ইতালিতে সমুদ্রপথে অভিবাসীদের পৌঁছানোর শীর্ষে বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত : ০৮:৪৫ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০২৫ সোমবার

সমুদ্র পথে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ইতালিতে পৌঁছানোর শীর্ষে উঠে এসেছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ হাজার ৪৭৬ জন বাংলাদেশি অভিবাসী সমুদ্রপথে ইতালি উপকূলে পৌঁছেছেন। এই সংখ্যা এ বছর ইতালিতে পৌঁছানো অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
শুক্রবার ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, চলতি বছর ইতালি উপকূলে আসা মোট অভিবাসীর সংখ্যা গত দুই বছরের তুলনায় কমেছে। তবে বাংলাদেশিদের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
২০২৫ সালে ইতালিতে মোট ৫১ হাজার ৮৫৫ জন অভিবাসী পৌঁছেছেন, যা ২০২৪ সালের ৫১ হাজার ৩৪১ জনের তুলনায় সামান্য বেশি হলেও ২০২৩ সালের ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৯ জনের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু এই সামগ্রিক হ্রাসের মধ্যেও বাংলাদেশিদের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
২০২৪ সালে ৮ হাজার ৫২৬ জন বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছান। এ বছর তা বেড়ে ১৫ হাজার ৪৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে এ বছর ইতালিতে আগত মোট অভিবাসীর প্রায় ৩০ শতাংশই বাংলাদেশি; যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই প্রতিবেদনে ভূমধ্যসাগর হয়ে দেশটিতে অভিবাসন প্রবাহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আফ্রিকার দেশগুলোর তুলনায় এখন দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
বাংলাদেশের পর ইতালিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী পৌঁছেছে ইরিত্রিয়া ও মিসর থেকে। এই দুই দেশ থেকে যথাক্রমে ৭ হাজার ৯০ জন ও ৬ হাজার ৫৫৮ জন ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন।
একই সময়ে পাকিস্তান, সুদান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও তিউনিশিয়া থেকেও কয়েক হাজার মানুষ ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন। অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে ইরান, সিরিয়া, গিনি, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, মালি ও আফগানিস্তান। আরও কিছু অভিবাসীর পরিচয় যাচাইয়ের কাজ এখনও চলমান।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ সালের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়টিই ছিল অভিবাসনের প্রধান মৌসুম। মে মাসে ৭ হাজার ১৭৮ জন, জুনে ৭ হাজার ৮৯ জন, জুলাইয়ে ৬ হাজার ৪৮৭ জন, আগস্টে ৬ হাজার ১৪৬ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩১৫ জন অভিবাসী ইতালিতে পৌঁছান। অক্টোবরের প্রথম দিক পর্যন্ত আগমন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক একক অভিবাসীর সংখ্যাও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ১৫৬ জন শিশু ইতালিতে পৌঁছেছে, যা গত বছরের ৮ হাজার ৭৫২ জনের তুলনায় সামান্য বেশি হলেও ২০২৩ সালের ১৮ হাজার ৮২০ জনের তুলনায় অনেক কম।
সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপীয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর হলেও বাংলাদেশের অভিবাসন প্রবাহে তা তেমন প্রভাব ফেলেনি। বরং দক্ষিণ এশীয় অভিবাসনের নতুন ধারা ইতালির ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইনফোমাইগ্রান্টস।