বুধবার   ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৭ ১৪৩২   ১১ রজব ১৪৪৭

কালাইয়ে বাজারে উঠেছে রসালো তরমুজ দাম বেশি, কেজি দরে কিনছেন ক্রেতা

মতলুব হোসেন, জয়পুরহাট 

প্রকাশিত : ০২:০৫ পিএম, ১৫ মার্চ ২০২৩ বুধবার

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় হাট-বাজারে জমে উঠেছে তরমুজের বেচাকেনা। হরেক নামের আর দামের তরমুজে বাজার সেজে উঠেছে। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তরমুজের দোকানগুলোতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ছোট ও বড় আকারের অনেক তরমুজ। তবে এই ফলের
দাম বর্তমান বাজারে আকাশ ছোঁয়া। একদিকে দাম বেশি আর অন্যদিকে উপজেলায় বিভিন্ন হাট-বাজারে কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রি করছেন সায়ীরা। তারা তরমুজ চাষির ক্ষেত থেকে প্রতি বিঘা বা পিস চুক্তিতে তরমুজ ক্রয় করে বাজারে তা এনে ক্রেতাদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করছে ঐসব বসায়ীরা। এতে করে ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভ করছেন আর প্রতিদিন ক্রেতা ঠকছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, কালাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নসহ কালাই পৌরসভার বিভিন্ন হাট-বাজারে ফলের দোকানে শোভা পাচ্ছে হরেক রকমের তরমুজ। উপজেলার হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে সুস্বাদু ও ষ্টি তরমুজ। কালো রঙের, সবুজ রঙের আগাম জাতের তরমুজে ভরে উঠেছে বাজারগুলোতে। কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরাবাজা, পুরোনো-বাজার ও সস্ট্যান্ড বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায় রসালো তরমুজ ফল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫৫ টাকায়। এ নতুন ফল হিসেবে বাজারে চাহিদা রয়েছে। ক্রেতারা তাদের পছন্দমত কেজির দওে তরমুজ কিনছেন। তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেরই পছন্দ করছেন এই ফলটি। বাজারে বেশির ভাগই বাংলালিং তরমুজ ও কালো রঙের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য ফলের তুলনায় এ তরমুজ ভিতরে লাল টকটক রঙের, সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বেশি থাকায় এই এলাকায় এর চাহিদা অনেক বেশি। কালাইয়ের হাট-বাজারে একেকটি তরমুজের ওজন ৩ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার বসায়ীরা চড়ামূল্যে ও কেজি হিসেবে বিক্রি করছেন এই ফল। যা দরিদ্র পরিবারের নাগালের বাইরে। দাম চড়া হওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও স্বল্প আয়ের মানুষের প¶ে এ ফল ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছেনা। কালাই বাসস্ট্যান্ডে এলাকায় তরমুজ বিক্রেত মোজাহার বলেন, কাস্টমার যেভাবে চায় আমরা সেভাবেই বিক্রি করি। কেউ পিস হিসেবে কেনে, কেউ কেজি হিসেবে কেনে। আমরা চাই কেউ যাতে কিনতে এসে ফেরত না যান। এই ফল সীমিত লাভে বিক্রি করছি। আকার ভেদে পিস প্রতি তরমুজের দাম রাখা হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। আকার ভেদে দামের হেরফের হয়। আর পরিমাপ করে বিক্রি করলে দাম রাখা হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। তবে এখন কেজি হিসেবেই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আরেক তরমুজ ব্যবসায়ী রুবেল ইসলাম জানান, জারে যে সব তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে তা আগাম জাতের তরমুজ। এসব তরমুজ জয়পুরহাট এবং মহাস্থান আড়ত থেকে আনা হয়েছে। কালাই  মজাতের তরমুজ খুব কম চাষ হয়ে থাকে। ঐ এলাকার চাষিরা বেশিলাভের আশায় আগামজাতের তরমুজ চাষ করেছে। এই উপজেলায় বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রচুর পরিমাণে কালো রঙের, সবুজ রঙের তরমুজ এসেছে। মৌসুমের আগেই এ হাট- বাজারে যে সব তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে তা ভিতরে লাল টকটক,সুস্বাদু ও মিষ্টি। উপজেলার পাঁচশিরা-বাজারে তরমুজ কিনতে আসা সাহারা বেগম বলেন, আমি মেয়ের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছি। তাই নাতি- তনিদের জন্য তরমুজ কিনতে এসেছি। সারা হাট ঘুরে ৫২০ টাকা দিয়ে মাঝারি আকারের দুটি তরমুজ কিনেছি। বর্তমান প্রে¶াপটে দাম অনেক বেশি। তারপরও কিনলাম। উপজেলার মাত্রাই হাটে তরমাজ কিনতে এসেছেন ভ্যানচালক জিল্লু মিয়া। তিনি বলেন, সারা দিন ভ্যান চালিয়ে ৫০০ টাকা পেয়েছি। এমনিতেই চলছে সব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেশি। এ টাকায় চাল ডাল, শাক-সবজি কিনলে হাতে আর টাকা থাকে না। হাটে নতুন ফল তরমুজ উঠেছে। কেনার ইচ্ছায় কানে গিয়ে দাম শুনে খাওয়ার ইচ্ছা চলে গেছে। আমার প¶ে এই তরমুজ কেনা সম্ভব নয়। উপজেলার মোলাগাড়ীহাটে তরমুজ কিনতে আসা ফারুখ হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে বাজারে নতুন ফল তরমুজ উঠেছে। লোকমুখে শুনে আমার বৃদ্ধ মা তরমুজ খেতে চেয়েছেন। তাই বাজারে তরমুজ কিনতে এসেছি। একটা বড় আকারের তরমুজ কিনতে গেলে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা লাগবে। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের প¶ে তরমুজ কেনা খুবই কঠিন। এজন্য তরমুজ না কিনেই ফিরে যাচ্ছি। দাম কমলে কিনবো। কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, এই উপজেলায় এবার ৭ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ হয়েছে। এবছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার তরমুজ বেশি উৎপাদিত হবে। তরমুজের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়া। বাজারে তরমুজের সরবরাহ বাড়লে দাম অনেক কমবে। তবে আমরা তরমুজের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।