সোমবার   ১২ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৮ ১৪৩২   ১৪ জ্বিলকদ ১৪৪৬

আইসিটি সেলের অবহেলায় বৃত্তির ফলাফল নিয়ে ভোগান্তিতে জবি শিক্ষার্থী

মিলন হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক। 

প্রকাশিত : ০৬:৫৩ পিএম, ২১ মে ২০২২ শনিবার

করোনা মহামারিকে সামনে রেখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবির) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ৫% বৃত্তি ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদের গত বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে ১২ মে ২০২১ তারিখ পর্যন্ত 'মেধাবী ও অবৈতনিক' এই দুই ক্যাটাগরিতে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। 

এ বিশেষ বৃত্তির আওতায় 'মেধাবী ও অবৈতনিক' দুই ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের ৯৩৯ জনকে মেধাবী ও ১৭৫ জন শিক্ষার্থীকে অবৈতনিক এককালীন বৃত্তি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বৃত্তির আওতায় ১৭৫ জন শিক্ষার্থীকে অবৈতনিক সুবিধার প্রদান করে দুই সেমিস্টারের ভর্তি ফি বাবদ ১২'শ টাকা কর্তন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অর্থাৎ, গত বছরের ২য় সেমিস্টারের ভর্তি ফি বাবদ ছয়শো টাকা এবং ৩য় সেমিস্টার ভর্তি ফি বাবদ ছয়শো টাকা করে মোট দুই সেমিস্টারের ১২'শ টাকা কর্তন করা হবে। সর্বমোট ১৭৫ জন শিক্ষার্থীকে ১২'শ টাকা করে  দুই লক্ষ ১০ হাজার টাকা কর্তন করবে শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি বাবদ।

অপরদিকে ৯৩৯ জন শিক্ষার্থীকে ৪০০ টাকা করে মাসিক এক বছরের জন্য জনপ্রতি চার হাজার আটশো টাকা প্রদান করে সর্বমোট ৯৩৯ জন শিক্ষার্থীকে ৪৫ লক্ষ সাত হাজার দু'শত টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি শাখার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ জুন তারিখে আইসিটি সেল বরাবর ১৭৫ ও ৯৩৯ জন শিক্ষার্থীর বৃত্তির তালিকা পাঠানো হয় রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে। এরপর ১২ দিন পরে অর্থাৎ, ওই একই বছরের পরবর্তী মাসের ১২ তারিখে রেজিস্ট্রার দপ্তরের বৃত্তি শাখা থেকে প্রেরন করা বৃত্তির তালিকাটি গ্রহণ করে আইসিটি সেল এবং ওই তারিখে আইসিটি সেলের শামীম স্বাক্ষরিত বৃত্তির একটি কপি বৃত্তি শাখায় পাঠিয়ে তালিকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন । 

আইসিটি সেল বৃত্তির শাখার ১৭৫ জন অবৈতনিক ও ৯৩৯ জন শিক্ষার্থীর এককালীন বৃত্তির তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও শুধুমাত্র ৯৩৯ জন শিক্ষার্থীর মেধাবী ক্যাটাগরির তালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে। অপরদিকে ১৭৫ জন শিক্ষার্থীর অবৈতনিক বৃত্তির তালিকা অপ্রকাশিত থেকে যায়। কিন্তু তার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় নি। এদিকে এ বছরের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির তালিকা প্রকাশ করা হবে কিছুদিনপর মধ্যেই  জানান বৃত্তি শাখা। 

১৭৫ জন অবৈতনিক বৃত্তির তালিকা একাত্তর পোস্টের হাতে আসে। এরপর তালিকায় নাম থাকা একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা মেইল যোগাযোগ করলে,  কোনো শিক্ষার্থী এ অবৈতনিক বৃত্তিতে মনোনীত  হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানে না বলেন তারা। 

অবৈতনিক বৃত্তির জন্য মনোনীত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিকট জানতে চাইলে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, একটা বছর পার হলেও ফলাফল পাই নি আমরা। বারবার ওয়েবসাইটে ফলাফল চেক করেছি, নোটিশ বোর্ড নোটিশ দেখেছি, বৃত্তি শাখায় একাধিক বার যোগাযোগ করেছি, নিজ বিভাগে খোঁজ নিয়েছি কিন্তু কোথায় থেকে ফলাফল পাইনি আমরা। 

যথাসময় থেকে মেধাবী কোটায় বৃত্তি প্রাপ্ত তালিকার সকলে স্ব স্ব চেক সমূহ উত্তোলন করে নিয়ে যায়। কিন্তু অবৈতনিক তালিকা সমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি শাখা অথবা আইসিটি সেলের কেউ প্রকাশ না করায় এখনো অবধি কোনো শিক্ষার্থী এবিষয়ে অবগত হতে পারেনি। 

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, বৃত্তি শাখায় গেলে তারা শুধু বলে আইসিটি সেল জানে তালিকার বিষয়ে, আমরা জানি না। অথচ আইসিটি সেলে গেলে তারা বলে, আমরা ওয়েবসাইটে অনেক আগে ফলাফল প্রকাশ করেছি তোমরা ভালে করে ওয়েবসাইট চেক করো। আর না পেলে বৃত্তি শাখায় যোগাযোগ করো। এক বৃত্তির জন্য কেন এতে হয়রানি করা হয়েছে আমরা তার যথাযথ জবাব চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। আর কেনো এতোদিনে তালিকা প্রকাশ হয় নি এটারও সুষ্ঠু জবাব দিতে হবে আইসিটি সেলকে এবং আগামীকালের মধ্যে তালিকা প্রকাশ করে স্ব স্ব বিভাগে নোটিশ পাঠাতে জোর দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। 

অবৈতনিক বৃত্তির তালিকা প্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম একাত্তর পোস্টকে বলেন, বৃত্তি শাখা থেকে অবৈতনিক বৃত্তির জন্য ফলাফল প্রকাশের তালিকা আইসিটি সেলের কাছে প্রেরণ করলেও আইসিটি সেল সে তালিকা প্রকাশ করেনি৷ কেন এতোদিনে করেনি তার কারণ জানতে চাই। যার ফলে বৃত্তিতে মনোনীত হওয়া শিক্ষার্থীদেরও সম্পুর্ন সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে হয়েছে। আইসিটি সেলের এমন অবহেলার কারণে অনেক সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তাই আমি মনে করি, জবি প্রশাসনের উচিৎ আইসিটি সেলের প্রতি তদারকি বৃদ্ধি করা।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মোবাশ্বিরা ইলমা বলেন, ২০২১ এ বৃত্তির আবেদন করেছি কিন্তু এক বছর পার হলেও এখনো ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। ২০২২ সালের এ পর্যায়ে এসে কিনা বৃত্তির ফলাফলের বিষয়ে জানতে পারি যেটা কিনা আনঅফিশিয়ালি। গত বছরের পুরো সময় জুড়ে করোনা মহামারির জন্য শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে সমস্যার সম্মুখীন ছিলো। তখন এই টাকা তাদের কিছুটা  হলেও উপকারে লাগতো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেনো ২০২১ সালের বৃত্তির ফলাফল ২০২২ সালে এসেও তালিকা প্রকাশ করেনি এটা আমার বোধগম্য নয়; এটা একধরনের গাফিলতি বলা চলে।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন বলেন, আমি তো কেবলমাত্র জানলাম আমি ওই অবৈতনিক বৃত্তির জন্য মনোনীত হয়েছি। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত অবহেলায় নানা বিষয়প প্রাপ্য সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি। এ বৃত্তিটা করেছি গতবছরের করোনা মহামারির মাঝে সেমিস্টার ফি বাবদ টাকা মওকুফের জন্য অথচ আমরা বৃত্তি পেয়েও সম্পন্ন সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে হয়েছে। প্রশাসনের এমন উদাসীনতার জন্য অনেক শিক্ষার্থীর আর্থিক অভাব-অনটনে পড়াশোনটা নষ্ট হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় 

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী বিভো দেবনাথ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃত্তি শাখায় ও আইসিটি দপ্তরের সাথে আমরা একাধিক বার যোগাযোগ করলেও আমাদের নাকচ করে দিয়ে বলে এসব অবৈতনিক বৃত্তি তালিকা অনেক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এখনো পর্যন্ত কোনো বিভাগ বা শিক্ষার্থী এই তালিকা পাইনি এমনকি ওয়েবসাইটেও দেয়া হয়নি। 

এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা বৃত্তি পেয়েছি অথচ এখনো সেটা আমরা জানি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন প্রশাসংনীয় একটা কাজকে বৃত্তি শাখা ও আইসিটি সেলের কর্মকর্তারা এভাবে বির্তকিত করবে সেটা খুবই নেক্কারজনক  ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ মাসুদ আলম একাত্তর পোস্টকে বলেন, মেধা ও অবৈতনিক তালিকার ফাইল গত বছরের ১২ জুলাই আইসিটি সেলে পাঠানো হয়েছে। এতোদিনে আইসিটি সেল কেন ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের অবৈতনিক বৃত্তির তালিকা প্রকাশ করেনি এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এ-সময় তিনি ফাইলের নথিপত্র প্রদানের যাবতীয়  কাগজপত্র ঢাকা মেইলকে দেখান। 

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ অহিদুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কোনোভাবে সংযোগ স্থাপন করা যায় নি। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড.  উজ্জ্বল কুমার আচার্য্য বলেন, আমরা অনেক আগে ওয়েবসাইটে তালিকা দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এতোদিনে এটা কেন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে না বলতে পারছি না। এই বিষয়টা আমাদের সেলের হাফিজ দেখাশোনা করে তাকে আমি বিষয়টা অবিহিত করবো শীগ্রই। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।