শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা শিবিরের বড় চ্যালেঞ্জ: ডাকসু নির্বাচন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০২:৩৭ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার

শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষাই শিবিরের বড় চ্যালেঞ্জ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। বড় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের পরাজয় কিংবা শিবিরের জয়—এসবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার প্রশ্ন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের মতে, এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে অধিকার আদায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটি একটি নতুন ধারা শুরুর ইঙ্গিত।
শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচিই বড় চ্যালেঞ্জ
তাদের মতে, সামনে ছাত্রশিবিরকে সর্বদলীয় বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হবে। ঘোষিত ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করাই হবে সংগঠনটির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে দলীয় পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম, ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক কর্মসূচি এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করতে পারলে শিবির সফল হতে পারবে।
আধিপত্যবাদী রাজনীতির বিকল্প খুঁজছে শিক্ষার্থীরা
ডাকসুতে শিবির সমর্থিত জোটের জয়কে অনেকে দেখছেন আধিপত্যবাদী রাজনীতির বিকল্প হিসেবে। বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষার্থীরা শিবিরকে সমর্থন করার কারণে নয়, বরং প্রচলিত রাজনীতির বাইরে বিকল্প খুঁজতে গিয়ে এই জোটকে ভোট দিয়েছে।
তরুণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ ইশরাক বলেন, “এখানে আসলে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার জয় হয়েছে। তারা কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে অধিকার সচেতন হয়ে ভোট দিয়েছে। নির্বাচিত সংসদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হবে শিক্ষার্থীদের এই ভাবনার যথাযথ মূল্যায়ন।”
সাবেক নেতাদের সতর্কবার্তা
শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা আধিপত্যবাদী রাজনীতি চায় না। শিবির শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচির সুযোগে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে শিক্ষার্থীরা শিবিরের আদর্শ গ্রহণ করেছে।
সাবেক সভাপতি আরও বলেন, “শিবিরের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করা, নমনীয় হয়ে তাদের পাশে থাকা এবং ইশতেহার বাস্তবায়ন করা। বিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা করলেও শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ চালিয়ে গেলে সমর্থন টিকে থাকবে।”
মৌলিক পরিবর্তনের প্রত্যাশা
ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির সেলিম উদ্দিন বলেন, “ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গেস্টরুম কালচার ও আধিপত্যবাদী রাজনীতির কবর রচনা করেছে। সেই পুরোনো কালচার যেন আর ফিরে না আসে—এটাই শিবিরের বড় চ্যালেঞ্জ।”
ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, “ডাকসুতে নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধিদের ছোট ভাই, বড় ভাই বা বন্ধু হিসেবেই থাকতে হবে। সিট দখল, আধিপত্যবাদ বা ব্যক্তিগত প্রভাবের রাজনীতি কবর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের ক্যারিয়ার গাইড করতে হবে।”
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণের আহ্বান
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মির্জা গালিব বলেন, “বিজয়ী প্যানেলের প্রথম দায়িত্ব হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা। দল-মত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা যাতে ভয়হীনভাবে পড়াশোনা করতে পারে, সেটাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।”