং সেই সংসদের সদস্যদের নিয়েই গঠিত হবে **কন্সটিটুয়েন্ট ক্ষমতাসম্পন্ন সংবিধান সংস্কার পরিষদ**, যারা জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে।
তবে কমিশনের এই প্রস্তাব নিয়ে **বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি’র** মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য **সালাহউদ্দিন আহমেদ** বলেছেন, “ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐক্য নয়, বরং অনৈক্যের পথে এগোচ্ছে।” অন্যদিকে জামায়াত জানিয়েছে, গণভোট **নির্বাচনের আগেই অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত**। এনসিপি এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে দলটির নেতারা গণভোটের প্রস্তাবকে **ইতিবাচক** বলে মন্তব্য করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মতবিরোধ রয়েছে **প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন** নিয়ে। বিএনপি এর বিরোধিতা করে **‘নোট অব ডিসেন্ট’** দিয়েছে, তবে জামায়াত ও এনসিপি উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে। কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে, সংবিধান সংস্কার সম্পন্নের **৪৫ দিনের মধ্যে নিম্নকক্ষের ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে।**
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “সংবিধান সংস্কার পরিষদ জুলাই সনদ অনুযায়ীই কাজ করবে। আগামী সংসদ ইচ্ছেমতো সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবে না। কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার মানে এই নয় যে, যা খুশি তাই করা যাবে।”
তিনি আরও জানান, গণভোটে যদি আদেশ পাস না হয়, তার অর্থ জনগণ সেটি **প্রত্যাখ্যান করেছে**। কমিশন আশা করছে, **৩১ অক্টোবরের মধ্যেই সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে।**
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য **বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, সফর রাজ হোসেন**, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব **শফিকুল আলম** এবং বিশেষ সহকারী **মনির হায়দার**।
