নারায়ণগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে ২০ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ
আব্দুল হালিমের স্বজনের আহাজারি। ছবি: সংগৃহীত
প্রকাশিত : ০২:৫৯ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আব্দুল হালিম (৭২) নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ২০ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশের দাবি, মৃত্যু ও টাকা লুটের ব্যাপারে পরিবারের অভিযোগ রহস্যজনক।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন এনায়েতনগর ইউনিয়নের ধর্মগঞ্জের মাওলাবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পরে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টায় পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধা হালিমের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহরের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
আব্দুল হালিম ধর্মগঞ্জের মাওলাবাজার এলাকার মৃত মহব্বত আলীর ছেলে।
নিহতের ছেলে হাফেজ মো. মাসুদ জানান, পরিবারের লোকজন মঙ্গলবার এক আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে যান। রাতে তার বাবা নিজের রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ১১টার সময় ঘুমন্ত অবস্থায় তিনজন লোক তার হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর করেন। পরে রাত ২টার দিকে দুর্বৃত্তরা যাওয়ার সময় জমি বিক্রির ২০ লাখ টাকা ও বেশ কিছু স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা কীভাবে রুমে প্রবেশ করেছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি মাসুদ।
নিহতের ছোট মেয়ে নুরুননেছা জানান, রাত আড়াইটার দিকে তাদের ভাড়াটিয়ার মেয়ে ফোন করে জানায় যে তাদের বাসায় ডাকাতি হয়েছে। তার ভাইকে হাত-পা বেঁধে, মারধর করে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। তার বাবাও কোনো কথা বলছেন না। এ খবর পাওয়ার পর তিনি ধর্মগঞ্জ বাসায় ছুটে যান। নুরুননেছা আরও জানান, বাসায় বিশ থেকে ত্রিশ লাখ টাকা ছিল। সেই টাকা নিয়ে গেছে। বাড়ির কাজ করার জন্য ব্যাংক থেকে মাসখানেক আগে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।
পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া মাহিনুর বেগম জানান, তার স্বামী কাঁচামাল ব্যবসায়ী। প্রতি রাতে দুইটার দিকে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে বাসা থেকে বের হন। ওইদিনও রাত দুইটার দিকে তার ঘুম ভাঙলে তিনি বাড়িওয়ালার ঘরের দরজায় শব্দ এবং ভেতরে গোঙানির শব্দ শুনতে পান। তখন তিনি দরজা খুলে দেখতে পান বাড়িওয়ালার ফ্ল্যাটের প্রধান ফটক খোলা। তিনি বাসার ভেতরে ঢুকে দেখতে পান রুমের ভেতরে ঢোকার দুটি দরজা বাইরে থেকে আটকানো। তখন তিনি বাইরের ছিটকিনি খুলে দেখতে পান গামছা দিয়ে বাড়িওয়ালার ছেলে হাফেজ মাসুদের হাত-পা বাঁধা এবং অপর একটি কাপড়ের টুকরো দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে রয়েছেন। তখন তিনি মাসুদের হাত-পা ও মুখের বাঁধন খুলে দেন। পাশের রুমে গিয়ে দেখতে পান বিছানার ওপর বাড়িওয়ালার মরদেহ পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার এসআই হুমায়ুন কবির জানান, যে ঘরে ঘটনা ঘটেছে সে ঘরে বাইরে থেকে কারো ভেতরে প্রবেশ করার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ঘরটিতে চারটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তবে দুর্বৃত্তরা ক্যামেরার মেশিন থেকে হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে গেছে।
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রিজাউল হক বলেন, নিহতের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থাকেন। ছেলের পরিবারের সঙ্গে আব্দুল হালিম নিজ বাড়িতে থাকেন। ঘটনার সময় ছেলে ও আব্দুল হালিম ছাড়া কেউ বাড়িতে ছিলেন না। ঘটনাটি রহস্যজনক। গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। নিহতের স্বজন, এলাকাবাসী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও খোঁজ খবর নেন।
পরে গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিকভাবেআব্দুল হালিমের মৃত্যু ও টাকা লুটের বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি আলাদাভাবে তদন্ত শুরু করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, সিআইডি পুলিশ ও র্যাব। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে তারা।