বুধবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ২ ১৪৩২   ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসন: ইসরায়েল একঘরে, ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৫:২৩ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার

গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসন, একঘরে হয়ে পড়ছে ইসরায়েল

গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসন চালিয়ে ইসরায়েল আরও একঘরে হয়ে পড়ছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে গাজা শহরে বিতর্কিত স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা (আইডিএফ)। পরদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “ইসরায়েল একটি সিদ্ধান্তমূলক মুহূর্তে রয়েছে।”

বিমান হামলা ও কামানের গোলার আড়ালে ইসরায়েলি বাহিনীর দুটি ডিভিশন শহরের কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোর দিকে অগ্রসর হয়। আরও দুটি ডিভিশন রিজার্ভে রাখা হয়েছে। সেনারা শহরের উপকণ্ঠে অবস্থান করছে, তারা তিনদিক থেকে গাজা শহরকে ঘিরে রেখেছে। বেসামরিক নাগরিকদের দক্ষিণে পালানোর জন্য পশ্চিম দিকের উপকূলীয় সড়ক খোলা রাখা হয়েছে।

নাগরিকদের দুর্ভোগ

তবে অধিকাংশ বাসিন্দা সরে যাচ্ছেন না। আনুমানিক দুই থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষ শহর ছাড়লেও প্রায় ছয় লাখ রয়ে গেছে। বহু পরিবার একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। নিরাপদে দক্ষিণে যেতে পরিবহন ব্যয় ও তাঁবুর অস্বাভাবিক দাম বহন করা তাদের পক্ষে অসম্ভব। ফলে ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মধ্যেও অনেকে গাজা শহরেই অবস্থান করছেন।

এ দৃশ্য অনেকটা যুদ্ধের শুরুতে হওয়া প্রথম বড় আক্রমণের পুনরাবৃত্তি। তখনও ইসরায়েলি বাহিনী গাজা শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল এবং নেতারা হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রায় দুই বছরে অন্তত ৬৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, বহু এলাকায় মানুষ অনাহারে ভুগছে।

ইসরায়েলে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব

ইসরায়েলের ভেতরেও যুদ্ধবিরোধী মনোভাব তীব্র। ২২ মাস আগে গাজায় হামলার সময় জনসমর্থন ছিল সর্বসম্মত। বর্তমানে জরিপ বলছে, ইসরায়েলিদের ৭০ শতাংশ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া নয়, বরং যুদ্ধবিরতির পক্ষে। সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইইয়াল জামিরও মনে করেন, হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব নয়, দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ে জিম্মিদের জীবনও বিপন্ন হবে।

ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, গাজা শহরে হামলা চলার সময় কিছু জিম্মিকে মানবঢাল হিসেবে কেন্দ্রীয় এলাকায় সরিয়ে আনা হয়েছে। অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে জিম্মিদের স্বজনরা বিক্ষোভ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপ মানে সন্তানদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া।

আন্তর্জাতিক চাপ

ইসরায়েলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সামরিক কর্তাদের মধ্যে মতপার্থক্য নতুন নয়। নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর, কারণ তার টিকে থাকা নির্ভর করছে অতিদক্ষিণপন্থি মিত্রদের সমর্থনের ওপর।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ প্যানেল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ শিগগির ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বিবেচনার হুমকি দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে লিখেছেন, “সব বাজি শেষ—অবিলম্বে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।” তবে কূটনৈতিক মহলে ধারণা, অভিযানও যদি হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল করতে না পারে, তাহলে ওয়াশিংটন যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দেবে।

সব মিলিয়ে, গাজা শহরে নতুন আক্রমণ ইসরায়েলের জন্য বিজয় নয়, বরং আরও রক্তপাত, ফিলিস্তিনিদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীরতর একাকিত্ব বয়ে আনবে।