মালয়েশিয়া যেতে না পারা বাংলাদেশি শ্রমিকদের ফের পাঠানোর শঙ্কা
প্রকাশিত : ০২:৫৪ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার

গত বছর মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৭ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের মধ্যে প্রথম ধাপে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৮ হাজার জনকে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ এখনও নিয়োগদাতা থেকে চাহিদাপত্র পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগ্রহীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মালয়েশিয়া জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৭ হাজার ৮৬৯ জনকে নির্মাণ ও পর্যটনখাতে নেওয়া হবে। তারা যাবেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এর মাধ্যমে।
কর্মী প্রক্রিয়া শুরু
বোয়েসেল সূত্রে জানা গেছে, কর্মীদের পাঠানোর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সবাইকে মোবাইল ফোনে বার্তা ও কল করা হয়েছে। আগ্রহীদের পাসপোর্টের কপি ও সিআইডিবি নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে বোয়েসেলে ইমেইল করতে বলা হয়েছে। এরপর সিআইডিবি প্রশিক্ষণ ও সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কর্মীদের চূড়ান্ত করা হবে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদাপত্র এখনো আসেনি। ফলে চাহিদাপত্র পাওয়া, প্রশিক্ষণ ও সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ফ্লাইটসহ নানা প্রক্রিয়া আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাধারণত মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো কর্মী নিয়োগের বিনিময়ে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে নির্ধারিত পরিমাণে অর্থ পান। বর্তমানে সরকারি এজেন্সি বোয়েসেল থেকে অর্থ না পাওয়ায় এজেন্সিগুলো লোক নিতে গড়িমসি করছে। এছাড়া দুই দেশের অসাধু লোকজনের সিন্ডিকেটও উদ্বেগের কারণ।
বাড়তি খরচ ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা
কর্মীরা জানিয়েছেন, গত বছর যারা যেতে পারেননি, এবার শুধু বিমান ভাড়া দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব মিলিয়ে খরচ বেড়ে এখন ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এটি তাদের জন্য বড় সমস্যা।
বোয়েসেলের দেওয়া নতুন খরচ কাঠামো অনুযায়ী, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি ৬,৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ১০,০০০ টাকা হয়েছে। সার্ভিস চার্জ ৩৭,৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫,০০০ টাকা। এছাড়া সিআইডিবি প্রশিক্ষণ ফি ২২,৫০০ টাকা এবং সাক্ষাৎকার ফি ১০,০০০ টাকা। বিমানভাড়া ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫,০০০ টাকা, যা আরও বাড়তে পারে।
প্রবাসী শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা
পটুয়াখালীর রাব্বি হোসেন গত বছর সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ করেও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। এবার তিনি প্রাথমিক তালিকায় রয়েছেন। তিনি বলেছেন, “দালালরা আমাকে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। বাকিটা দেয়নি। এখন আবার যেতে চাই, সরকারের উচিত ছিল বিনা খরচে আমাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা।”
তিনি আরও বলেছেন, “প্রথমে শুধু বিমান ভাড়া দিয়ে যেতে পারব শুনেছি, কিন্তু এখন খরচ ১ লাখ ৬২ হাজার। যত কষ্ট করেই হোক, এই টাকা জোগাড় করতে হবে। গতবার অনেককে যেতে দেয়া হয়নি, অনেকে অন্যান্য দেশে চলে গেছেন।”
বোয়েসেলের মন্তব্য
নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. শওকত আলী জাগো নিউজকে বলেন, “মালয়েশিয়ার শর্ত অনুযায়ী খরচ বেড়েছে। সার্ভিস চার্জ বা এজেন্ট ফি মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে। বোয়েসেলের কোনো আয় নেই। আমরা খরচ কমানোর চেষ্টা করেছি। কর্মীরা ধাপে ধাপে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা খরচ করে যেতে পারবেন।”
তিনি আরও বলেন, “মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর তালিকাভুক্ত ১০০ এজেন্সির মধ্যে অনেকেই সরাসরি সরকারি উদ্যোগে লোক পাঠাতে চাচ্ছে না। মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতারাও চান না আমরা লোক পাঠাই। ফলে কিছু ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর লাখ লাখ টাকা খরচ করেও লোকগুলো যেতে পারেননি।”
প্রশিক্ষণ ও সাক্ষাৎকার বাধ্যতামূলক
মালয়েশিয়া সরকার নির্মাণখাতে শ্রমিক নিতে চাইছে। এজন্য সিআইডিবি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করেছে। মূলত তিনটি ক্ষেত্রে পরীক্ষা দিতে হবে—ইট গাঁথা, প্লাস্টারিং এবং কার্পেন্ট্রি বা শাটারিং। প্রথমে সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। নির্বাচিত হলে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। উত্তীর্ণ হলে সনদ দেওয়া হবে, নতুবা যেতে পারবেন না।
এক কর্মকর্তা জানান, “মালয়েশিয়া আগে এগুলো বাধ্যতামূলক করত না। এখন বাধ্যতামূলক করেছে। পরীক্ষায় না উত্তীর্ণ হলে শ্রমিককে নেওয়া হবে না। অনেক এজেন্সি চাইছে পুরো প্রক্রিয়া তাদের মাধ্যমে হোক। এজন্য খরচও বেড়েছে।”
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ
শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচিত শ্রমিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যদি যেতে চান, তবে চার মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ, সনদ, সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ফ্লাইট সবকিছু সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জিং।
বোয়েসেল জানিয়েছেন, তালিকাভুক্ত কর্মীদের সবাইকে ফোন ও বার্তা দেওয়া হয়েছে। কিছু কর্মী ইতিমধ্যেই অন্যান্য দেশে চলে গেছেন, কেউ কেউ আর বিদেশে যেতে আগ্রহী নন। দুই-একদিনের মধ্যে জানা যাবে ৭,৮৬৯ কর্মীর মধ্যে কতজন যাবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে সংখ্যা বেশি হবে না।
চাহিদাপত্র পাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “শিগগিরই তিন হাজার কর্মীর চাহিদা পাওয়া সম্ভব। অধিকাংশ কর্মী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। চাহিদাপত্র পেলে বাকি প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার নির্ধারিত সময় ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪। দুই দেশের সিন্ডিকেট ও অসাধু এজেন্সির কারণে গত বছর ১৬,৯৭০ কর্মী যেতে পারেননি। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টায় তাদের জন্য মালয়েশিয়ার দরজা খুলে দেওয়া হ