মঙ্গলবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৬ ১৪৩২   ১০ রজব ১৪৪৭

বাগেরহাটে বিশেষ ব্যবস্থা,সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ শেখ তন্ময় 

মাসুম হাওলাদার বাগেরহাট

প্রকাশিত : ১২:২৬ পিএম, ১৪ মে ২০২৩ রোববার

সরকার দূর্যোগের ঝুকি কমানোর জন্য নানা কাজ করে যাচ্ছে শেখ তন্ময়

সরকার দূর্যোগের ঝুকি কমানোর জন্য নানা কাজ করে যাচ্ছে শেখ তন্ময়

বাগেরহাটে ঘূর্নিঝড় মোখার সম্ভাব্য বিপদ সামনে রেখে জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৩ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় র‌্যাব-৬‘র অধিনায়ক (সিইও)লেঃ কর্ণেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ, বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক, সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দিন, এলজিইডি‘র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শরিফুজ্জামান, বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড.শাহ-ই-আলম বাচ্চু, বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ারসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, প্রতিনিধি ও গনমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মোখায় ক্ষয়ক্ষতি থেকে জনগনখে রক্ষা করতে বাগেরহাটের মোংলা, রমাপাল, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা এই চারটি উপজেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলা অধিক ঝুকিপূর্ণ। এই উপজেলার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। সেই সাথে সুপেয় পানি, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, সেনিটারি ন্যাপকিন, টর্চ লাইট, ইলেক্ট্রিক করাতসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন জেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ শরিফুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় আগামী সভা গুলোতে গুরুত্বের সাথে উপস্থিত থাকা এবং মোখা মোকাবেলায় কর্মস্থলে থেকে খামারীদের সেবা প্রদানের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাগেরহাট-২ (কচুয়া-সদর) আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দূর্যোগ প্রশমন ও দূর্যোগের ঝুকি কমানোর জন্য নানা কাজ করে যাচ্ছে। এরপরেও কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রতিটি জেলারই আলাদা আলাদা সমস্যা থাকে। বাগেরহাটে বেশকিছু এলাকায় বেরিবাঁধ নেই এবং কিছু বেরিবাঁধ রয়েছে যা ঝুকিপূর্ণ। যেসব এলাকায় বেরিবাঁধ নেই, সেব জায়গায় পর্যায়ক্রমে বেরিবাঁধ করা হবে। সেই সাথে ঘূর্নিঝড় মোখা মোকাবেলায় সরকারি কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবক,  জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক কর্মীসহ সকলকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান। মোখা পরবর্তী ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন এই তরুণ সংসদ সদস্য। মোখা মোকাবেলায় বাগেরহাটের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা হয় এই সভায়। সভার তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে ৮৪টি মেডিকেল টিম, ১হাজার ৯২০ জন সিপিপ্ ৩৯ সদস্য, ৫০০ জন রেড ক্রিসেন্ট সদস্য, রোভার, বিএনসিসি, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, এনজিও, প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন ও প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন আশ্রয় গ্রহন করতে পারবে। এছাড়া প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ প্রদানের জন্য ৫২২ দশমিক ৮০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১০ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঘূর্নিঝড় মোখা থেকে সতর্ক থাকা এবং সঠিক সময়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলায় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মোংলা সমুদ্র বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা বন্দরে নোঙ্গর করেছে চার যুদ্ধ জাহাজ খান মাহাবুবর রহমান বাদল বাগেরহাট ,
ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে মোংলা বন্দর জেটিতে নোঙ্গর করেছে নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ডের চারটি যুদ্ধ জাহাজ। মোংলা বন্দরের
সাত ও আট নম্বর জেটিতে শুক্রবার (১২ মে) রাতে জাহাজ চারটি নোঙ্গর করে। জাহাজগুলো হচ্ছে, নৌ বাহিনীর ‘বি এন এস বঙ্গবন্ধু’ ও ‘বি এন এস স্বাধীনতা’ এবং কোস্টগার্ডের ‘তাজউদ্দিন’ ও ‘সৈয়দ নজরুল’ জাহাজ। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শাহিন মজিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে জাহাজগুলো নোঙ্গর করেছে। দূর্যোগ কেটে গেলে পুনরায় এসব জাহাজ তাদের গন্তব্যে ফিরে যাবে। এদিকে মোখা উপলক্ষে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে উপকূল রক্ষা বাহিনী বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। ঘুর্নিঝড় “মোখা” চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড মোংলা জোন কর্তৃপক্ষ। উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় “মোখা” থেকে উপকূল বাসীকে রক্ষার্থে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন এর কর্মকর্তা ও নাবিকদের ঘূর্ণিঝড় উপলক্ষে উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে নিয়োজিত করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ, সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন ঝুকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়ার পাশাপাশি কোস্ট গার্ড স্টেশনে আশ্রয় প্রদান করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোস্ট গার্ডের সকল জাহাজ, বোট, স্টেশন, আউটপোষ্ট এবং ডিজাস্টার রিসপন্স এন্ড রেস্কিও টিম প্রস্তুত রয়েছে। দূর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ইতোমধ্যে কোস্টগার্ডের মেডিকেল টিম প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় অঞ্চলে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক সমন্বয়সাধনের জন্য বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন কর্তৃক বিশেষ কন্ট্রোলরুম-০১৭৬৯৪৪৪৯৯৯ পরিচালনা করা হচ্ছে। উওর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকছি থেকে সাবধানে চলাচল করার নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। দুর্যোগকালীন ও দূর্যোগ পরবর্তী সময়ে যেকোন সংকটকালীন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও তথ্যের জন্য কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন এর অধিনস্থ সকল জাহাজ, স্টেশন এবং আউটপোষ্ট সমূহ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।