ওরা ঘুমায় না!
মাহির আমির মিলন, জবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৬:৪১ পিএম, ৬ জুলাই ২০২১ মঙ্গলবার

সন্ধ্যা হয়, ভোরবেলা সূর্য উঠে, রাত্রি বেলা শেষ হয় তবু তাঁদের কাজ শেষ হয়না। পুরো শহর ঘুমায় কিন্তু তাঁরা অবিচল পরিস্কার - পরিচ্ছন্ন নগরী গঠনে। সবাই যখন নিস্তব্ধ শহরে ঘুমিয়ে পড়ে তাঁরা তখনও বিরামহীন ভাবে কাজ করে যায়। পেশাটা ছোট তবে দায়িত্বের ভারটা অনেক বড় তাঁদের কাঁধে।
দিন যায়, সপ্তাহ আসে, মাস শেষ হয় সাথে বছর ঘনিয়ে আসে, তাঁদের দায়িত্বশীল কাজটা শেষ হয়না। সপ্তাহে ৭ দিন থেকে শুরু করে বছরে ৩৬৫ দিন কাজ করতে হয় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। রাত ৮ থেকে শুরু হয়ে ভোর চারটা পর্যন্ত চলে এক পক্ষের। অপর দিকে ভোর পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা অবধি চলে অন্য পক্ষের। আবার আরেক পক্ষের দুপুর ১ থেকে শুরু হয়ে রাত ৮ টা পর্যন্ত চলে একটানা পরিচ্ছন্ন অভিযান।
চাকুরিটা যদিও সমাজের চোখে নিচু শ্রেনির লোকের অথচ তাঁরা একদিন কাজটা বন্ধ করলে পুরো শহরটা যেন স্তব্ধ অন্ধকার শহরে রূপান্তরিত হবে। পরিবার আমাদের আছে যেমনি তাঁদেরও আছে পার্থক্য টা কেবল কাজের শ্রেনিবিভাগের ফলে। এই দূষিত শহরকে পরিষ্কার রাখার জন্য তাঁরা নিরলস ভাবে কাজ চালিয়ে যায় কঠিন মুহুর্তগুলোতে।
লকডাউন, করোনাভাইরাস কিংবা ঝড়, বৃষ্টি যা হোক কেন তাঁদের দায়িত্বশীল কাজটা চলমান থাকে। রোদ - বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পরিচ্ছন্ন নগরায়নে উদীপ্ত সকলে। আমরা করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কতটা সচেতন হয়তো তাঁরা একটা মাস্ক নামে মাত্র পড়ে সকল কিছুকে উপেক্ষা করে হাসি মুখে কাজটা করে যাচ্ছেন।
পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়, শাঁখারি বাজার মোড়, ভিক্টোরিয়া পার্ক, সদরঘাট, বাংলাবাজার মোড়, ওয়ারী, নারিন্দা মোড়, লক্ষ্মীবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায় রাত তখন তিনটা বাজে অথচ এখনো তাঁরা ময়লা উঠানোর কাজে ব্যস্ত গাড়িতে। সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশ মোতাবেক রাতের মধ্যে অর্থাৎ ভোর হতে হতে পুরো শহরের সব ময়লা উঠাতে হবে গাড়িতে। পুরো শহরকে ভোরবেলার মধ্যে করতে হবে পরিস্কার।
পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডে গাড়িতে ময়লা উঠানোর সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তির সাথে কথা বলতে গেলে বলেন , স্যার আমাদের ছবি তুলে কি ভাইরাল করে দিবেন। আমাদের পরিবার রয়েছে দয়া করে ছবিটা কোথায় দিবেন না। আমরা তো আপনাদের ভালো রাখার জন্য এই কাজ করি, ছেলে - মেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে তারপরও হিমসিম খেতে হয়। সংসার সামলানো আজকাল আমাদের জন্য অনেক কষ্টের তাই এই পেশাকে বেছে নিয়েছি।
অথচ আমাদের সমাজে নিচু শ্রেণির লোক বলে কতটা অবহেলা করা হয় রাস্তাঘাটে। দেখলে অনেকে পাশ কাটিয়ে যায় এই সমস্ত লোকজনকে। যারা কিনা দিন-রাত ব্যস্ত থাকে আমাদের জন্য সুন্দর নগরী গঠনে।
ইসলামে সকল পেশাকে সম্মান করতে বলা হয়েছে। আমাদের উচিত সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সম্মান করা। ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে সমাজকে আলোকিত করা। স্ব স্ব শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, জাতি, বর্ণ, গোত্রের প্রতি যথাযথ সম্মান পূর্বক কথা বলা। হয়তো সকল ভেদাভেদ ভুলে সাম্যের ভাতৃত্বে আবদ্ধ হবে আমাদের সমাজ, দেশ তথাকথিত পুরো জাতি। হয়তো আরও সাবলীলভাবে কাজ করতে আগ্রহী হবে সকল শ্রেনির পেশাজীবীরা।