জবির প্রধান ফটক যেন শিক্ষার্থীদের মরণফাঁদ!
মিলন হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৮:৪৬ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান ফটক এখন শিক্ষার্থীদের জন্য মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় রাস্তার অসংখ্য গণপরিবহনের সঙ্গে। এ নিয়ে যেন শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শেষ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশেপাশের সবগুলো সড়কে নিয়মিত লেগে থাকে অসংখ্য গাড়ির জটলা। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা রাস্তা পারাপারে। এসব আতঙ্ক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পার হতে হয় প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত।
জবির সামনের সড়ক দিয়ে বয়ে গেছে রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। সেই সঙ্গে জবির প্রধান ফটকের সামনে মিলিত হয়েছে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। রাজধানীর গুলিস্তান, সদরঘাট, শ্যামবাজার, লক্ষ্মীবাজার, ইসলামপুর পাটুয়াটুলীসহ আরও অসংখ্য ছোট-বড় সড়ক মিলিত হয়েছে ক্যাম্পাসের মূল প্রবেশ পথে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত একমাত্র (টিএসসি) শিক্ষক - শিক্ষার্থী মিলনায়তনটি যেন আরও বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে নিয়মিতভাবে মিলিত হয় আরও দুই-তিন হাজার পথচারীরা। সঙ্গে রয়েছে সদরঘাট মুখী মানুষ ও অসংখ্য গাড়ির বেপরোয়া চলাচল। এসব কিছুর জন্য মূলত ক্যাম্পাসের প্রধান প্রবেশদ্বারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রধান ফটকে কোনো ধরনের গতিরোধক না থাকার কারণে বেপরোয়াভাবে যানবাহন চলাচল করে। এজন্য দূর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে এ রাস্তায় চলাচল করা শিক্ষার্থীদের। এখানে নেই কোনা ফুটওভার ব্রিজ বা কেনো বিকল্প ব্যবস্থ যাতে করে দূর্ঘটনা ঝুঁকি কমানো যায়। আবার এই রাস্তাটি অধিকাংশ সময় জ্যাম থাকে। যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে বাহাদুর শাহ পরিবহনসহ এ রুটের অবৈধ বাসগুলো।
এছাড়াও সদরঘাট অভিমুখী সিএনজি, রিক্সা এবং রাস্তার দুইপাশে ছোট-খাটো দোকানপাটগুলোর কারণে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এ রাস্তায় ঢাকা ট্রাফিক পুলিশ গুলোর সামনে ঘটছে এইসব কর্মকান্ড।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র অপরিকল্পিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জগন্নাথ। ছোট্ট পরিসরের এ ক্যাম্পাসে শুরু থেকেই অসংখ্য সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রধান ফটকে রাস্তা পারাপারের ঝুঁকি। শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি নিয়ে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হয়। আমাদের মতো অন্য কোনো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এমন ভয়ভীতি নিয়ে রাস্তা পারাপার হয় কিনা আমার জানা নেই আদৌ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, আমি একজন মেয়ে এজন্য আমি রাস্তায় ছেলেদের মতো চাইলেও যাতায়াত করতে পারি না। ক্যাম্পাসের দুটা গেইট আমাদের এমন কোনো গেইট নেই যার মাধ্যমে স্বস্তিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবো। এমন একটা পরিবেশে চলাচল করতে হয় ক্যাম্পাসের সামনে কখন যে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় আমাদের এ নিয়ে শঙ্কিত আমার মতো বাকি সবাইও।
এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার বলার পরেও তারা এখনো এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পদক্ষেপ নিবে যেদিন আমি কিংবা আপনি কেউ বড় ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকার হবো তখন তাদের টনক নড়বে। আসলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে সবকিছু পারে কিন্তু বেশিরভাগ লোকই এখানে ভেজা বিড়ালের মতো পড়ে থাকে।
উল্লেখ্য, এ মাসের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে সাভার পরিবহনের এক বাসের ধাক্কায় একজন নিহত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারীসহ দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এরপূর্বে বাহাদুর শাহ পরিবহনের বেপরোয়া গতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় দু'জন সহকারী প্রক্টরকে রিক্সাসহ ধাক্কা দিয়ে আহত করেন।
এদিকে, গতমাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীর পায়ের উপর মোটরসাইকেল তুলে দেয় এবং ওই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে এখনো।
এসব বিষয় এখন নিত্য - নতুন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান করবে তার কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই তাদের নিকট। এখন শুধু অপেক্ষা আর কত দুর্ঘটনা ঘটলেই এই সমস্যার সমাধান করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের সামনে স্প্রিড ব্রেকার বসাবো শীগ্রই এবং ক্যাম্পাসের পাশে থাকা লেগুনা স্টেন্ডটি সরিয়ে ফেলার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল আমরা লালবাগ জোনের ডিসির সাথে কথা বলেছি আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য তারা একটি ফুটওভার ব্রিজ করে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এছাড়াও, আমরা ক্যাম্পাস এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যানার এবং বিলবোর্ডের মাধ্যমে গাড়ির গতিপথ কমানোর চেষ্টা করবো।