শরীয়তপুরে সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা, ইউএনও নিশ্চুপ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:০৮ এএম, ২১ জুলাই ২০২১ বুধবার

শরীয়তপুর গোসাইরহাট উপজেলার আলাওলপুর ইউনিয়নের গরিবেরচর বাজারে সরকারি সম্পদ দখলের অভিযোগ পেয়েও দুই বছরেও সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন। ইউএনও আলমগীর হোসেন ব্যবস্থা নিচ্ছি-নিচ্ছি করে বললেও বর্তমানে সরকারি জায়গায় ৬ তলা ফাউন্ডেশন করে দুইতলা মার্কেট নির্মাণ হয়ে গেছে। এখনো নির্মাণকাজ চললেও প্রশাসন সরকারি জায়গা জেনেও উদ্ধার না করে বরং চুপ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (১৮ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, খতিয়ান ও নকশা অনুযায়ী, সরকারি জায়গায় কোনো সরকারি সাইনবোর্ড ও লাল নিশানা টানানো নেই। তার পরিবর্তে সেখানে মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা দিদার কাজি (৫৭), আরিফ ঢালী (৪৩), কালা মিয়া দর্জিসহ (৬৫) অনেকেই বলেন, দখলদার ইটালি প্রবাসী হওয়ায় টাকার কাছে সবাই ম্যানেজ। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন দেওয়ার পরও গরিবের চর বাজারে সরকারি জায়গাসহ খাল দখল হয়ে যাচ্ছে। খালে ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণসহ বাজারের সরকারি জায়গায় ভবন নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। তারা প্রতিমাসে সরকারি জায়গায় নির্মিত ৩০/৪০ হাজার টাকা দোকান ভাড়া নেয়।
অবৈধ ভাবে এই ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এলাকার বিত্তশালী বাসিন্দা ইটালি প্রবাসী রেজওয়ান আহমেদ রাসেল ঢালীর (৪৫) বিরুদ্ধে। যদিও তার দাবি, তারা নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তির উপর মার্কেট নির্মাণ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন ঢালী (৬৫) বলেন, গোসাইরহাট উপজেলার আলাওলপুর ইউনিয়নের গরিবেরচর উত্তর কোদালপুর মৌজায় ৩টি সাব কবলা দলিল ও ১টি না-দাবী নামা দলিল মূলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ০.৩২ শতক জমি রেজওয়ান আহমেদ রাসেল ঢালী অবৈধভাবে দখলের পায়তারা করতেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি গোসাইরহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর হোসেনের কাছে ১০ অক্টোবর ২০১৯ সালে একটি লিখিত অভিযোগ করি। তাতে কাজ না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আমি ১২ নভেম্বর ২০২০ সালে জেলা প্রশাসক মো.পারভেজ হাসানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করি। জেলা প্রশাসক আমাকে সরকারি জায়গা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান গোসাইরহাট ইউএনও আলমগীর হোসেনকে সরকারি জমি দখলের বিষয়টি দেখতে বলেন। ইউএনও আলমগীর হোসেন দেখতে-দেখতে বর্তমানে ৬ তলা ফাউন্ডেশনের ২ তলা মার্কেট নির্মাণ হয়ে গেছে।
মহিউদ্দিন ঢালী বলেছেন, আমার বাবা এই জায়গা সরকারকে দান করে গেছে। ১৯৮৪ সাল থেকে এই দখলদাররা সরকারি সম্পত্তি দখল করে সেখান থেকে লক্ষ-লক্ষ টাকার মেহগনি, চাম্বুল গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। সরকারি জায়গা সরকার জনগণের কল্যাণে এখানে কিছু করুক এটাই আমার দাবী।
সোমবার (১৯ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিয়ে গোসাইরহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর হোসেন বলেন, গরিবেরচর বাজারের বাদী মহিউদ্দিন ঢালী ও বিবাদী রেজাউল করিম ঢালীদের পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল। তারা সেটা দান করে দিয়েছেন। ঐখানে আগে ইউনিয়ন ভূমি অফিসও ছিল। আমরা সার্ভেয়ার দিয়ে সরকারি জায়গা মেপে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছি। সরকারি জায়গায় যদি তারা মার্কেট নির্মাণ করে তাহলে আমরা অবৈধ উচ্ছেদ করব।
একই দিন বেলা ১২টায় জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, সমাজের সহনশীলতা বজায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি সম্পত্তি প্রথমে দেখার দায়িত্ব থাকে এসিল্যান্ডের, তারপর ইউএনওর।
তার মতে, সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে তারা ব্যর্থ হলে ইউএনও, এসিল্যান্ডের চাকুরি থাকবে না। বিষয়টি যেহেতু অনেক দিন হয়ে গেছে। গোসাইরহাটের ইউএনও যেহেতু পারে নাই। আমাকে জানিয়েছেন। আমি এডিসি রেভিনিউকে দায়িত্ব দিলাম। সে তদন্ত করে আমাকে যে তথ্য দিবে আমি সেই অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ঠিক করে দেব। তিনি বলেছেন, আগামী এক মাসের ভেতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আসতে হবে না।