বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ডাটা ট্রানজিট চায় স্টারলিংক
রাফিউল ইসলাম তালুকদার
প্রকাশিত : ০১:৩৬ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রোববার

বাংলাদেশে স্থানীয় গেটওয়ে স্থাপন করার পর এবার দেশকে আন্তর্জাতিক ডাটা ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। এই লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের আবেদন করেছে।
১৩ আগস্ট বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন ডিভিশনের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্টারলিংক জানায়, তারা বাংলাদেশে স্থাপিত পপ (পয়েন্ট অব প্রেজেন্স) থেকে সিঙ্গাপুর ও ওমানের পপে আন্তর্জাতিক ব্যাকহল সংযোগ চালু করতে চায়। এজন্য অনুমোদিত দেশীয় আইটিসি প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) এবং আনফিল্টারড আইপি কিনে ব্যবহার করবে। তবে এই আনফিল্টারড আইপি বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের জন্য নয়, কেবল বিদেশি গ্রাহকদের সেবা দিতেই ব্যবহার হবে।
স্টারলিংক জানায়, তাদের প্রতিটি আন্তর্জাতিক পপ অন্তত দুই বা ততোধিক পপের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যাতে নেটওয়ার্ক রেজিলিয়েন্সি ও রিডান্ডেন্সি বজায় থাকে। প্রতিষ্ঠানটি ফাইবার অ্যাট হোম, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি (বিএসসিসিএল) ও সামিট থেকে প্রয়োজনীয় আইপিএলসি ও আনফিল্টারড আইপি সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে।
তবে বিটিআরসি সূত্র বলছে, স্টারলিংকের দাবি পুরোপুরি সঠিক নয়। প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো অনুমোদন এখনো দেওয়া হয়নি। আইপিএলসি গাইডলাইন অনুযায়ী এ ধরনের ট্রাফিক পরিবহনের সুযোগ নেই বলেও মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
স্টারলিংকের প্রস্তাব ঘিরে প্রযুক্তি খাতের ভেতরে দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হলে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে, আনফিল্টারড আইপি ব্যবহারের কারণে ডাটা মনিটরিং ও আইনগত ইন্টারসেপশন কঠিন হয়ে পড়তে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।
দেশীয় অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে আনফিল্টারড আইপি ব্যবহার স্বাভাবিক এবং এতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হবে। তবে এতে কিছু ট্রাফিক সাইবার নিরাপত্তার বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে, যা ভবিষ্যতে নজরদারি দুর্বল করে দিতে পারে।
বিটিআরসির মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন ডিভিশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ জানিয়েছেন, আবেদনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দেশের স্বার্থ ও বিদ্যমান গাইডলাইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তবে গাইডলাইনের বাইরে গিয়ে অনুমোদনের সুযোগ নেই।
স্টারলিংক ইতোমধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী ও যশোরে চারটি স্থানীয় গেটওয়ে স্থাপন করেছে। তবে সেগুলো পুরোপুরি কার্যকর কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি বিটিআরসি। এর আগে সংস্থাটি ষ্টারলিংক-কে তিন মাসের জন্য গেটওয়ে ছাড়া কার্যক্রম চালানোর অস্থায়ী ছাড় দিয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হয় ৭ আগস্ট।