ভর্তি পরীক্ষার চেয়ে, গুরুত্ব পাচ্ছে অটোপাশের ফলাফল জবিতে
তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত : ০৩:৪৬ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার
সানজিদা আক্তার এবারে প্রথম সম্পন্ন নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। প্রথমবারের মতো সানজিদার মতো সারাদেশের হাজারো শিক্ষার্থী ২০ টি সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
সানজিদা আক্তার মানবিক বিভাগের 'বি' ইউনিটের ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় ৬২.৭৫ নম্বর পেয়েছে । অথচ এই ফলাফলে নিয়েপ সেই নিশ্চিত হতে পারছে না গুচ্ছ ভুক্ত ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে কি না। যার প্রধান কারণ গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে এবার নতুন করে এসএসসি জিপিএ'তে ৪০% এবং এইচএসসির জিপিএ'তে ৬০% অতিরিক্ত নম্বর বরাদ্দ করে দিয়েছেন। এই অতিরিক্ত ১০০ নম্বর নিয়ে সানজিদার মতো অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সানজিদা এসএসসি'তে জিপিএ ৪.৬১ ও এইচএসসি'তে জিপিএ ৫ পেয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তির নতুন নিয়ম অনুযায়ী সানজিদার মোট জিপিএ ভিত্তিক নম্বর ৯৬.৮৮ এবং ভর্তি পরীক্ষার ৬২.৭৫ নম্বর সহ যোগ করে সবমিলিয়ে ১৫৯.৬৩ নম্বর হয়েছে। নতুন করে ভাবার বিষয় হচ্ছে সানজিদা গুচ্ছভুক্ত ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেও কোথায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে এবং ভালো সাবজেক্ট নিয়ে বেড়েছে দুশ্চিন্তা।
অপরদিকে সজিব হোসাইনের এসএসসির জিপিএ ৪.৩৩ এবং এইচএসসির জিপিএ হচ্ছে ৪.৫০। সেই মানবিক বিভাগের 'বি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৬০.৫০ নম্বর পেয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তার জিপিএ ও প্রাপ্ত নম্বরের ফলাফল সহ সবমিলিয়ে ১৪৯.১৪ নম্বর পেয়েছে। সজিবের এমন ফলফলের পরও সেই অনিশ্চিয়তা নিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিয়ে। কারণ অটোপ্রমোশনের জন্য তার ভালো প্রস্তুতি থাকা স্বত্বেও পরীক্ষা হয়নি। অথচ কেউ কেউ অটোপাশের জন্য এইচএসসি'তে জিপিএ ৫ পেয়ে ভর্তি যুদ্ধে তার চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে।
উল্লেখ্য, গতবছরের ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির জন্য সরকার সকল শিক্ষার্থীকে অটোপ্রমোশনের সুযোগ করে দিয়েছে। যার মূল্যয়ান হয়েছে শিক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত জিপিএ ফলাফল অনুযায়ী। এজন্য অটোমেশন ফলাফলে এখন কপাল পুড়েছে সজিবের মতো অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে।
সমন্বিত ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ে ইতিমধ্যে সারাদেশে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ভর্তি পরীক্ষার শুরুতে প্রাথমিক আবেদনের বাছাই নিয়ে সমালোচনা এবং পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত আবেদনের জন্য ১২০০ টাকা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও, মানবিক বিভাগের 'বি' ইউনিটের ভুল ফলাফল নিয়ে উঠেছে কারিগরি ত্রুটির অবহেলা নিয়েও প্রশ্ন। নতুন করে ফলাফল পুনঃ নিরীক্ষণের জন্য বেঁধে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের ২০০০ টাকার শর্ত। সেই সাথে একজন শিক্ষার্থীকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের জন্য দিতে হবে ৬০০ টাকা অর্থাৎ, কোনো শিক্ষার্থী যদি ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে তাহলে তাকে অতিরিক্ত ১২০০০ টাকা প্রদান করতে হবে।
গুচ্ছভুক্ত পরীক্ষা বাতিলের দাবি উঠেছে ইতিমধ্যে সারাদেশে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে গুচ্ছের বিপক্ষে। এছাড়াও, গুচ্ছ নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের নতুন কৌশল তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষার্থী ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরও অটোপাশের জিপিএ এবং ভুল ফলাফলে তার ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হারালে যে কেউ মানসিক ভাবে ভেঙে পড়বে বলেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতবছর এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ মিলিয়ে মোট ২৮ নম্বর থাকলেও এবার তা করা হয়েছে এসএসসিতে ৪০% এবং এইচএসসিতে ৬০% নম্বর যোগ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির নতুন সিদ্ধান্তে বর্তমান শিক্ষার্থীরা বলেন, এতে করে ভালো শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ হারাবে এবং সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান খারাপ হবে।
এই বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, জিপিএ নম্বর নিয়ে এটি কোন আমার একক সিদ্ধান্ত নয়। সকল ডিন ও ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সাথে মিটিং করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আগামীতে আরও ভালো করে ভেবে সিদ্ধান্ত দিবো।
