শাপলা প্রতীকের জন্য লড়াই করবে এনসিপি: সারজিস আলম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ১০:৩৮ এএম, ৪ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার

নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, নির্বাচন কমিশন কোনো পক্ষ বা কোনো শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের শাপলা প্রতীক না দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা করছে। যেহেতু আইনগতভাবে শাপলা দিতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, সেহেতু স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা করতে পারে না।
তিনি বলেন, যদি তারা এটা করে, তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে স্বাধীন নির্বাচন হবে কিনা, সে বিষয়ে আমরা আস্থা রাখতে পারব না। যদি এইটুকু চাপ সামলাতে না পারে, তাহলে কীভাবে এই নির্বাচন কমিশন আমাদের একটি ফেয়ার নির্বাচন দিতে পারবে। তাই শাপলা প্রতীক পেতে তারা আইনগতভাবে ও প্রয়োজনে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে বলে জানান তিনি।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত দশটার দিকে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আয়োজিত সব উপজেলার সমন্বয়ক, যুগ্ম সমন্বয়ক ও সংগঠকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াতের সঙ্গে পিআর পদ্ধতিতে দ্বিমত থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য উচ্চকক্ষে পিআর প্রাসঙ্গিক, কিন্তু নিম্নকক্ষে নয়। তাই তাদের সঙ্গে আন্দোলনে নামছে না এনসিপি। তবে জামায়াতের অন্যান্য দাবি যেমন জুলাই সনদ, সংস্কার এবং বিচারের বিষয়ে ঐকমত্য বহাল থাকবে এবং সহযোগিতা থাকবে।
গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি একীভূত হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের একীভূত হওয়ার আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে যদি প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়, তাহলে তা সবার সামনে প্রকাশ করা হবে।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একমত প্রকাশ করে সারজিস বলেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে গেছে, জাতীয় পার্টিকেও একই পথে যেতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারী হতে সহযোগিতা এবং সরকারি দল হওয়ার বৈধতা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। তাই জাতীয় পার্টির রাজনীতি দেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। এতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির ঐকমত্য থাকবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আছেন, তাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলে সারজিস বলেন, ডিসি থেকে এসপি ও ইউএনওসহ যারা নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠ পর্যায়ে থাকবেন, তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তোষামোদ শুরু করেছেন। তারা পেশাদারিত্ব বজায় না রেখে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দলের ডিসি-এসপি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। কোনো নির্দিষ্ট দলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই এখন শুধু আওয়ামী লীগের পরিচয় নয়, যারা অন্যান্য দলের পরিচয় দিয়েছে, তারাও সম্ভাব্য হুমকি।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণপরিষদ নির্বাচন চাওয়া হয়েছে মানে এটি সংসদ নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচন আলাদা হবে, এমন নয়। একটাই নির্বাচন হবে। সংসদের কিছু মানুষ গণপরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করবে এবং পরের ছয় মাস থেকে তারা সংবিধান প্রণয়ন করবে। তাদের উচ্চপক্ষ থেকেও সহায়তা থাকবে। এটাই উত্তম পন্থা। এছাড়া যত পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, সেগুলোতে অনেক বড় ফাঁকফোকর আছে। তাই জুলাই সনদ ওই আইনি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হোক যেটা প্রকৃত কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টাকার জুয়ারি হিসেবে দেখতে চাই না উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের মতো জেলায় যখন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়, তখন এর দায় শুধু স্থানীয় নেতা ফখরুল ইসলামের ওপর নয়, আমাদের ওপরেও পড়ে। তাই আমরা, গণঅভ্যুত্থানের পর প্রশাসনকে শোষক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে দেখতে চাই।
এছাড়াও তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে বলেন, পঞ্চগড়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি এনসিপি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। স্কুল পর্যায়ে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থাকা উচিত। কেউ যদি এ ধরনের প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে সবাইকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মুর্তজা সেলিমসহ জেলার বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।