মঙ্গলবার   ২০ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩২   ২২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

সাধারণ এক নারী থেকে অসাধারণ শেখ হাসিনার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজার সৈকত

প্রকাশিত : ০৮:৫৬ এএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৮ বুধবার

‘হাসিনা- এ ডটার’স টেল’ শিরোনামের ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে আগামী ১৬ নভেম্বর। ছবিটি এরইমধ্যে আলোচনা তৈরি করেছে। হচ্ছে নানা নেতিবাচক কথাও। অনেকেই মনে করছেন নির্বাচনের আগমুহূর্তে এই ছবিটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই মুক্তি দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ইতিবাচক প্রচারের জন্যই তৈরি হয়েছে ছবিটি।

তবে সিনেমার পরিচালক পিপলু খান জানালেন, ‘মোটেও এমন কিছু নয়। এটি একটি সিনেমাই। যেখানে রাজনীতির ইতিহাস আছে, নানা রকমের অজানা তথ্য আছে। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আদর্শ নয় বরং তার নিতান্তই ব্যক্তি জীবনের গল্প ফুটে উঠেছে।’

পরিচালক সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, ‘দেশে দেশেই রাজনীতিবিদদের নিয়ে ছবি নির্মিত হয়। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা পেয়েও তাকে নিয়ে কিছু বানাতে পারিনি। অথচ তার সাথে পঁচাত্তরের কাল রাতে ঘটে যাওয়ার ঘটনায় শত শত বই লেখা হয়েছে। আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু নির্মাণের সাহস করিনি। তবে আমার দেখা একজন রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা। যিনি রানিং প্রধানমন্ত্রী।

আমার ও আমাদের সিনেমার টিমের মনে হয়েছে তার জীবনের গল্প আছে, সেগুলো মানুষ জানতে চায়। তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে মানুষের অনেক আগ্রহ। সেটা তুলে ধরতেই আমি ছবিটি বানিয়েছি।

আমাকে এই ছবির জন্য সরকার থেকে কোনো প্রস্তাব দেননি, সরকার এটিকে নিয়ে বাণিজ্যও করছে না। তেমনটি হলে সারাদেশের সব হলেই হয়তো ছবিটি আমরা নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমাদের সেই উদ্দেশ্য নেই। মনে হয়েছে শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি কাজ করা আমাদের প্রজন্মের দায়িত্ব। সেটা পালন করেছি।

আমার চেয়ে ভালো নির্মাতা এই দেশে অনেকেই আছেন। তারা বানালে হয়তো আরও ভালো বানাতে পারতেন। আমি শুরু করেছি, এবার অন্যরাও করবে। ছবিটিতে এত জটিল ভাবনার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী একদম সাধারাণ একজন নারী হিসেবে আমাদের সময় দিয়েছেন। পাঁচ বছর ধরে কাজ করে তাকে নিয়ে ছবিটি আমরা বানিয়েছি।

পিপলু খান প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘যখন প্রধানমন্ত্রী রাজি হলেন আমাদের সময় দেয়ার তখন থেকেই আমি চেষ্টা করেছি সাদামাটা একটা উপস্থাপনের। আমার মাথায় ছিলেন ব্যক্তি শেখ হাসিনা। তিনি কী পছন্দ করেন, কী খেতে ভালোবাসেন, কী ধরনের শাড়ি তিনি পছন্দ করেন? ছেলেমেয়ে ও নাতিদের সঙ্গে কীভাবে সময় কাটান, তার বোনের সঙ্গে রসায়নটা কেমন, কেমন তার জীবনযাপন? স্বজন হারানোর ভাবনা তাকে কীভাবে প্রভাবিত করে, কীভাবে কেটেছে তার নির্বাসিত জীবনের দিনগুলো- এইসব জানতে চেয়েছিলাম।

মনে আছে প্রথম সাক্ষাতের সময় আলাপে আলাপে প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন ‘এই জানো, আমি রেহানা একে অন্যের শাড়ি ভুল করে পরে ফেলি।’ তার মুখে এই রসাত্মক কথাটা শুনতে শুনতে আমার মনে হয়েছিলো এই মানুষটির সঙ্গে ডাল চাল নিয়ে কথা বলা যায়। তিনি একদমই ঘরের মা-বোনের মতো আচরণ করেছেন। আর সেটাই আমাদের দরকার ছিলো।’

ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে দেশের অনেক ইতিহাস ও আবেগ পড়ে আছে দাবি করে পিপুল খান বলেন, ‘খুব অবাক করা ব্যাপার হলো ৩২ নম্বরের বাড়িটি নিয়ে আমাদের কোনো আবেগ নেই। ওখানে যারা যান তারা কেউ কাজের জন্য, কেউ বা বেড়াতে-ঘুরতে যান। কিন্তু ইতিহাস জানতে, বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে জানতে যান না কেউ।

ওই বাড়িতে অনেক আবেগ জমে আছে। বঙ্গবন্ধুর চিঠিগুলো অসাধারণ। কবিতার মতো। আমি পড়েছি। প্রতিটি চিঠিতে তিনি স্ত্রীকে লিখতেন ‘প্রাণের রেনু’। দাম্পত্যের কী চমৎকার প্রেম। আজকাল তো আমরা চিঠিই লিখছি না প্রেমিকার কাছে। কিন্তু প্রেমমাখা এসব চিঠি পড়লে দেখবেন মন ভালো হয়।

সিনেমাটি দেখার পর প্রধানমন্ত্রীর অনুভূতি কেমন ছিলো সেই প্রশ্নের জবাবে পরিচালক পিপলু খান বলেন, ‘ছবিটি নিয়ে তার কোনো উচ্ছ্বাস নেই। তিনি দেখেছেন এবং মজা পেয়েছেন। কোনো কারেকশান দেননি যে এটা এরকম করো, এটা বদলে দিও। তিনি কেবল মজা করেছেন তার মেকাপ নিয়ে। বলছিলেন, ‘বয়স হয়েছে। মেকাপ যেন বেশি না লাগে।’ সেটা আমরা এডিটিংয়ের সময় মাথায় রেখেছিলাম।’

‘হাসিনা-এ ডটার’স টেল’ সিনেমাটি নিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে আয়োজিত হয় এক সংবাদ সম্মেলন। সেখানে এর পরিচালক পিপলু খান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস, গ্রে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কান্ট্রি হেড গাউসুল আলম শাওন।