‘পঞ্চাশে পৌঁছালে মনে হয়, আর সময় নষ্ট করার সময় নেই’
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত : ০১:০৩ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রোববার

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ‘ওয়ান ব্যাটল আফটার অ্যানাদার’ বানিয়েছেন অস্কারজয়ী নির্মাতা পল টমাস অ্যান্ডারসন। ছবিতে সন্দেহপ্রবণ সাবেক বিপ্লবী ববের চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। হঠাৎই মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পুরোনো সঙ্গীদের সঙ্গে আবার তাঁর দেখা হয়, মুখোমুখি হতে হয় বহু বছরের শত্রুর। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবে। বহুল প্রতীক্ষিত ছবিটি মুক্তির আগে এই সিনেমা, ক্যারিয়ার-ভাবনাসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন ডিক্যাপ্রিও।
সমাজের বিভাজন প্রতিফলিত
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিনেমাটিকে ‘সমাজের আয়না’ বলে অভিহিত করেছেন ডিক্যাপ্রিও। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমাদের সংস্কৃতির বিভাজন আর চরম মেরুকরণকে দেখায় এই সিনেমা। যদিও ছবির নির্দিষ্ট কোনো বার্তা নেই, তবে চরমপন্থার একধরনের প্রভাব এখানে কাজ করেছে।’ সিনেমাটি নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক সিনেমা অবশ্যই; কিন্তু এখানে কোনো বক্তৃতা নেই। যা কিছু বলার সব বিনোদনের মোড়কেই বলা হয়েছে।’
ছবিতে বেনিসিও দেল তোরো অভিনয় করেছেন সার্জিও চরিত্রে—যিনি একজন মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক; ববকে বিপদের সময় সাহায্য করেন। দেল তোরো বলেন, ‘এটা সময়ের কথা বলে, আবার একই সঙ্গে বিনোদন দেয়, মজা দেয় আর আবেগও ছুঁয়ে যায়।’ ডিক্যাপ্রিওর সঙ্গে কাজ করতে পেরে তিনি উচ্ছ্বসিত, ‘আমরা দুজন যেন একই ব্যাচের ছাত্র। এত দিন পরে একসঙ্গে কাজ করতে পারা স্বপ্নপূরণের মতো।’
সমালোচকদের প্রশংসা
গত সেপ্টেম্বরে সীমিত পরিসরে সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। এতে রাজনৈতিক ব্যঙ্গ, ব্ল্যাক কমেডি ও অ্যাকশনের মিশ্রণের প্রশংসা করেছেন সমালোচকেরা। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইনডিপেনডেন্ট বলেছে, ‘এটা মাস্টারপিস।’ দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, ‘এই সিনেমা অসন্তোষ, প্রতিবাদ আর সমাজের বাইরে থাকা একাকী নায়কের গল্প—যা আজকের আমেরিকায় খুব কম দেখা যায়।’ দ্য টেলিগ্রাফ শন পেন ও ডিক্যাপ্রিওর অভিনয়ের প্রশংসা করেছে, ডিক্যাপ্রিওকে তরুণ জ্যাক নিকলসনের সঙ্গে তুলনা করেছে। ছবিটিকে ‘ডিক্যাপ্রিওর ক্যারিয়ারের সেরা কাজগুলোর একটি’ বলেছে দ্য টাইমস, একই সঙ্গে দৈনিকটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ‘অস্কারের দৌড়ে নিশ্চিতভাবেই থাকবে এই সিনেমা।’
অ্যান্ডারসনের উচ্চাভিলাষী কাজ
১৭৫ মিলিয়ন ডলারের বাজেটে নির্মিত ছবিটিকে অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বলা হচ্ছে। ডিক্যাপ্রিও বলেন, ‘অ্যান্ডারসন সব সময় দারুণ ছবি বানান, তবে এবার যেন নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন।’ অ্যান্ডারসনের ‘ফ্যান্টম থ্রেড ও দেয়ার উইল বি ব্লাড’ আগেই অস্কার জিতেছে। নতুন ছবিটি নিয়েও চলছে একই প্রত্যাশা।
নির্মাতার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ডিক্যাপ্রিও আরও বলেন, ‘প্রথমবার “বুগি নাইটস” দেখে তাঁর ভক্ত হয়ে যাই। তাঁর সিনেমাগুলো মাথায় ঘুরে বেড়ায়, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আলোচনা হয়, টিকে থাকে।’
পঞ্চাশ পেরিয়ে নিজের জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবছেন এই তারকা। তিনি বলেন, ‘অ্যাওয়ার্ড, বক্স অফিস—এসব আসে যায়। কিন্তু যে সিনেমা মনে থেকে যায়, যেগুলো নিয়ে বছরের পর বছর প্রশ্ন করা যায়, আলোচনা করা যায়—ওগুলোই আসল শিল্প। পঞ্চাশে পৌঁছালে মনে হয়, সময় নষ্ট করার সময় আর নেই। এখন আরও সৎ হতে হবে।’
নতুন কাজ
মার্টিন স্করসেজির নতুন ছবি হোয়াট হ্যাপেনস অ্যাট নাইট-এ এবার জেনিফার লরেন্সকে সঙ্গে নিয়ে আসছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। এক মার্কিন দম্পতিকে ঘিরে ছবির গল্প। তুষারাবৃত এক অচেনা ইউরোপীয় শহরে সন্তান দত্তক নিতে যায় তারা। স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের ভেতরেই তারা পৌঁছে যায় এক রহস্যময় হোটেলে। সেখানে থাকে অদ্ভুত সব চরিত্র—বৃদ্ধ গায়িকা, লম্পট ব্যবসায়ী। তাদের যাত্রাকে আরও জটিল করে তোলে তারা। সন্তান পাওয়ার সংগ্রামে দম্পতি যতটা এগোয়, ততই নিজেদের সম্পর্ক ও জীবনের প্রশ্নে তারা দিশাহারা হয়ে পড়ে।
ডিক্যাপ্রিওর সঙ্গে দুই দশকে ছয়টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন স্করসেজি; তবে লরেন্সকে তাঁর সিনেমায় এবারই প্রথম দেখা যাবে। তবে অন্য পরিচালকের ডোন্ট লুক আপ-এ একসঙ্গে কাজ করেছেন ডিক্যাপ্রি ও লরেন্স।