রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন: প্রধান উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ১০:৫৬ এএম, ১ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, এর সমাধানও সেখানে— মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং দ্রুত তাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে। “এটাই সংকটের একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের বৃহত্তর সংস্কারের অজুহাতে এটি আর বিলম্বিত করা উচিত নয়,” বলেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাত দফা পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গণহত্যা শুরু হওয়ার আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা কমেনি, বরং উদ্যোগের ঘাটতি ও আন্তর্জাতিক অর্থায়নের ভয়াবহ ঘাটতি পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। অর্থায়ন হ্রাস পাওয়ায় এখন প্রত্যাবাসনই একমাত্র কার্যকর ও স্থায়ী সমাধান বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক চাপের কথাও তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় দেশের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও সামাজিক কাঠামো হুমকির মুখে পড়ছে। মাদক প্রবাহ ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধও বাড়ছে।
সংকট সমাধানে তিনি সাত দফা প্রস্তাব দেন—
১. রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের রোডম্যাপ প্রণয়ন।
২. রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি।
৩. সম্প্রতি বাংলাদেশে আসা ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া।
৪. রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত।
৫. রাখাইন সমাজে রোহিঙ্গাদের টেকসই সংহতকরণে আস্থা তৈরির পদক্ষেপ।
৬. যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার পূর্ণ তহবিল নিশ্চিত করতে দাতাদের সহায়তা।
৭. জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার, মাদক অর্থনীতি ধ্বংস এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন।
অধ্যাপক ইউনূস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার জন্য বিশ্ব আর অপেক্ষা করতে পারবে না। আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করার শপথ নিই। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”
সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা।
