শুক্রবার   ০৩ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ১৭ ১৪৩২   ১০ রবিউস সানি ১৪৪৭

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা: সহায়তা না সংঘাত?

রাফিউল ইসলাম তালুকদার

প্রকাশিত : ০৬:২৯ পিএম, ১ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার

ভূমধ্যসাগরের ঢেউ ভেঙে এক বহুজাতিক নৌবহর এগিয়ে যাচ্ছে গাজা উপকূলের দিকে। নাম, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। খাদ্য, ওষুধ এবং জরুরি সামগ্রী বহনকারী এই বহরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্বজোড়া আলোচিত পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। মূল উদ্দেশ্য, অবরুদ্ধ গাজার মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু এই অভিযান কেবল মানবিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

 

সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, নৌবহরটি গাজার উপকূল থেকে প্রায় ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০ কিলোমিটার) দূরে রয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা সতর্কভাবে যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। দখলদার ইসরায়েলের হুমকির মুখে তাদের দাবি, এটি কেবল মানবিক সহায়তার মিশন, এর পেছনে কোনো সামরিক বা গোপন উদ্দেশ্য নেই।

 

২০০৭ সাল থেকে গাজা কার্যত ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে রয়েছে। স্থল, আকাশ ও সমুদ্র তিন দিক অবরুদ্ধ  গাজা। এই অবরোধের ফলে, খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি প্রবাহ খুবই  সীমিত হয়ে এসেছে। মারাত্মক আকার ধারণ করেছে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য। এই প্রেক্ষাপটেই প্রতি বছর বিভিন্ন মানবিক বহর গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে, যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন পদক্ষেপ বাধার মুখে পড়ে।

 

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটেছিল ২০১০ সালে। তুরস্ক থেকে যাত্রা করা “মাভি মারমারা” নামের জাহাজ বহরে যোগ দিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে ইসরায়েলি কমান্ডোরা আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটকে দেয় বহরটিকে। এ অভিযানে নিহত হন ৯ মানবাধিকারকর্মী । অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এবারও একই ধরনের হামলার মুখে পড়তে পারে নৌবহরটি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া বেসামরিক জাহাজ আটকানো বৈধ নয় যদি না, অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ থাকে অথবা সরাসরি নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি হয়। ক্রোয়েশিয়ার আইনজীবী মোরানা মিলজানোভিচ এ প্রসঙ্গে বলেন, “মানবিক সহায়তা বহনকারী নৌবহর আটকানো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।” তবে ইসরায়েল বলছে, তাদের নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকলে তারা যেকোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য।

 

গ্রেটা থুনবার্গের সম্পৃক্ততা

পরিবেশ আন্দোলনের প্রতীকী মুখ গ্রেটা থুনবার্গ এই ফ্লোটিলার অন্যতম নেতৃত্বে থাকায় আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আরও তীব্র হয়েছে। তার উপস্থিতি মানবিক সংকটের প্রতি বৈশ্বিক যুবসমাজের সংহতি প্রকাশ করছে।
এটি ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থানকেও জোরালো করছে। আন্তর্জাতিক প্রচারণার ক্ষেত্রে গ্রেটার সম্পৃক্ততা বড় প্রতীকী শক্তি এনে দিয়েছে। এই নৌবহর উপস্থিতি  ইসরায়েলের অবরোধনীতি ও আন্তর্জাতিক চাপ, আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌবহর আটকানোর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বহরটি নিরাপদে গাজায় পৌঁছাতে পারলে এটি মানবাধিকার আন্দোলনের বড় বিজয় হবে। বিপরীতে, ইসরায়েল যদি এটিকে আটকায় বা আক্রমণ করে, তবে তা কেবল নতুন উত্তেজনাই নয়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সমালোচনার পালে হাওয়া দিবে।

 

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা তাই কেবল একটি নৌবহর নয়। এটি হয়ে উঠেছে মানবিক সহায়তার প্রতীক। সামনে নিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক আইন ও নৈতিকতার প্রশ্ন। রচিত করছে, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির কূটনীতির নতুন অধ্যায়।
 

এখন সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ একটি প্রশ্নে, গাজার তীরে পৌঁছাতে পারবে কি গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা, নাকি ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হবে নতুন সংঘাতের রূপে?