চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ-দালালদের দৌরাত্ম্যে বিপর্যস্ত ঢাকা মেডিকেল কল
তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট
প্রকাশিত : ০৬:৩২ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল বর্তমানে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও দালালদের দৃঢ় দখলে। চিকিৎসা সেবার পরিবর্তে রোগী ও চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত ভয়, হয়রানি ও অনিয়মের শিকার হচ্ছেন। ফলে দেশের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতালটি রূপ নিয়েছে প্রভাবশালীদের অবৈধ আখড়ায়।
চাঁদাবাজি: চিকিৎসকদের বাধ্যতামূলক মাসিক চাঁদা
অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি-সমর্থিত কিছু সাবেক ছাত্রনেতা চিকিৎসকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসিক চাঁদা আদায় করেন। চিকিৎসকরা জানান, মেডিকেল অফিসারদের মাসে এক হাজার এবং আবাসিক চিকিৎসকদের দেড় হাজার টাকা বাধ্যতামূলক দিতে হয়। নির্ধারিত সময়ে টাকা না দিলে হুমকি, অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।
টেন্ডারবাজির কালো রাজত্ব
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সাবেক ছাত্রনেতারা প্রকাশ্যে হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করে টেন্ডার তদবির করেন। ই-জিপি সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করা হয়। পরিচালক অসম্মত হলে হোয়াটসঅ্যাপে সরাসরি হুমকি দেওয়া হয়।
ডায়াগনস্টিক সিন্ডিকেট: জোর করে রোগী পাঠানো
‘প্রাইম টিজি’সহ কয়েকটি প্রভাবশালী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এজেন্টরা হাসপাতালে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। অভিযোগ আছে, এজেন্টরা প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লিনিকের লোকজনকে মারধর করেন, চিকিৎসকদের ভয় দেখান এবং রোগীদের জোর করে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিকে পাঠান। এতে রোগীদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হয়।
দালালদের দৌরাত্ম্য
হাসপাতালের গাইনি ও জরুরি বিভাগ পরিণত হয়েছে দালালদের প্রধান আস্তানায়। অন্তত ১৯ জন সক্রিয় দালালের নাম গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসেছে, যারা রোগী ভাগিয়ে নেওয়া, অতিরিক্ত ফি আদায়, কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং রাজনৈতিক পরিচয়ে আধিপত্য বিস্তারের মতো কাজে জড়িত।
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা
অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ সব জানলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও হাসপাতালে প্রবেশে অনীহা দেখায়। ফলে চক্রগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, আর চিকিৎসক ও কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
করণীয় ও সুপারিশ
গোয়েন্দা সংস্থা সুপারিশ করেছে—
-
সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা
-
সক্রিয় দালালদের তালিকা প্রকাশ ও গ্রেফতার
-
রাজনৈতিক পরিচয়ে জড়িতদের সাংগঠনিক ব্যবস্থার আওতায় আনা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্র। অথচ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দালালি এটিকে রূপ দিয়েছে দুর্নীতির অভয়ারণ্যে। সাধারণ মানুষ যেখানে চিকিৎসার আশায় ছুটে আসেন, সেখানেই তারা পড়ছেন প্রতারণা ও হয়রানির জালে। এখনই শক্ত পদক্ষেপ না নিলে স্বাস্থ্যসেবার এই দুর্গ ধ্বংসের মুখে পড়বে।