বিএনপি আসন ছাড়লেও মিত্রদের ভয় স্বতন্ত্র নিয়ে
মো:নাজমুল হুদা
প্রকাশিত : ১০:২০ এএম, ৫ অক্টোবর ২০২৫ রোববার

মিত্র দলগুলোর জন্য ৫০-৭০টি আসন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
- বিএনপির কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে মিত্রদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে
- জোটের প্রার্থী হলেও নিজ দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাধ্যবাধকতা
- প্রাথমিকভাবে এলডিপির জন্য তিনটি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির
- ১২ দলীয় জোটের ৫টি দলের জন্য ৭টি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত
- গণতন্ত্র মঞ্চের ৬ দলের মধ্যে ৪টিকে ৪টি আসন দেওয়া হতে পারে
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নিয়ে ভোটের মাঠ গোছানোর কাজ করছে দলগুলো। পাশাপাশি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে বেড়েছে তৎপরতা।
নির্বাচনে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর জন্য ৫০ থেকে ৭০টি আসন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। এক্ষেত্রে মিত্র দলগুলোর প্রার্থীদের এলাকায় জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা দেখবে তারা। তবে ছাড় দেওয়া আসনগুলোতে বিএনপির কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তা মিত্রদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
‘নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে আমাদের অসুবিধা হবে না। তবে যেসব আসনে অবস্থান দুর্বল, সেখানে সংকট তৈরি হতে পারে। বিএনপি সব আসনেই শক্ত অবস্থানে আছে, এটাই বাস্তবতা। দীর্ঘদিন আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছি, নির্যাতন সয়েছি। বিএনপি সব সময়ই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পাশে থাকার।’ -বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ
ছোট ছোট দলের সাংগঠনিক শক্তি তুলনামূলক দুর্বল। তাদের ভরসা অনেকটাই বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের ওপর। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিধান অনুযায়ী, জোটের প্রার্থী হলেও নিজ দলের প্রতীকেই লড়তে হবে। এতে যেমন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের ভোটব্যাংক কাজে লাগানো যাচ্ছে না, তেমনি বিএনপি থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে আমাদের অসুবিধা হবে না। তবে যেসব আসনে অবস্থান দুর্বল, সেখানে সংকট তৈরি হতে পারে। বিএনপি সব আসনেই শক্ত অবস্থানে আছে, এটাই বাস্তবতা। দীর্ঘদিন আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছি, নির্যাতন সয়েছি। বিএনপি সব সময়ই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পাশে থাকার।’
পটুয়াখালী-৩ আসনের প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল মতিন সাউদ বলেন, ‘এ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে সহযোগিতার জন্য বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের চিঠি দিয়েছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, নুর ওই আসনে জোটের প্রার্থী হবেন। তবে একই আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলে তা নুরের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।’
‘আমরা নিজ প্রতীকে নির্বাচন করতে চাই। ইতোমধ্যে প্রচারণা শুরু করেছি। বিএনপির কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে সেটা মোকাবিলা করতে না পারলে সেটি প্রার্থীর নিজস্ব ব্যর্থতা। মূল দলের প্রতীক মানেই আসন নিশ্চিত—এ ধারণা সঠিক নয়।’ -এলডিপির মহাসচিব ড. রেদওয়ান আহমেদ
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জোটের প্রার্থী হলে নিজ দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলবো।’
অন্যদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদওয়ান আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা নিজ প্রতীকে নির্বাচন করতে চাই। ইতোমধ্যে আমরা প্রচারণা শুরু করেছি। বিএনপির কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে সেটা মোকাবিলা করতে না পারলে সেটি প্রার্থীর নিজস্ব ব্যর্থতা। মূল দলের প্রতীক মানেই আসন নিশ্চিত—এ ধারণা সঠিক নয়।’
যেসব আসনে ছাড় দিচ্ছে বিএনপি
বিএনপি প্রাথমিকভাবে এলডিপির জন্য তিনটি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, কুমিল্লা-৭ আসনে ড. রেদওয়ান আহমেদ এবং চট্টগ্রাম-৭ আসনে নুরুল আলম তালুকদারের জন্য ছাড়া হবে।
‘জোটের প্রার্থী হলে নিজ দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলবো।’ –গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন
গণঅধিকার পরিষদকে দুটি আসন দেওয়া হতে পারে। পটুয়াখালী-৩ আসনে নুরুল হক নুর এবং ঝিনাইদহ-২ আসনে রাশেদ খাঁন।
ঢাকা-১৩ আসনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৭ আসনে বিজেপি সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ এবং ঢাকা-৫ আসনে দলটির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদকে মনোনয়নে ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি।
ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোটের পাঁচটি দলের জন্য সাতটি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে—জাতীয় পার্টি (জাফর) দুটি, বাংলাদেশ জাতীয় দল একটি, বাংলাদেশ এলডিপি একটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দুটি এবং ইসলামী ঐক্যজোটকে একটি আসন ছাড় দেওয়ার ভাবনা রয়েছে বিএনপির ভেতর।
‘আমরা যুগপৎ আন্দোলন করেছি, একসঙ্গে কাজ করেছি। সেগুলো বিবেচনা করেই আমাদের প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এজন্য দলের বিভিন্ন নেতাকে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তারা এগুলো দেখছেন। তারপর তালিকা করা হবে।’ -বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান
এদের মধ্যে পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কুষ্টিয়া-২ আসনে মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার জন্য ছাড় দেবে বিএনপি।
বিজ্ঞাপন
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের জন্য একটি আসন ছাড়ার কথা ভাবছে বিএনপি। সেটি নড়াইল-২ আসন, জোটপ্রধান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের জন্য।
গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দলের মধ্যে চার দলকে চারটি আসন দেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে আসম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক এবং জোনায়েদ সাকির নাম রয়েছে। এছাড়া পিরোজপুর-২ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের জন্য ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপির অবস্থান
আসন ছাড়ের ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত না হলেও ছোট দলগুলোর প্রতি বিএনপির ইতিবাচক মনোভাব স্পষ্ট। কারও কারও প্রতিশ্রুতি আছে বিএনপির সঙ্গে থাকার, আবার কেউ এখনো লাভক্ষতির হিসাব কষছেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, আন্দোলনে যুক্ত প্রায় ৫০টি দল আছে। তাদের মধ্যে ভোটে জেতার সম্ভাবনা আছে এমন নেতাদেরই আসন দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে ফের মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করবে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি। তফসিল ঘোষণার পরে আমরা কীভাবে অ্যাডজাস্টমেন্ট (সমন্বয়) করবো সেটা তখন ঠিক করবো।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপি সব সময় নির্বাচনমুখী দল। আমাদের খেয়াল রাখতে হয় কাকে প্রার্থী করা উচিত। এই কাজ চলছে। সময় হলেই চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে।’
বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করা সমমনা দলগুলোর প্রার্থিতা সম্পর্কে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলন করেছি, একসঙ্গে কাজ করেছি। সেগুলো বিবেচনা করেই আমাদের প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এজন্য দলের বিভিন্ন নেতাকে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তারা এগুলো দেখছেন। তারপর তালিকা করা হবে।’