বৃহস্পতিবার   ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ২৬ ১৪৩২   ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আমাদের আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ হয়ে গেছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৬:০৭ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার মুখোমুখি হয়েছে নেপাল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় টহল শুরু করেছে সেনাবাহিনী।

সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় রূপ নেয়। এর জেরে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। এরপর বহু রাজনীতিবিদের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়, সরকারি ভবনে আগুন দেওয়া হয়, এমনকি পার্লামেন্ট ভবনও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সহিংসতায় গত সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তবে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া জেন জি তরুণরা সহিংসতা থেকে নিজেদের আলাদা করে রেখেছে। তাদের অভিযোগ, আন্দোলনটি ‘সুযোগসন্ধানীরা হাইজ্যাক’ করেছে।

অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী জেন জি বিক্ষোভকারীদের শান্তি আলোচনায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়েছে, তারা নতুন দাবির তালিকা তৈরি করছে।


দেশজুড়ে অস্থিরতা
নেপালজুড়ে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি রয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সহিংসতা ও ভাঙচুরে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সামরিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, যেখানে যানবাহনের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। লাউডস্পিকারে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, ‘অপ্রয়োজনীয় কাজে বাইরে বের হবেন না’।

আন্দোলনে সহিংসতা ও ভাঙচুরের মাত্রা দেখে বিস্মিত হয়েছেন অনেকে। পূর্ব নেপালের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী রাকেশ নিরৌলা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এমনটা হওয়া উচিত হয়নি।


ললিতপুরের উদ্যোক্তা প্রভাত পাউডেল বলেন, সুপ্রিম কোর্টসহ সরকারি ভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিনি হতবাক হয়েছেন। এগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ, বলেন তিনি।

বিক্ষোভকারীদের আশঙ্কা, আন্দোলনে ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ ঢুকে পড়েছে। সেনাবাহিনীও বিষয়টি স্বীকার করেছে। সামরিক মুখপাত্র রাজারাম বসনেত বলেন, আমরা মূলত নিয়ন্ত্রণ করছি সেই সব উপাদানকে, যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে।

বিক্ষোভকারীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের আন্দোলন ছিল এবং এখনো রয়েছে অহিংস, শান্তিপূর্ণ নাগরিক অংশগ্রহণের ভিত্তিতে। তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ, নাগরিকদের সুরক্ষা এবং জনসম্পদ রক্ষায় তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন।

তারা আরও জানিয়েছে, বুধবার থেকে নতুন কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি নেই এবং প্রয়োজনে সেনা ও পুলিশকে কারফিউ কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সামনে কী?
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগে নেতৃত্বে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তবে কে দায়িত্ব নেবেন বা এরপর কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

মঙ্গলবার জেন জি বিক্ষোভকারীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, নেপালের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব অবশ্যই দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত, সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং যোগ্যতা, সততা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হতে হবে।

তারা আরও যোগ করেন, আমরা চাই একটি স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল সরকার, যা জনগণের স্বার্থে কাজ করবে— দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা রাজনৈতিক অভিজাতদের স্বার্থে নয়।