১০শয্যার সরঞ্জাম জনবল দিয়েই চলেছে মানিকছড়ির ৫০ শয্যার হাসপাতাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৬:০৯ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রোববার
৫০ শয্যা মানিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে সেই ১০শয্যার জনবল ও আসবাবপত্র দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। ১০ জনের খাবার খাচ্ছে ২৫/৩০জন!
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠিত। পার্বত্য মংসার্কেল এর আবাসস্থল মানিকছড়ি হওয়ার কারণে রাজাদের রাজপ্রসাদ ও প্রজাদের নির্বিচিন্ন চিকিৎসায় প্রথমে কমিউনিটি ক্লিনিকের আদলে এসি চিকিৎসা সেবা শুরু করে। পরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১০শয্যা বিশিষ্ঠ এ হাসপাতালে পুরোদমে উপজেলাবাসীর চিকিৎসার পাশাপাশি সীমাবর্তী ফটিকছড়ি, রামগড়, গুইমারা ও ল²ছড়ির বিভিন্ন গ্রামের লোকজন আপদে-বিপদে দ্রুত এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভীড় জমায়।
দীর্ঘ কাল এ হাসপাতালটি ১০শয্যার জনবল ও আসবাবপত্র দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে অতিরিক্ত রোগীর কারণে। ফলে দাবী উঠে হাসপাতালটিতে উন্নত সেবা নিশ্চিতকল্পে ৫০ শয্যায় উন্নতি করার। জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে আওয়ামীলীগ সরকার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হাসপাতালটি ৫০শয্যায় উন্নতি করণে দরপত্র আহব্বান করেন এবং যথাসময়ে ঠিকাদার কাজ শেষ করলে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পুরাতন ১০ শয্যার ভবনে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাওয়ায় নন-অফিসিয়াল ভাবে ৫০ শয্যার ভবনে কার্যক্রম শুরু করেন কর্তৃপক্ষ। আর এ নতুন ভবনে চিকিৎসা সেবা শুরুর খবরে উপজেলা ও আশে-পাশের রোগীর ভীড় ভেড়ে গেছে অন্তত চারগুন! কিন্তু জনবল ও আসবাবপত্র ১০ শয্যারই রয়ে গেছে! ফলে কর্তৃপক্ষ এখন পুরোপুরি বেসামাল। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি’অবস্থা।
এছাড়া ২০০৪ সালে এ হাসপাতালে উন্নতমানের একটি ৩০০এমএ এক্স-রে মেশিন সরবরাহ করা হলেও সেটি লো-ভোল্টেজ এর কারণে অংকুরের ফিনিস! দীর্ঘদিন এক্স-রে মেশিনটি চালু না হওয়ায় সেটি নষ্ঠ হয়ে গেছে! অপরদিকে একই সময়ে প্রাপ্ত এ্যাম্বুলেন্সটির জনবল(চালক ও তেল) থাকা স্বত্বে ও যন্ত্রাংশের অভাবে গত ৫ বছর ধরে সেটি বিকল থাকায় সম্প্রতিকালে বিআরটিসি’র পরীক্ষক দল এ্যাম্বুলেন্সটিকে ব্যবহার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে। ফলে সেটিও অকালে হারাতে হলো উপজেলাবাসীর।
43বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ৭জন। পদ রয়েছে ১১জনের। নার্স ১১জনের মধ্যে কর্মরত ৮জন। নতুন ভবনে আধুনিক সুবিধায় দুইটি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও কোন মালামাল না থাকায় সেটি যেমন ব্যবহার করা যাচ্ছে না,তেমনি এ্যাম্বুলেন্স ও এক্স-রে’র জনবলও বসে বসে বেতন খাচ্ছে!
অথচ উপজেলার প্রায় আশি হাজার জনবলসহ লক্ষাধিক জনগণের কাঙ্খিত সেবা দিতে গিয়ে নাভিশ্বস কর্তৃপক্ষের। এছাড়া ১০ শয্যার বেডে এখন প্রতিনিয়ত রোগী ভর্তি থাকছে গড়ে ২৫/৩০জন। এইসব রোগীর খাবার ও ওষুধ বিতরণে কর্তৃপক্ষ চরম বেগ পেতে হয়। কাউকে বুঝানো যায় না যে, ১০ বেডের ওষুধ ও খাবার ভর্তিকৃতদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া ছাড়া কর্তৃপক্ষের কিছুই করার থাকেনা। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় নতুন আগত রোগি ও আত্মীয়-স্বজনরা চিকিৎসকদের ভূল বুঝেন। সব মিলিয়ে মানিকছড়ির একমাত্র চিকিৎসা সেবার এ প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ শয্যার অনুমোদন দিয়ে তাতে আসবাবপত্র,জনবল,ওষুধপত্র,খাদ্য সরবরাহ জরুরী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো.নোমান মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ১০ শয্যার জনবল,আসবাবপত্র,ওষুধ ও ভর্তি রোগির খাদ্য চাহিদা দিয়ে ৫০ শয্যার কাজ চালানো সম্ভব না। কিছুতেই রোগীদেরকে সংকটের কথা বুঝানো যাচ্ছে না। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে ৫০ শয্যার অনুমোদনসহ আসবাবপত্র,জনবল,ওষুধপত্র,সরবরাহে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য ও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান এম.এ. জব্বার এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ হাসপাতালে বর্তমান সমস্যা স্বীকার বলেন, ৫০ শয্যার অনুমোদনসহ জনবল,আসবাবপত্রসহ যাবতীয় সংকট নিরসনে জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে দ্রæত সমস্যা সমাধানসহ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চেষ্ঠা করবো।
