ভালো কাজের কথা বললেই মিলে বিনামূল্যে খাবার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ১০:৫৭ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ বুধবার

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্কের উত্তর পাশে বাস থেকে নেমেই দেখা যায় বেশকিছু জায়গাজুড়ে বাঁশের খুঁটিসহ সামিয়ানা টানানো। সঙ্গে চারপাশে ব্যানারে লেখা ‘ভালো কাজের হোটেল’। হোটেলের ভেতরে কিছু বেঞ্চ, প্লেট, খালি হাড়ি আর ছোট ড্রাম। তার সামনে টোল-টেবিল নিয়ে বসে এক তরুণকে ফাইল ঠিকঠাক করায় মনোযোগী থাকতে দেখা যায়। কাছে গিয়ে পরিচয় দিয়ে ‘ভালো কাজের হোটেল’ বিষয়ে জানতে চাইলে রুবেল আহমেদ হিমেল নামের ওই তরুণ, এখানে বিনামূল্যে খাবার দিই আমরা। তবে শর্ত হলো শুধু একটি ভালো কাজ করা। দিনে যে কোনো একটি ভালো কাজ করে এখানে এসে বললেই কাগজে নাম লিখে আমরা বিনামূল্যে খাবার দিই।
দিনের খাবার বিতরণ শেষ হওয়ায় ততক্ষণে হোটেলের তিনজন ভলান্টিয়ার ছাড়া অন্য সদস্যরা বাসায় ফিরেছেন। রুবেলের হাতের ফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, ফাইলটিতে ব্যক্তির নাম, বয়স ও ভালো কাজের বিবরণ লিখে রাখা হয়। বয়স বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে খেতে যাওয়া অধিকাংশই মধ্যবয়সী। আর তাদের কেউ বৃদ্ধ লোককে সাহায্য করেছে, কেউ গাড়ি ধাক্কা দিয়ে দিয়েছে, কেউ শীতের মধ্যে রাতে একজনকে সঙ্গে ঘুমাতে জায়গা দিয়েছে, কেউ নামাজ পড়েছে, কেউ দান করেছে- সেখানে খেতে আসা প্রত্যেকেই এমন কোনো না কোনো একটি ভালো কাজ করেছেন।
হোটেলটির ভলান্টিয়ার রুবেল আহমেদ হিমেল বলেন, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা, চা দোকানদার এমনকি পথচারীরাও এখান থেকে একটি ভালো কাজের কথা বলে খাবার খেতে পারেন। আজ ১৫০ জনের মতো মানুষ খাবার খেয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত মাঝে মাঝে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খাবার থাকা অবস্থায় যে কেউ এখানে খাবার খেতে পারবেন। আজ ২টার আগেই খাবার শেষ হয়ে গেছে।
পাশেই চা-বিস্কিটের দোকান চালান নাজমা আক্তার ময়না। এই নারী দোকানি, আমি প্রতিদিনই এখানে খাই। দোকান করার পাশাপাশি প্রতিদিন একটি ভালো কাজ হিসেবে আমি পুরো জায়গাটা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে দিই।
তিনি বলেন, বাসায় গিয়ে খেতে সময় লাগে। আশপাশেও খাবার হোটেল নেই যে কম দামে খাবো। ভালো কাজের হোটেল আমার জন্য একটা আশীর্বাদ বলা যায়। তাদের এ উদ্যোগ অনেক মহৎ।
এসময় বিনামূল্যের খাবার খেয়ে পাশেই কয়েকজনকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। যাদের বেশিরভাগই রাজধানীর ফুটপাত বা পার্কের ছিন্নমূল মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘ভালো কাজের হোটেল’ মূলত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনটির আঠারশোর বেশি সদস্য রয়েছে। তারা মাসে ৩০০ টাকা করে দেন চাঁদা। বিনামূল্যে দিনে একটি ভালো কাজ করার কথা জানিয়েই যে কেউ সেখানে খাবার খেতে পারবেন- এমন শর্তে ২০১৯ সালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রথম চালু হয় ‘ভালো কাজের হোটেল’। সপ্তাহে একদিন খাওয়ানো হতো সেখানে। করোনাকালে প্রতিদিন খাওয়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়।
এরপর একে একে রাজধানীর সাতরাস্তা, বনানী, খিলগাঁও ও বাসাবোতে চালু হয় ‘ভালো কাজের হোটেল’। পান্থপথ মোড়ে পান্থকুঞ্জ পার্কের উত্তর পাশে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি চালু করেন ভালো কাজের হোটেল। রাজধানীতে তাদের এই হোটেলগুলোতে প্রতিদিন গড়ে হাজার-বারশো মানুষকে খাবার দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে সপ্তাহে একদিন প্রতি শুক্রবার এ হোটেল চালু থাকে। এসব হোটেলে খাবারের মধ্যে থাকে খিচুড়ি, ডিম, সবজি আর সাদা ভাত। তৃপ্তি সহকারে খেতে পারেন যে কেউ।
পান্থকুঞ্জ পার্কের মোড়ে ভালো কাজের হোটেলের ভলান্টিয়ার রুবেল আহমেদ জানান, তিনি ভালো লাগার জায়গা থেকেই নিজেকে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। মানুষকে খাওয়াতে পেরেই তার আনন্দ। এমন ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে পারে নিজের প্রতি তার গর্বও হয়।