মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কট : ভোগা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৪:৫৭ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সোমবার
সাইন বোর্ডে লেখা ৫০ শয্যা গোপালগঞ্জ মুকসুদপুর হাসপাতাল। জনবল ৫০ শয্যার তো নেই-ই উপরন্তু ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উচ্চ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরেরই জনবল সংকট। জনবল সংকটের কারণে খুঁড়ি–য়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালের ডাক্তার থেকে সুইপার প্রতিটি স্তরই গুরুত্বপুর্ণ।
কিন্তু ডাক্তার থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাজনৈতিক তদবিরে বদলি করে আনা হলেও কয়েকদিন থাকার পর কেউ কেউ প্রশিক্ষণ, উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে গিয়ে আর আসেন না।
আবার ১৪ জন নার্স এর বিপরীতে ১৪ জনই বেতন ভাতা গ্রহণ করার পরেও আমরা সেবা পাচ্ছি ১২ জনের। ২ জন নার্সের একজন ১৪ বছর অপরজন ১২ বছর ডেপুটেশনে থাকায় তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মুকসুদপুর হাসপাতালে আসা সকল প্রকার রোগী। জনবল না থাকায় বন্ধ রয়েছে প্যাথলজি বিভাগ, স্বল্পমুল্যে পায়খানা, প্রস্রাব, রক্ত পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেবাগ্রহীতা।
এক বিভাগের কর্মী দিয়ে অন্য বিভাগ চালাতে গিয়ে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে উপজেলা হাসপাতাল প্রশাসন। একেতো মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ, তারপরে জনবল সংকট। যে কয়জন স্বাস্থ্য সেবার দায় দায়িত্ব নিয়ে আছেন, তাদের প্রায় সকলেরই অতিরিক্ত কাজের চাপে সবসময় মেজাজ মর্জি থাকে বিগড়ে। ‘প্রতিনিয়ত উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে জনবল সংকটের কথা জানালেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই মিলছে না ভাগ্যে।
তবে আশার তথা হচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে আরও ৫০ শয্যার নতুন ভবন। মাত্র ২ বছবের মধ্যে মুকসুদপুর হাসপাতাল হচ্ছে ১শ শয্যার। জনবলও বাড়ছে আনুপাতিক হারে। কিন্তু ৩১ শয্যার হাসপাতালে ৫০ শয্যার সাইনবোর্ডে ৫০ শয্যার রোগীর পথ্য এবং ওষুধ সরবরাহ করা হলেও স্বল্প সংখ্যক জনবলে এটা বাস্তবায়ন খুবই কষ্টদায়কÑ জানালেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মাহমুদুর রহমান। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে ২০১০ সালের ২৭ জুন মাসে ৫০শয্যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি। কিন্তু উদ্বোধনের পর এতদিনও কিছু আসবাপত্র প্রাপ্তি এবং রোগিদের খাদ্যের বিল ভাউচারে ঠিকাদারের প্রাপ্তি ছাড়া আর কোন স্তুরেই একজন জনবল বাড়েনি। কিন্তু সেবা বেড়েছে বেশী। ৫০ শয্যার বেশী চাহিদার বেশী রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.মাহমুদুর রহমান জানান উপজেলা ৫০ শয্যা হলেও জনবল রয়েছে ৩১ শয্যার। সেখানের শীর্ষ পর্যায় থেকে সুইপার, নাইটগার্ড পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫টি ধাপে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারি রয়েছে। একটি দুটি ছাড়া প্রতিটি ধাপেই জনবল সংকট রয়েছে। তিনি জানান ৩১ শয্যা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট থাকার কথা ৪ জন। রয়েছে ২ জন।
উন্নত চিকিৎসেবা পেতে কনসালটেন্ট যে পরিমান থাকার কথা তারা তা থাকেন না। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার চেয়ে বেশী সরকারি বেতনস্কেল ও সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কর্মকতার আদেশ নিষেধ ঠিকমত মানেন না। তারা কোন কোন সপ্তাহে ২ দিন আসেন কোন কোন সপ্তাহে আসেনই না। এজন্য অনেক রোগী তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকার কথা ৪ জন আছে ২ জন।
ইমারজেন্সী মেডিকেল অফিসার নামে কোন পদ না থাকলেও সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য রোস্টার করে একজন এমবিবিএস এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং উপসহকারি মেডিকেল অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সাধারন রোগী দেখার পাশাপাশি ২৪ ঘন্টা বিশেষ সেবা দিয়ে থাকেন। মেডিকেল অফিসার ২ জনের মধ্যে দুজনই আছেন। স্যাকমো বা চিকিৎসা সহকারি বা উপসহকারি মেডিকেল অফিসার রয়েছেন ২ জন।
১৬ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় মোট ১৭ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা, রয়েছে ৪ জন। নার্স থাকার কথা ১৪ জন, ১৪ জনই রয়েছে। কিন্তু দুজনের বেতন ভাতা এখান থেকে হলেও একজন দায়িত্ব পালন করেন মাদারীপুরের শিবচর উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, অপরজন গোপালগঞ্জ দায়িত্ব পালন করেন।
রোগীদের প্রায় বিনা খরচে রক্ত, পায়খানা, পস্রাব পরীক্ষা করার ল্যাব এবং উপকরণ রয়েছে। ২ জনের জনবল থাকার পরও যারা এতদিন ছিলেন তাদের অবসরজনিত কারনে ২পদই শূন্য। এখন প্যাথলজিক্যাল ল্যাব বন্ধ। ইসিজি ও আলট্রাসোগ্রাম কেন্দ্র থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। চালানো হচ্ছে নার্স ও ডাক্তার দিয়ে।
অফিস সহকারি ২ জন থাকার কথা থাকলেও একজনও নেই। বিশাল জনবল এর বেতন ভাতা গ্রহণ প্রদান এবং রোগীদের চিকিৎসাসেবার সেবামুল্য গ্রহণের জন্য ১ জন ক্যাশিয়ারের পদ শূন্য থাকলেও ফেব্রয়ারি মাসে একজন ক্যাশিয়ার যোগদান করেছে। ওয়ার্ডবয় ৪ জনের ৪ জনই শুন্য। এলএমএসএস ৬জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৪ জন, বাবুর্চি ২জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১ জন। সুইপার ৬ জন থাকলেও আছে ৩ জন। নাইটগার্ড ২ জন থাকলেও ২ জনই রয়েছেন ডেপুটেশনে।
তৃণমূলে প্রতি ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে রয়েছে জনবল সংকট। স্বাস্থ্য সহকারি থাকার কথা ৭০ জন। রয়েছে ৫৩ জন। তাদের দেখভাল করার জন্য ১৪ জন সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক থাকার কথা থাকলেও আছে ৩ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মাহমুদুর রহমান জানান অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও আশার কথা হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নির্মিত হচ্ছে ১শ শয্যার একটি নতুন ভবন। এটি হবে আধুনিক এবং ৬ তলা। প্রাথমিক পর্যায়ে এর নির্মাণ ব্যায় ৩০ কোটি টাকা। এছাড়া ৫০ শয্যার জন্য নির্মিত বর্তমান ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণে হচ্ছে অনেক কিছু। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার জন্য বাড়ছে আরও জনবল, তদারকিতে যানবাহন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান ৩১ শয্যার জনবল পুর্ণতা পাওয়া যাবে হয়তো শ্রীগ্রই। এই সাথে ৫০ শয্যার জনবলও অনেক বেশী। স্বাস্থ্য সেবার পরিধিও বাড়বে অনেক। বিভিন্ন স্তরের ডাক্তার বাড়বে ১৬ জন। নাসিং সুপারভাইজারসহ নার্স বাড়বে আরও ১১ জন, কম্পিটার অপারেটর বাড়বে ১ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও জানান প্রস্তাবিত ৫০ শয্যা হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত জনবলের আরও ২০ জন আউট সোসিং এর মাধ্যমে নিয়োগ হবে। এবং তারা অতিদ্রæত মুকসুদপুরবাসীকে স্বাস্থ্য সেবা দিবে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে ল্যাব এটেনন্ডেন্ট, ওটি বয় বা ওটি এটেনন্ডেন্ট, ইমারজেন্সিী এটেনন্ডেন্ট, স্ট্রেচার বয়, ওয়ার্ড বয়, আয়া, বাবুর্চি, সহকারি বাবুর্চি, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছনাতা কর্মী। তিনি আও জানান স্বাস্থ্য সেবার জন্য এই জনবল থাকলে এই হাসপাতালের প্রতি এলাকার সেবাগ্রহীতাদের কোন অনুযোগ বা অভিযোগ থাকবে না। সেদিন আর বেশী দূরে নয়। সদাসয় সরকার এবং সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের আগ্রহ থাকলে এবং একটু রাজনৈতিক চেষ্টা করলে সুদিন আসতে বেশী সময় লাগবে না।
