এক প্রতিষ্ঠানের দুই আইডি, প্রান আরএফএল এর অনিয়ম-দূর্নীতি
তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট
প্রকাশিত : ০৮:২৯ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সোমবার

সরকারি প্রকল্পে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং একই প্রতিষ্ঠানের অদৃশ্য প্রভাব বিস্তার, প্রতিযোগিতার নামে একচেটিয়া দখল নীতিমালা ও বাস্তবতার ফাঁক-ফোকড় ব্যবহার করে এক প্রতিষ্ঠানের দ্বিমুখী জয়যাত্রা, ‘টেন্ডারের আড়ালে প্রাণ-আরএফএলের দ্বিমুখী সম্রাজ্য’ সরকারি প্রকল্পে কীভাবে জন্ম নিল প্রতিযোগিতার ভেতরে লুকানো একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়- নিয়মের ফাঁক ব্যবহার করে জয় নিশ্চিত করার লুকানো কৌশল, বছরের পর বছর ধরে সরকারি প্রকল্পে আধিপত্য একই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ-কীভাবে হারিয়ে যায় সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা।
প্রাণ-আরএফএলের দ্বিমুখী কৌশল টেন্ডার বাজারের অন্তরালে যা : দেশে অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এই স্বনামধন্য গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান Rangpur Metal Industries Limited এবং Rangpur Metal Industries Ltd.।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারী এবং বিভিন্ন পর্যায়ে লিফট সরবরাহের কাজ করা হয় এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তবে এখানে ভ্যাট ফাঁকি দিতে সুক্ষ কারচুপির আশ্রয় নিয়েছেন দেশের বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি। সাদা চোখে দেখলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনে সাধারণত Limited এবং LTD. ব্যবহার করে। তবে এক্ষেত্রে প্রাণ-আরএফএল একটি কোম্পানির অনুমোদন নিয়ে LIMITED এবং LTD. নাম দিয়ে আলাদা দুটি আইডি ব্যবহার করে। তবে দুইটি আইডিতে কাজ করলেও প্রতিষ্ঠানটি একটি আইডির কাজের অনুপাতে ভ্যাট জমা দেয়।
দীর্ঘ বছর ধরে অভিনব এ জালিয়াতি করে আসলেও সম্প্রতি গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি ঠিকাদারী কাজে ধরা পড়ে বিষয়টি।
নথিপত্র বলছে, Rangpur Metal Industries Limited এবং Rangpur Metal Industries Ltd. এই দুইটি নামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে কাজ করছে। কোম্পানিটি গত ১০ বছরে প্রায় ২০৫টি কাজ করেছে। টাকার অংকে যা হাজার কোটি টাকার বেশি।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, Rangpur Metal Industries Limited এর নামে হলেও দরপত্রে (টেন্ডার আইডি-১০৬৩৬৯৯) ভ্যাট সনদটি Rangpur Metal Industries Ltd. নামে দাখিল করে। কারণ Rangpur Metal Industries Ltd. কাজ করেছে ৭৭০ কোটি টাকার আর Rangpur Metal Industries Limited কাজ করেছে ২৮০ কোটি টাকা।
তাই কম কাজ করা Rangpur Metal Industries Limited এর (আইডি-১০৬৩৬৯৯) ভ্যাট সনদটি কৌশলে দরপত্রে দাখিল করে Rangpur Metal Industries Ltd. যাতে করে কম কাজ ও টাকা দেখিয়ে সরকারের ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকি দিতে পারে।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা, রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি.। এই নামের দুইটি আইডিতে বিভিন্ন জায়গায় ভিন্নভিন্ন নামে কাজ পেলেও শুধু রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি, এর নামে বিন সার্টিফিকেট (০০১২৫১২৫১০৩০৩) আছে। এছাড়া আরেকটি বিন সার্টিফিকেট (০০০৬৩৭৭৮২০৩০৩) আছে একই প্রতিষ্ঠানের নামে তবে সেখানে আরএফএল রিগাল উল্লেখ করা হয়েছে। রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে কোনো বিন সার্টিফিকেট দেখা যায়নি। যার কারণে কোটি কোটি টাকা ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
এক প্রকৌশলী দৈনিক তরুণ কণ্ঠ প্রতিবেদককে জানান, একই প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে দরপত্র দাখিল করে ২০৫টি কাজ প্রাপ্তির মাধ্যমে ই-জিপি নির্দেশিকা, পিপিআর ২০০৮, আইটিটি, জিসিসি এবং সরকারি টেন্ডার নীতিমালা লঙ্ঘণ। রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি, নামের সামান্য পার্থক্য থাকলেও, উভয় প্রতিষ্ঠান একই বিন।
পরিচালক, অফিস ঠিকানা ও উৎপাদন কাঠামো ব্যবহার করে সরকারি ই-জিপি প্ল্যাটফর্মে আলাদা আলাদা রেজিস্ট্রেশন করে আসছে। এর ফলে তারা একই দরপত্রে নামে-বেনামে অংশগ্রহণ করা মানে অসৎ উপায়। একই বিন দিয়ে দুইটি অ্যাকাউন্ট খোলা বা মিথ্যা নিবন্ধন করলে তা বাতিলযোগ্য ও শাস্তিযোগ্য। কারণ সরকারের ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকির উদ্দেশ্য এসব করা হয়ে থাকে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ধারা ২০০৮ অনুসারে-একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে একাধিক দরপত্র দাখিল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
এবং এই ধরনের অনিয়ম ও প্রতারণা প্রমাণিত হলে দরপত্র বাতিল করার পাশিপাশি কোম্পানীটি কালো তালিকাভুক্তি, ক্ষতিপূরণ দাবি আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে।
অভিযোগ আছে, ২০১৬ সাল থেকে ই-জিপি সিস্টেমে একই কোম্পানী ২টি আইডি ব্যবহার করে দরপত্র দাখিল করছে এবং ওয়ার্ক অর্ডার পাচ্ছে। রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি। এরমধ্যে রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড মোট ২৮০ কোটি এবং রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি, (ই-জিপি তথ্যানুসারে) ৭৭০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে।
কিন্তু কোম্পানীর ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) অডিটিং ফার্ম তথ্যমতে শুধুমাত্র রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। যা সরকারের ভ্যাট বা ট্যাক্স বৃদ্ধি বা কম দেখানোর চেষ্টা করার জন্যই এই কৌশল প্রয়োগ করছে কোম্পানিটি।
২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ২০৫টি কাছে তথ্য বিভিন্ন গনমাধ্যমের হাতে এসছে। সরকারের নথি তথ্য বলছে, এরমধ্যে শেষ ছয় মাসে ৪১টি কাজ, গত বছর ৩২টি, ২৩ সালে ২৮টি, ২২ সালে ৩৯টি, ২১ সালে ১৯ টি, ২০ সালে ১৭টি, ১৯ সালে ১৪টি, ১৮ সালে ১২টি, ১৭ সালে ২টি ও ২০১৬ সালে ১টি কাজ করে কোম্পানীটি। ২০৫টি কাজের মধ্যে রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গত বছরে ৯৩টি কাজ করেছে অপরদিকে, রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি ১১২টি কাজ। মূলত কোম্পানীটি কাজ চালু করে রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নাম দিয়ে। এর এক বছর পর রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি কাজ শুরু করে এবং ২০১৮ সালে প্রথম একসঙ্গে রংপুর জোনের তিনটি কাজ নেয় আওযামী লীগের এক নেতার সুপারিশে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ঢাকা ওয়াশা, পাওয়ার ডিস্টিভিউশন কোম্পানি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন অধিদপ্তরে কাজ করেছে কোম্পানীটি। এছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পে লিফটের কাজ করেছে। এখনো বেশ কিছু অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় কাজের চুক্তি রয়েছে।
অভিযোগ আছে, এই কোম্পানী দুইটি প্রকৌশলীর সঙ্গে সখ্যতা করে একচেটিয়া কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছে। প্রতিটা কাজে কর্মকর্তাদের কমিশন ও বিদেশ ভ্রমনের মতো সুযোগ দেয় কোম্পানীটি। নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় অধিকাংশ কাজেই দরপত্র বলে দেন প্রকৌশলীরা। যার কারণে কোম্পানিটি কোনো কাজে টেন্ডার অংশগ্রহণ করে কাজ পেয়ে যায়। কৌশলে কোম্পানীটি দুইটি নামে কাজ করে ভ্যাট-টেক্স ফাঁকি দেয়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথোরিটি (বিপিপিএ) এর বরাবর চিঠি দিয়ে রিভিউ প্যানেলের প্রতিদৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি চিঠি দেন। ঠিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি একই কোম্পানী ২টি আইডি বাবহার করে দীর্ঘদিন ধরে (২০১৬ সাল থেকে) দরপত্র দাখিল করছে এবং ওয়ার্ক অর্ডার ইস্যু করছে। ই-জিপি সিস্টেমে একটা কোম্পানী একটি ট্যাক্স ও ভ্যাট দিয়ে শুধু মাত্র একটি অ্যাকাউন্ট, রেজিস্ট্রেশন করতে পারে।
যেহেতু ২টি অ্যাকাউন্ট, তাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, এখানে জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে।
রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দিয়ে মোট ২৮০কোটি এবং রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি, দিয়ে ৭৭০ কোটি (ই-জিপি তথ্যনুসারে) টাকার প্রজেক্ট পেয়েছে। কিন্তু কোম্পানীর ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) এর অডিটিং ফর্ম তথ্যমতে শুধুমাত্র রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর তথ্য আছে। যা সরকারের ভ্যাট বা ট্যাক্স বৃদ্ধি বা কম দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দরপত্র টেন্ডার আইডি-১০৬০৬৯৯ এর ভ্যাট সনদটি রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি। কিন্তু দরপত্র দাখিল করে রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দিয়ে।
কোম্পানীর পিপিআর ২০০৮ এর ১২৭ অনুসারে প্রতারণার সুযোগ নিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার ফাইসাল আলাম বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত Limited ও Ltd. একইভাবে ব্যবহার হয়। যদি কোনো কোম্পানি ষরসরঃবফ ও ওঃফ ব্যবহার দুইটি কোম্পানি করে তাহলে এটা রেজিস্টার আর জয়েন্টস্টোক অফ কোম্পানি এন্ড ফার্ম (আরজিসি) অপরাধ। আরজিসি এভাবে কোনো নাম অনুমোদন দেয়ার কথা না। তারপরও যদি করে তাহলে ধরে নিতে হবে আরজিসি ম্যানেজ করেই করছে।
একই নাম দিয়ে দুইটি কোম্পানী চালানো সম্ভব না, এসব ক্ষেত্রে কোম্পানীর অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এই ধরনের কাজ কোনো কোম্পানী করে থাকে তাহলে জালিয়াতি করছে। কোম্পানীর নিবন্ধন বাতিল থেকে শুরু করে জেল-জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
ইজিপি এক্সপার্ট গোলাম সারোয়ার সুমন বলেন “একটি কোম্পানির নামে শুধুমাত্র একটি e-GP Registration ID বৈধ। একই কোম্পানির নামে একাধিক IDতৈরি করাটা PPR (Public Procurement Rules) এবং CTPU-এর গাইডলাইনের পরিপন্থী।
এটি সিস্টেমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ঘটাতে পারে। ফলে, ডুপ্লিকেট বা একাধিক ID থাকলে CPTU যেকোনো সময় সেগুলো বাতিল করতে পারে বা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।”
১. Transparency ও Accountability বজায় রাখার জন্য e-Gp সিস্টেম একটি ইউনিক রেজিস্ট্রেশন আইডি-র মাধ্যমে প্রতিটি কোম্পানীকে সনাক্ত করে।
২. একাধিক আইডি থাকলে তা Collusion বা Fraudulent Practice এর সন্দেহ তৈরি করতে পারে।
৩. CPTU এবং PPR ২০০৮ অনুযায়ী, এই ধরনের অনিয়মে Blacklist বা Suspension এর মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথোরিটি (বিপিপিএ) এর বরাবর চিঠি দিয়ে রিভিউ প্যানেলের প্রতিদৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি চিঠি দেন। ঠিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি একই কোম্পানী ২টি আইডি বাবহার করে দীর্ঘদিন ধরে (২০১৬ সাল থেকে) দরপত্র দাখিল করছে এবং ওয়ার্ক অর্ডার ইস্যু করছে। ই-জিপি সিস্টেমে একটা কোম্পানী একটি ট্যাক্স ও ভ্যাট দিয়ে শুধু মাত্র একটি অ্যাকাউন্ট, রেজিস্ট্রেশন করতে পারে।
যেহেতু ২টি অ্যাকাউন্ট, তাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, এখানে জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে।
রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দিয়ে মোট ২৮০কোটি এবং রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি, দিয়ে ৭৭০ কোটি (ই-জিপি তথ্যনুসারে) টাকার প্রজেক্ট পেয়েছে। কিন্তু কোম্পানীর ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) এর অডিটিং ফর্ম তথ্যমতে শুধুমাত্র রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর তথ্য আছে। যা সরকারের ভ্যাট বা ট্যাক্স বৃদ্ধি বা কম দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দরপত্র টেন্ডার আইডি-১০৬০৬৯৯ এর ভ্যাট সনদটি রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি। কিন্তু দরপত্র দাখিল করে রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দিয়ে। কোম্পানীর পিপিআর ২০০৮ এর ১২৭ অনুসারে প্রতারণার সুযোগ নিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার ফাইসাল আলাম বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত Limited ও Ltd. একইভাবে ব্যবহার হয়। যদি কোনো কোম্পানি ষরসরঃবফ ও ওঃফ ব্যবহার দুইটি কোম্পানি করে তাহলে এটা রেজিস্টার আর জয়েন্টস্টোক অফ কোম্পানি এন্ড ফার্ম (আরজিসি) অপরাধ। আরজিসি এভাবে কোনো নাম অনুমোদন দেয়ার কথা না। তারপরও যদি করে তাহলে ধরে নিতে হবে আরজিসি ম্যানেজ করেই করছে। একই নাম দিয়ে দুইটি কোম্পানী চালানো সম্ভব না, এসব ক্ষেত্রে কোম্পানীর অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এই ধরনের কাজ কোনো কোম্পানী করে থাকে তাহলে জালিয়াতি করছে।
কোম্পানীর নিবন্ধন বাতিল থেকে শুরু করে জেল-জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
ইজিপি এক্সপার্ট গোলাম সারোয়ার সুমন বলেন “একটি কোম্পানির নামে শুধুমাত্র একটি e-GP Registration ID বৈধ।
একই কোম্পানির নামে একাধিক IDতৈরি করাটা PPR (Public Procurement Rules) এবং CTPU-এর গাইডলাইনের পরিপন্থী। এটি সিস্টেমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ঘটাতে পারে। ফলে, ডুপ্লিকেট বা একাধিক ID থাকলে CPTU যেকোনো সময় সেগুলো বাতিল করতে পারে বা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।”
১. Transparency ও Accountability বজায় রাখার জন্য e-Gp সিস্টেম একটি ইউনিক রেজিস্ট্রেশন আইডি-র মাধ্যমে প্রতিটি কোম্পানীকে সনাক্ত করে।
২. একাধিক আইডি থাকলে তা Collusion বা Fraudulent Practice এর সন্দেহ তৈরি করতে পারে।
৩. CPTU এবং PPR ২০০৮ অনুযায়ী, এই ধরনের অনিয়মে Blacklist বা Suspension এর মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স কেটে রাখা হয়। তাই ফাকি দেয়ার সুযোগ নেই। তারপর যদি ভ্যাট-ট্যাক্স ফাকি দেওয়ার প্রমাণ মেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক প্রকৌশলীরা জানান, রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ এলটিডি, এই দুইটি নামে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে কোম্পানি। ভ্যাট-ট্যাক্স ফাকি দেয়ার বিষয়ে আমার
কাছে তথ্য চেয়েছে তা আমরা পাঠিয়েছি।
সাধারণ ঠিকাদাররা বলেন-সরকারি টেন্ডারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে শুধু প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করলে হবে না; দরকার মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো যাচাইয়ের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা। এক মালিকানাধীন একাধিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বন্ধে কঠোর নিয়ম ও প্রয়োগ জরুরি-না হলে e-Gp ’র স্বচ্ছতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচিত বিষয়টি তদন্ত করে নিয়মের আলোকে পর্যালোচনা ও ব্যবস্থা নেয়া।