মুহিবুল্লাহর কিলিং মিশন তিন মিনিটে শেষ
তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত : ১২:৪৩ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাতে উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি চালিয়ে হত্যা করে একদল অস্ত্রধারী।
ঘটনাস্থলে থাকা চল্লিশ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা দিনমজুর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই রাতে ১০-১২ জন শরণার্থীর সঙ্গে মুহিবুল্লাহ তার অফিসে ত্রাণের সংকট, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে কথা বলছিলেন। এমন সময় তিনি ওইখানে উপস্থিত হন বলে জানান ওই প্রত্যক্ষদর্শী।
রোহিঙ্গা দিনমজুর সংবাদমাধ্যমকে আরও জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার তিন-চার মিনিট পর পরই মাথায় টুপি ও মুখে মাস্ক পরে সাত থেকে আটজন অস্ত্রধারী ওই অফিসে ঢুকে পড়ে। তারা জানতে চান রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠাতে ক্যাম্পের ভেতর প্রতিটি ব্লকে সাত সদস্যের গ্রুপ কে তৈরি করেছে? এ কথার বলার পর পরই মুহিবুল্লাহর মাথার ওপর অস্ত্র তাক করে নড়াচড়া না করতে বলে সন্ত্রাসীরা। এ সময় আমাকে মাথা নিচের দিকে করে মাটিতে শুয়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, একজন মুহিবুল্লাহর বুকে তিনটি গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মুহিবুল্লাহ মাটিতে পড়ে যান। এ সময় অফিসে থাকা অন্যরা পালিয়ে যান। গুলি খেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মুহিবুল্লাহ দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে এক সন্ত্রাসী ফিরে এসে তার বুকে ও চোখে আরও দুটি গুলি করে। এরপর আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীদের সবার পরনে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট ও টি-শার্ট এবং মুখে মাস্ক ছিল। সবার হাতেই ছিল পিস্তল।
মুহিবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন এমন একজন স্বেচ্ছাসেবী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা করার জন্য ব্লকভিত্তিক সাত সদস্যের কমিটিগুলোকে সংস্কারের কাজে সম্প্রতি হাত দিয়েছিলেন মুহিবুল্লাহ। গত পাঁচ মাস ধরে তিনি সক্রিয়ভাবে এই কাজটি করছিলেন।
এদিকে হত্যার পাঁচ দিন পার হলেও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল এমন কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
মুহিবুল্লাহর ছোটভাই হাবিব উল্লাহর বলেন, আমরা একটি কথা পরিষ্কার বলতে চাই, আমরা এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত আসামিদের কঠিন শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে আবুল বশর নামে এক রোহিঙ্গা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মরকজের পাহাড়ের বসবাসকারী এক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত বেশ কিছু মানুষ মাস্ক পরে সেখানে জড়ো হয়েছিল। আবার অনেকের মাথায় টুপিও ছিল। তাদের দেখে তার সন্দেহ হয়। কিন্তু ভয়ে কাউকে কিছু বলার সাহস পায়নি। কারণ, তারা এখানকার রাজা বলে কথা।
যেভাবে হয় তিন মিনিটে কিলিং মিশন : বুধবার রাতে মুহিবুল্লাহ অফিসে থাকা দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আলোচনা শুরুর তিন-চার মিনিট পরই মুখোশ পরা অবস্থায় সাত-আটজন অস্ত্রধারী অফিসে প্রবেশ করে। তারা জানতে চান, কেন ব্লকে ব্লকে টিম তৈরি করা হচ্ছে? মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে উদ্বুদ্ধ করতে ওই টিম তৈরি করা হয়, এটা বলামাত্রই মুহিবুল্লাহকে গুলি করা হয়। তাদের ধারণা প্রথমে আবদুর রহিম ওরফে রকিম তিনটি গুলি ছোড়ে তার বুকে। তিনি রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরে মোরশেদ এসে বুকে ও চোখে আরো দুটি গুলি করে। সবমিলিয়ে মোট তিন মিনিটের ভেতর পাঁচটি গুলি করে তারা সেখান থেকে এলোমেলোভাবে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুহিবুল্লাহকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে একদল অস্ত্রধারী।