রোববার   ২৬ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ১০ ১৪৩২   ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

জিটুজি ভিত্তিতে হচ্ছে নতুন ভাসমান টার্মিনাল

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত : ০১:০১ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার

দেশে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার নতুন একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। চতুর্থ এফএসআরইউ প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলেও সময় বাঁচাতে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে পেট্রোবাংলা। এর জন্য মহেশখালীর কুতুবজোন এলাকার কাছে গভীর সমুদ্রে স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে।

দেশে গ্যাসের উৎপাদন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, বাড়ছে জ্বালানি ঘাটতি। বর্তমানে মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল চালু আছে– একটি সামিট গ্রুপ এবং অপরটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি পরিচালনা করছে। দুটি প্রকল্পই বিওটি (স্থাপন, পরিচালনা ও হস্তান্তর) পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত। এতে চুক্তির মেয়াদ শেষে স্থাপনা বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। 

সূত্র জানিয়েছে, নতুন টার্মিনাল বিওও (স্থাপন, পরিচালনা ও মালিকানা) ভিত্তিতে করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে চুক্তির মেয়াদ শেষে স্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ফেরত নেবে। এতে রিগ্যাসিফিকেশনে (তরল থেকে গ্যাসে রূপান্তর)  আগের এফএসআরইউগুলোর তুলনায় খরচ কম হবে। ফলে গ্যাসের দাম কম পড়বে।

এর আগে আরও দুটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে আওয়ামী লীগ সরকার দরপত্র ছাড়াই বিশেষ আইনে সামিটের সঙ্গে চুক্তি এবং এক্সিলারেটরের সঙ্গে চুক্তিপত্র প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। নিরাপত্তা জামানত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার সামিটের চুক্তি বাতিল করে। বিশেষ আইন বাতিল করায় অন্তর্বর্তী সরকার এক্সিলারেটের প্রকল্পটিও বাদ দেয়। সামিট বিষয়টি নিয়ে আদালতে গিয়েছে। আদালতে বিচারাধীন থাকায় নতুন প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে চতুর্থ টার্মিনাল। 

পেট্রোবাংলার এক পরিচালক বলেন, উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করলে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতেই প্রায় এক বছর সময় লাগে। কিন্তু জিটুজি ভিত্তিতে হলে সময় অনেক কম লাগবে। তিনি জানান, সৌদি আরব, কাতার, আজারবাইজানসহ কয়েকটি দেশ নতুন ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে। আলোচনা চলছে– কে সবচেয়ে দ্রুত এবং কম খরচে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারবে।

গ্যাস ঘাটতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, ভরসা এলএনজি
দেশে পাঁচ বছর আগেও প্রতিদিন ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হতো। গত ২০ অক্টোবর তা নেমে এসেছে ১৭৭ কোটি ঘনফুটে। দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানায় উৎপাদন ১৩৫ কোটি থেকে কমে ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ২০২৬ সালের শেষ দিকে বিবিয়ানার উৎপাদন ৫০ কোটি ঘনফুটের নিচে নেমে যেতে পারে। তখন দেশীয় গ্যাসের দৈনিক সরবরাহ ১৫০ কোটি ঘনফুটের নিচে নেমে আসবে, যা জাতীয় চাহিদার এক-তৃতীয়াংশও নয়।

দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪২০ কোটি ঘনফুট। অন্যদিকে দেশের বিদ্যমান দুটি টার্মিনাল সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হলেও ১১০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানি করা সম্ভব নয়। বর্তমানে সর্বোচ্চ ১১৫ কার্গো এলএনজি আনা যায়। ২০২৭ সালের গ্যাস চাহিদার কথা চিন্তা করেই সরকার নতুন টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে, যদিও এলএনজি আমদানি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দেশীয় গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ছয় টাকা সাত পয়সা। আমদানি করা এলএনজির দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা।

গ্যাস ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কার্যক্রমে গতি না থাকায় দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, তারা গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে বড় ধরনের কর্মসূচি নিয়েছে। চলমান ৫০ কূপ খনন কাজের পাশাপাশি আরও ১০০ কূপ খননের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি কূপ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খনন করা হবে। এ ছাড়া নতুন দুটি রিগ কেনার কাজও চলছে। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন টার্মিনাল নির্মাণ সময়োপযোগী হলেও এটি আমদানিনির্ভরতা আরও বাড়িয়ে তুলবে, যা ভবিষ্যতে গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বিষয়ে ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমমা বলেন, দেশীয় অনুসন্ধানে বিনিয়োগ বাড়ানো না গেলে এলএনজিনির্ভরতা অর্থনীতিকে আরও চাপের মুখে ফেলবে। গ্যাস আমদানির পরিমাণ দ্বিগুণ হলে উৎপাদন ব্যয় ও ভোক্তা পর্যায়ের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সমকালকে বলেন, দেশে প্রাথমিক জ্বালানির ঘাটতি এখন প্রকট। প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন কমছে। গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাই  অনুসন্ধান জোরদার করার পাশাপাশি নতুন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।