ডাকসু : জনগণের ক্ষমতা বুঝে নেওয়ার নির্বাচন
তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট
প্রকাশিত : ০৭:২৭ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০২৫ শনিবার

২০০০ সালের ডিসেম্বরে আমার সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। এই দীর্ঘ পেশাগত জীবনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই কেটেছে একটানা সাড়ে ৭ বছর। আবার ২০০৮ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পাস রিপোর্টিং ছাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু আমাকে ছাড়েনি। নানান সংকট ও বড় ইভেন্ট আমাকে ক্যাম্পাস টেনে নিয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ বিষয়ে কাজের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখাটা পেশাগত দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিসল।
ব্যক্তিগত প্রসঙ্গটা সামনে আনার উদ্দেশ্য এই কথা বলার জন্য যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটির অনেক কিছুর সাথেই আছে আমার গভীর সখ্যতা। ক্যাম্পাসের এমন কোনো অলিগলি নেই যেখানে আমার বিচরণ ছিল না। ২০০২ সালের শামসুন্নাহার হল ট্রাজেডি, ২০০৪ সালের টার্মিনাল ডিগ্রির আন্দোলন, ২৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও ২৭তম বিসিএসের মূল ফল বাতিল আন্দোলন, ২০০৭ সালের আগস্ট ও সেনাসমর্থিত সরকারবিরোধী আন্দোলন, বিসিএসে কোটাবিরোধী আন্দোলন, ২০০৭ সালের আগস্ট আন্দোলন, ডাকসু ইলেকশনসহ আর যেসব আন্দোলন হয়েছে তার সবকিছুর সঙ্গে আছে নিবিড় সম্পর্ক। ২০১৮ সালের মতো রাতের ভোট কিংবা ছাত্রলীগকে জেতাতে কীভাবে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করা যায়, সেই কৌশল। আর স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে যত রাজনৈতিক আন্দোলন হয়েছে, বিশেষ করে ছাত্রআন্দোলন, সেগুলো কাছ থেকে দেখা ও গভীরে ঢোকার সুযোগ হয়েছে। এসব অভিজ্ঞতা সামনে রেখে এবং দেশের এই বর্তমান ক্রান্তিকালে ভালো কিছুর প্রত্যাশা রাখি।
ইংরেজিতে একটা কথা আছে, “Big businesses often profit from environmentally harmful practices, particularly in contexts lacking regulation or public awareness, while strong regulation and awareness can favor environmentally responsible business."
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যদি এক একটা ব্যবসায়িক কোম্পানির সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে নির্দ্বিধায় এই কথাটি তাদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রয়োগ করা যায়। স্বাধীনতার পর সাড়ে ৫ দশকে আমরা সেটাই দেখে আসছি। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার বা পানি ঘোলা করে ‘মাছ শিকার’ নামক ‘সিদ্ধি’ অর্জনই থাকে বেশিরভাগ পার্টির মূল লক্ষ্য। অতীতে বিশেষ করে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের তিনটি জাতীয় নির্বাচন সরকারগুলো কমবেশি সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের চেষ্টা করায় জনগণ তাদের রায়ের প্রতিফলন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না হলেও অনেকটা দেখেছে। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারি যন্ত্রকে যখন কায়েমি স্বার্থ ও বিদেশি ষড়যন্ত্র বা দলীয় এজেন্ডার সঙ্গে একীভূত করে ফেলা হয়, তখন সেই সরকার আর জনগণের থাকে না। আমরা সেই সময়ের বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়েও বলতে পারি, জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগে যে রাষ্ট্রযন্ত্র আর সরকার থাকে, তারা উদাসীন বা জনগণের বিপক্ষে থাকলে তখন জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে জনগণকে আত্মাহুতি দিতে হয়, নতুবা দ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে অধিকার আদায় করে নিতে হয়। আর এই প্রক্রিয়ায় যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়, সেটার নামই হয়ে যায় ‘জুলাই বিপ্লব’, ‘আরব বসন্ত’ ইত্যাদি।
অসংখ্য নিহত প্রাণ আর সহস্র আহত মানুষের জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত সরকার জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছে। সেই মহারণের আগে আরেকটি ‘প্রক্সি-রণ’ এই ডাকসু নির্বাচন। এবারের এই নির্বাচনের গুরুত্ব জাতীয় জীবনে অনেক, অপরিসীম। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রকৃতি ও রেজাল্টে কতটা জনমতের প্রতিফলন ঘটে, কোনো অনিয়ম করা হলে সেটা হজম করতে পারা- ইত্যাদির ওপর বাংলাদেশের জনগণের আগামী ফেব্রুয়ারিতে (যদি নির্বাচন হয়) ক্ষমতায়িত হওয়া বা নিজের পছন্দে নেতা বেছে নেওয়াটা নির্ভর করবে।
যেহেতু বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও পরিস্থিতি জড়িত, তাই দেশের বিপথে ঠেলে দেওয়া বা নিয়ে যাওয়া কুশীলবদের কাছে সবসময়ের বড় থ্রেট এই প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান আমলের নানান আন্দোলন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী দশ বছরের সংগ্রাম, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং সর্বশেষ ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগারও যে এই প্রতিষ্ঠান, সেটা কারও অজানা নয়। আর এসব কারণেই সামনের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুযোগ এসেছে। জাতীয় প্রয়োজনেই তাই সুষ্ঠু ডাকসু নির্বাচন হওয়া জরুরি।
এই নির্বাচন দেশের জনগণ ও বাংলাদেশ বিরোধী দেশি-বিদেশি শত্রুদের মাঝে কী বার্তা দিতে পারে, সেটা আরও বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে ডাকসুতে ভোটের চ্যালেঞ্জ বা সুষ্ঠু ভোটের শত্রুমিত্র, ভরসাস্থল ও ভোটারদের করণীয় ইত্যাদি আলোচনা করতে চাই।
এই নির্বাচনে ইতিহাসের সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী আমরা পেয়েছি। ডাকসু সংগ্রহশালার সাবেক সংগ্রাহক গোপাল দাশের সঙ্গে ডাকসুর অতীত দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তার কাছ থেকে কিছু দলিলাদি আমার কাছে নিয়ে এসেছিলাম যখন আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টার ছিলাম। ওইসব ঘেঁটে যেটা আমার অনুমান, নির্বাচন ঘিরে এর আগে কখনো এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থা যেমন তৈরি হয়নি, তেমনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের নজরও কাড়েনি।
ডাকসুতে অনেক প্রার্থীর ভোটের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়াটা খুবই ইতিবাচক একটা দিক। কেননা, মহল্লায় যখন একই পণ্যের একাধিক দোকান থাকে, তখন ভোক্তার সুবিধাই হয়। যদি সিন্ডিকেশন না ঘটে, তাহলে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ঘটে। দোকানগুলো কে, কার, চেয়ে গুণে-মানে ভাল পণ্য দেবে, দাম কমাবে বা নানান অফার দিয়ে ভোক্তাকে আকৃষ্ট করবে সেই প্রতিযোগিতা চলে। ফলে ভোক্তা ইচ্ছেমতো যেকোনো দোকান থেকে সুলভমূল্যে নিজের পছন্দের পণ্য কিনতে পারে। এটা ক্রেতার জন্য স্বস্তিদায়কই বটে।
কিন্তু ব্যবসার লক্ষ্য তো মুনাফা অর্জন। অসাধু ব্যবসায়ী পরিবেশ ধ্বংস করে হলেও নিজের মুনাফা নিশ্চিতের অপচেষ্টা করে। এমন অবস্থায়ই আসে সরকারের আইনকানুন আর জনগণের সচেতনতার ভূমিকার বিষয়টি। যদি সরকারি আইন ও তার প্রয়োগ যথাযথ থাকে এবং পাশাপাশি জনগণ সচেতন থাকে, তখন মুনাফাখোর তার অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারে না।
ডাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ‘সরকার’ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের সমষ্টি, আর জনগণ হচ্ছে ৪০ হাজার শিক্ষার্থী। জনগণ নামক শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য পরিবেশ নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্য একাই সব নয়। এজন্য তাকে যাদের ওপর নির্ভর করতে হবে তারা হলেন-শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। হল প্রশাসনের বড় একটা ভূমিকা আছে। মাঠের খেলোয়াড় বা প্রার্থী বা বিভিন্ন প্যানেল তথা ছাত্রসংগঠন এবং অবশ্যই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও আছে। আর সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়ক শক্তি।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সামান্য ব্যতিক্রম বাদে উল্লিখিত পক্ষগুলোর একটাও পুরোপুরি সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে সহায়ক নয় বলেই আমার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় অনুমিত হয়। বিগত ষোল বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যরা যে সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে গেছে, বর্তমানে কর্মরতদের অর্ধেক বা তারও বেশি তারা। এর আগে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে বড় একটা অংশ সাদা বা বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষক। আছেন বামপন্থী গোলাপি প্লাটফর্মের শিক্ষকরাও। হাতেগোনা সাধারণ বা দল নিরপেক্ষ শিক্ষক খুব কম, যারা আসলে সংখ্যালঘু। এই বিভিন্ন রঙে রঙিন শিক্ষকদের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। সুষ্ঠু ভোট আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের রায় বা মতের উপযুক্ত ও সঠিক প্রতিফলনের ক্ষেত্রে তারাই বড় বাধা। তারা কেউ ছাত্রদল আবার কেউ শিবির, কেউবা বাম ছাত্রসংগঠন আবার কেউ অন্য রাজনীতির রঙে রঞ্জিত প্যানেলের দিকে যে টানবেন-সেই আশঙ্কা করাই যেতে পারে। এসব শিক্ষকদের মধ্যে অনেকে ভবিষ্যৎ সরকারে কারা আসবে-সেই হিসাব কষে সুবিধাবাদী চরিত্রে পরিগ্রহ করে বাতাসের অনুকূলে যদি পাল তুলেই দেন, তাহলে বিগত ডাকসু নির্বাচনে ঘটা আগের রাতে ব্যালট বক্স ভরে রাখার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পারি-যা কুয়েত-মৈত্রী হলে দেখেছিলাম। কিংবা সূর্যসেন বা বঙ্গবন্ধু বা অন্য হলের মতো কৃত্রিম লাইন তৈরি করে ভেতরে জাল ভোটের মহোৎসবও ঘটতে পারে, যেখানে উল্লিখিত দলবাজ শিক্ষকরা ভূমিকা রাখতে পারেন।
ইতিমধ্যে কয়েকটি হলের প্রশাসনের বিরুদ্ধে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টার অভিযোগ এসেছে। এসব শিক্ষক বিশেষ করে হল প্রভোস্টরা বাইরে নির্বাচনের পক্ষে আর ভেতরে বাতিলের পায়তারা করছেন বলে পাচ্ছি। কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে কাউকে সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে তারিখ সমন্বয় থেকে শুরু করে ছোটখাটো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভিযোগও এসেছে। এর পেছনেও আছেন শিক্ষকরা।
ডাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাখতে হবে। ভোটার হিসেবে নিজের অধিকার আর মতামতের সঠিক প্রতিফলন বা ঘোষণা আদায় করে নিতে হবে তাদের। ভারতীয় বাংলা মুভি ফাটাকেষ্ট-তে যেভাবে জনগণই সরকারি প্রতিষ্ঠান পাহারা দিয়ে দুর্নীতিবাজ ঠেকিয়ে দিয়েছে, সেই রকম যদি ভূমিকা রাখতে পারেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা, তাহলে নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ইঞ্জিনিয়ারিং নস্যাৎ হতে বাধ্য। এই সচেতনতাই তাদের উপহার দিতে পারে পছন্দের নেতৃত্ব, যাকে তারা ভোট দেবে।
এখন কেমন নেতৃত্ব আমরা চাইতে পারি সে প্রসঙ্গে আসা যাক। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল ছাড়া কোনো দেশ চলতে পারে না। তারাই শাসন করে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে। কিন্তু ম্যান্ডেট যাতে ছিনতাই না হতে পারে, সেটা পাহারা দেওয়াই ভোটারের দায়িত্ব, যেহেতু সেই আশঙ্কা আছে। এ ক্ষেত্রে ডাকসুর ভোটার হলে আমি কী করতাম সেটা উল্লেখ করি। প্রথমত, আমি অবশ্যই দল বা প্যানেল দেখে নয়, প্রার্থীকে গুরুত্ব দিয়ে ভোট দিতাম। এ ক্ষেত্রে দেখতাম সেসব প্রার্থীকে যারা ইতিমধ্যে ভণ্ডামি করেনি। লেখাপড়ার পরিবেশ বিনষ্টকারী, আদুভাই, অর্থের লোভ সামলানোর পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ, অসৎ, লেজুড়বৃত্তির দোষে দুষ্টু, ফ্যাসিস্টের সহযোগী ও বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নে সদা তৎপর বা দেশবিরোধী, বর্ণচোরা- তাদের ভোট দিতাম না। যেখানে অর্থ আর ক্ষমতা আছে, সেখানেই থাকে দুর্নীতি আর অপপ্রয়োগের সুযোগ। তাই আমি যাকে আমার নেতা নির্বাচন করছি বা আমার ক্ষমতা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (ডাকসুর ক্ষেত্রে একবছর) আরেকজনের হাতে ন্যস্ত করছি, তাকে আমার ব্যথা ও কষ্ট বোঝার মন, সদিচ্ছা বা সহমর্মিতা আছে কিনা, তিনি দেশপ্রেমিক কিনা, সেটা ভালো করে বিবেচনা করতাম। ভোটটাকে যদি ব্যবসার মূলধন হিসেবে ধরা হয়, তাহলে ভোটাধিকার প্রয়োগটা হলো তার বিনিয়োগ। এখন আমি যদি ভুল জায়গায় বিনিয়োগ করে লাভ তুলতে না পারি; অর্থাৎ, আগামী একবছর সার্ভিস না পাই তার দায় আমারই। তাই, নির্বাচিত হওয়ার পর হল ইউনিয়ন বা ডাকসুতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ যদি আমার নির্বাচিত প্রতিনিধি লোপাট করে বা পালের গরুর মতো যদি বেঁধে আমাকে মিছিলে নিয়ে যায়-সেটা আমারই অর্জন। কারণ, আমার ক্ষমতায় তাকে ক্ষমতায়িত করে ওইসব অপকর্ম আর আমার ওপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ তাকে দিয়েছি আমিই। কারণ সেবা পাওয়ার চেষ্টাটা আমি করিনি।
এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান হলো, যে নানান দিকে পর্যবেক্ষণে পরিত্যাজ্য, তাকে বর্জন করা। বিপরীত দিকে, দায়িত্বশীল, মানবিক; সার্ভিস দিতে প্রস্তুত এমন ব্যক্তিকে নেতা নির্বাচন করাই ভোটার হিসেবে আমার দায়িত্ব। তাই যার হাতে আমি একবছরের জন্য আমার ক্ষমতা প্রয়োগের দায়িত্ব দিচ্ছি, আগে তার মধ্যে নিজেকে খুঁজে দেখব যে, আমার কাজটি করার আন্তরিকতা তার আছে কিনা। ভোটের পর মেয়াদের পুরো সময়কালে যেন আমার মনে হয়- নির্বাচিত প্রতিনিধি আমিই নেতৃত্ব দিচ্ছি।
সুতরাং, আমি মনে করি, শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধি নির্বাচন, সুষ্ঠু ভোটানুষ্ঠান অনুষ্ঠান ও তাদের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন আদায়ে উপরোক্ত ঘটনাগুলো যদি ঘটিয়ে ফেলতে পারে, সেটা হবে জুলাই আন্দোলনের চেয়েও বড় ঘটনা। কেননা, একবছরে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দেশের মালিক ভাবা শুরু করেছে, সেবক নয়। তাদের ইচ্ছাই যেন সব। ফ্যাসিস্টের পলায়ন থেকে তারা শিক্ষা নেয়নি। তাই তাদেরকে বার্তা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমি যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ছাত্র নই, নেই ভোটাধিকার, তাই সাবেক ছাত্র হিসেবে বর্তমানের কাছে আমার আবেদন আর প্রত্যাশা থাকবে, আপনারা আবার ইতিহাস সৃষ্টি করুন। জাতিকে পথ দেখান ও বার্তা দিন যে, আগামী নির্বাচনে কী করতে হবে। মনে রাখবেন, দেশ গড়ার এই সুযোগ ৩৫ বছর পর ফের হাতে এসেছে। এর আগে ১৯৯০ সালে আমাদের পূর্বসূরিরা রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব দিয়েছিল। তারা কথা রাখেনি। তাই এখন যে সুযোগ পেয়েছে, সেই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না। ভ্যানগার্ড হয়ে মাঠে নামুন। আপনার ভূমিকায় প্রকাশ পাক এই বাক্য, ‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত।’